পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আরও বিস্তৃত এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে চলমান বন্যা। জুন মাসের ২৪ তারিখ শুরু হওয়া বন্যার সময়কাল ইতোমধ্যে ২৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এখনো পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও সুরমাসহ দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেশের ২০ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে বন্যা। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে আরও ৫/৬টি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়বে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চলমান এই বন্যার স্থায়ীত্ব কমপক্ষে আরও তিন সপ্তাহ হতে পারে। এতে করে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা স্থায়ী হবে। যদি তাই হয়, তাহলে চলমান বন্যা ১৯৯৮ সালের বন্যার স্থায়ীত্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করবে। ’৯৮ সালের বন্যার স্থায়ীত্বকাল ছিল ৩৩ দিন।
আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা থাকলে এর স্থায়ীকাল হবে ৪০ থেকে ৪২ দিনের মতো। ’৯৮-এর পর দ্বিতীয় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ছিল গত বছর ১৭ দিন। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র প্রথমদিকে পূর্বাভাসে বলেছিল, এই বন্যা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তবে গত সপ্তাহ থেকে তারাও বলছে এই বন্যা আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থেকে যেতে পারে।
চলমান বন্যায় প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে রাজধানীর আশপাশের এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এরই মধ্যে কমপক্ষে ২০টি জেলার গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলী জমি। ভেসে গেছে অনেক মৎস্য খামার। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। অনেক স্থানে বানভাসীরা কোন ত্রাণ পাচ্ছে না। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। সেই সাথে আমন চাষাবাদও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্টটি তৈরি করেছেন বিশেষ সংবাদদাতা রফিক মুহাম্মদ।
আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী দেশের ২০ জেলার প্রায় ৩০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ’ পরিবারের বসতভিটা-জায়গা জমি। ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় দেশের ১৮ জেলা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত জেলাগুলোর ৯২টি উপজেলা ও ৫৩৫টি ইউনিয়নে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২ জন। বন্যায় মোট ৮ জন মারা গেছেন। পানিবন্দি ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৬টি পরিবার।
সরকারের দিক থেকে বন্যার স্থায়ীত্বের কথা চিন্তা করে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যা কবলিত জেলাগুলোর ডিসিদের বন্যা মোকাবেলায় সবসময় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সব কটি জেলায় যথেষ্ট পরিমাণে চালের মজুদ রাখা হয়েছে। আরও যে সব জেলায় বন্যা হতে পারে, সেখানেও ত্রাণ পৌঁছে যাচ্ছে।
বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, চলমান বন্যা এরই মধ্যে ২০ দিন অতিক্রম করেছে। ভারতের আসাম, মেঘালয়সহ অন্যান্য রাজ্যে যে ভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ছে তাতে আমাদের দেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। কোন কোন জেলায় এ বন্যার প্রাদুর্ভাব আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের প্রথম কাজ হবে বন্যার্ত সব মানুষের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করা। আর কোথাও যাতে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা। পানি নামার সময় নদীভাঙন বাড়তে পারে, সে ব্যাপারে মানুষকে আগে থেকে পূর্বাভাস দিয়ে প্রস্তুত রাখা।
উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্দা দিয়ে শুরু হয়ে বন্যার পানি এখন দেশের মধ্যাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় চলে এসেছে। বন্যার পানিতে ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ঢাকার নবাবগঞ্জ, দোহার ও মানিকগঞ্জের নিম্নাঞ্চল এখন বন্যার পানির নিচে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী দু’দিনের মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে ত্রাণ পাচ্ছেন না বন্যার্তরা। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্দা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ২০ লাখ লোক পানিবন্দি। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধ, রাস্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটের কারণে দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ব্যাধি। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা ও বাঁধের ওপর আশ্রিত বানভাসীদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরে ঘরে দেখা দিয়ে খাদ্য সঙ্কট। আশ্রয় শিবিরে যারা আছেন তারা সামান্য ত্রাণ পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, পদ্মায় প্রতিদিন পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীর অনেক স্থানে পদ্মার পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে শহর রক্ষা বাঁধও। পদ্মার ভাঙনে দক্ষিণে জিরো লাইন বিলীন হচ্ছে। হারাচ্ছে একক আধিপত্য। জেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানিতেই এখন যে অবস্থা ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে প্রতিবারের ন্যায় ফারাক্কার সব গেটগুলো খুলে দিলে পরিস্থিতি কি ভয়াবহ হবে তা নিয়ে শঙ্কিত পদ্মা পাড়ের মানুষ।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, বগুড়ায় বন্যার আরো বিস্তৃতি ঘটে সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনটের পর পূর্ব বগুড়ার গাবতলী ও শেরপুরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়ায় গতকাল যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিগত বছরের রেকর্ড ছুঁয়ে বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, সিলেটের নদ-নদীর মধ্যে শুধু কুশিয়ারার পানি এখন বাড়ছে। গতকাল কুশিয়ারার ২টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অমলশীদে ৬৭ ও বিয়ানীবাজারে শেওলায় ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়।
ময়মনসিংহ থেকে মো. শামসুল আলম খান জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। বন্যায় কবলিত হয়েছে জেলার ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই হাজার পরিবার।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, গতকালও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়ায় ৮১ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে চিলমারী উপজেলা শহর। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও থানা চত্বরসহ উপজেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর আগে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা শহরও অনুরুপভাবে প্লাবিত হয়।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, বানভাসীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। ঘর-বাড়ি, রাস্তা- ঘাট, হাট- বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার পানি তলিয়ে থাকায় বিপাকে পড়েছে জেলার ৮ লাখ পানিবন্দি মানুষ।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল, চরমাধদিয়া, ডিক্রিরচর ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি রাস্তা তলিয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলার নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচির মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ সদরের শিমলা, এনায়েতপুর রাউতারা বাঁধ, বৈন্যারেহাই-বিনানই সড়কের সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক, এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণ গ্রাম থেকে পাচিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকার যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে।
শেরপুর থেকে মো. মেরাজ উদ্দিন জানান, শেরপুর সদর উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে কামারেরচর, চরপক্ষমারী ও বলায়েরচর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানি প্লাবিত হয়েছে। চরমুচারিয়া ও চরশেরপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামেও পানি ঢুকেছে।
আরিচা সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর ভ‚ইয়া জানান, পদ্মা-যমুনায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে আলীম আকন্দ জানান, টাঙ্গাইলের ভ‚ঞাপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। উপজেলার গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী নিকরাই, অলোয়া ও ফলদা ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙন হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক।
সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে কাজি রেজাউল করিম রেজা জানান, মূল সড়ক থেকে পানি নামলেও উপজেলার নিম্মাঞ্চল এখনো পানির নিচে। পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ।
নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন জানান, আত্রাই নদীর ৬টি স্থানে বাঁধ ভেঙে আত্রাই ও মান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার জাত আমরুল এবং বৈঠাখালিতে বাঁধ ভেঙে ৫টি ইউনিয়ন কবলিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।