পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, সরকারি বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি দূর করার সক্ষমতা আমাদের নেই। এ ধরনের প্রকল্পে দুর্নীতি হলে তা সরকারি কর্মকর্তাদেরই জানতে বলেছেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি আরো বলেছেন, কোন কোন প্রকল্পে দুর্নীতি হতে পারে তা আমাদের জানানোর দায়িত্ব আপনাদেরই। আপনাদের উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা, সোচ্চার হওয়া। তাহলে দুর্নীতির প্রকোপ কমবে। অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, সব অর্জনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দুর্নীতির কারণে। দুদকের উপর মানুষের বিশ্বাস আছে কি নেই, আমি সে তর্কে যাব না। তবে এটা সত্যি মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না, দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে। আমরা সেরকম কাজ করতে পারিনি বলে এই বিশ্বাসহীনতা। এই দায় শুধু আমাদের নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় বেশি। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা ঠিক থাকলে কারো পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। সরকারি কর্মকর্তারা ঠিক থাকলে বড়জোর বদলি কিংবা একটু মানহানি হতে পারে, এ ভয় থেকেই আমরা সমঝোতা করি, আর এই সমঝোতাটাও দুর্নীতি। শুধু ঘুষ খাওয়াটাই যে দুর্নীতি, এটা ঠিক নয়।
দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার বিবেচনা থেকেই দেশের বিশিষ্টজন ও প্রাজ্ঞ মহল দেশে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিল। যেভাবেই হোক বিএনপি সরকারের শেষ আমলে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠাও করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই কমিশনটির নাম যাই হোক কাজের কোন পরিবর্তন তো হয়ইনি বরং বর্তমান এটি আরো ভোগান্তির কারণে পরিণত হয়েছে। সাবেক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই সংস্থাটিকে দেশে বিরাজনীতিকরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। এরপর রাজনৈতিক দল ক্ষমতার এলে তারাও সংস্থাটিকে স্বাধীন বিবেচনায় কাজ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের এক সাবেক চেয়ারম্যান দুদককে নখদন্তহীন বাঘের সাথে তুলনা করেছিলেন। বর্তমান চেয়ারম্যনও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, আইনের কোন ঘাটতি বা দুর্বলতা নেই। শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নয় বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকই এই আইনের আওতাভুক্ত। তিনি যথার্থই বলেছেন, দুদকের ওপর মানুষের কোন আস্থা নেই। তিনি না বললেও এটা সকলেরই জানা, সরকারি বিভিন্ন মহলকে ডেকে ডেকে সাফাই সার্টিফিকেট দেয়াই যেন দুদকের একমাত্র কাজ ছিল। দুদকের বিরুদ্ধে দলীয় বিবেচনাতে কাজ করার গুরুতর অভিযোগ ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব বড় বড় আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। এগুলোর প্রতিকারে দুর্নীতি দমন কমিশন দায় এড়াতে পারে না। কমিশন চেয়ারম্যান দুর্নীতির এক ধরনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি তার আলোচনায় শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে শিক্ষকদের দুর্নীতিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসকদের দুর্নীতির কথাও তুলে ধরেছেন। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিবেকের বাইরে যা কিছু করা হয়, তাই দুর্নীতি। আজকের বাস্তবতায় বিবেকের রায় বলতে কি বোঝা যায় সেকথা আদৌ কেউ বিবেচনা করছেন কিনা সেটাই ভাবনার বিষয়। দেশ আজ বেসুমার দুর্নীতির রাহুগ্রাসে গঠিত। গত কয়েক বছর ধরে ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল দেশের দুর্নীতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরছে। দুর্নীতির হাত বদল খাত বদল হচ্ছে, কিন্তু দুর্নীতি চিত্রে কোন বদল হচ্ছে না। এই না হওয়াই মূলত দুর্নীতি দমন কমিশনের ব্যর্থতা। যদি দুর্নীতি দমন কমিশন তার সাফল্য প্রমাণে সক্ষম হতো, তাহলে অবশ্যই দুর্নীতিবাজরা তা যে দলের বা যে পথ ও মতেরই হোক না কেন তারা অবশ্যই সতর্ক হতো। তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হতো। আজ পর্যন্ত তা করা সম্ভব হয়নি। ইতোপূর্বে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, সরকারি দলের বা প্রভাবশালী মহলের কোন দুর্নীতি থাকলে তা নিয়ে তদন্তে নানা অজুহাত তোলা হয়েছে। অবস্থা তো এমন দাঁড়িয়েছে যে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বলা বাহুল্য, সংস্থাটিকে রাজনীতিকরণের ফলে এর মূল চরিত্রই হারিয়ে গেছে। যে কারণে জনগণের আস্থাও হ্রাস পেয়েছে। ব্যাপারটি যেমন একদিনে হয়নি, তেমনি এর জন্য একক কাউকে দায়ী করাও সঙ্গত নয়। নতুন চেয়ারম্যান যেভাবে সকলকে নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কথা বলেছেন তা কতটা সফল হয়, তাই দেখার বিষয়।
সমাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত রয়েছে। দুর্নীতি রোধ করতে চাইলে প্রায় সকলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বা দিতে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রজনীতিবীদরা হচ্ছেন সমাজের মাথা। প্রকৃত দুর্নীতি দমন করতে হলে সেখান থেকেই দুর্নীতিমুক্ত করা শুরু করতে হবে। এটা সকলেরই জানা, কোন বৈধ আয় না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই রাতারাতি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যাচ্ছেন। এরাই আবার সমাজকে শাসন করছেন। জ্ঞান দানও করছেন। সমাজকে দুর্নীতি মুক্ত বা অবৈধ অর্থবিত্তের সর্বনাশা আক্রমণ থেকে বাঁচাতে না পারলে যত ধরনের কর্মপন্থাই গ্রহণ করা হোক না কেন তা থেকে সুফল পাওয়া যাবে না। পাত্রের নিচে ছিদ্র রেখে গ্যালন গ্যালন পানি ঢেলে পাত্রপূর্ণ করা সম্ভব নয়। আমাদের সমাজে দুর্নীতি হচ্ছে সেই ছিদ্রপথ, যা দিয়ে সকল উন্নয়ন অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। এটা রোধ করতে এবং দুদকের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই দুদক চেয়ারম্যান যা বলতে চেয়েছেন বা বুঝাতে চেয়েছেন তার কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেটা সময় বলে দেবে। আমরা তার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই এবং মনে করি কেবল কথা নয় কাজের মাধ্যমে সদিচ্ছার প্রমাণ রাখা জরুরি। উদ্যোগ নিলে অবশ্যই সাথী পাওয়া যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।