মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বৈশ্বিক প্রজনন হারের ক্রমাবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শিশু জন্মের পরিমাণ কমে গেলে তা ভবিষ্যৎ সমাজের উপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রজনন হার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে চলতি শতকের শেষ দিকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যাই এখনকার তুলনায় অনেক কম থাকবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে ২১০০ সালের মধ্যে স্পেন ও জাপানসহ ২৩টি দেশের জনসংখ্যা এখনকার অর্ধেক হয়ে যাবে বলেও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন। সাধারণত, প্রজনন হার ২ দশমিক ১ এর কম হলে জনসংখ্যার আকার কমতে শুরু করে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৫০ সালে নারীরা গড়ে ৪ দশমিক ৭টি সন্তানের জন্ম দিলেও ২০১৭ সালে তা ২ দশমিক ৪ এ নেমে এসেছে। এখানেই শেষ নয়; প্রজনন হার আরও কমে ২১০০ সাল নাগাদ ১ দশমিক ৭ এ দাঁড়াতে পারে বলে জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ধারণা দিয়েছেন গবেষকরা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে ২০৬৪ সাল নাগাদ মানুষের সংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছালেও তার ৩৬ বছর পরই এ সংখ্যা ৮৮০ কোটিতে নেমে যাবে। বিজ্ঞানীরা এ প্রজনন হার কমার পেছনে চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের আগের তুলনায় বেশি পদচারণা এবং জন্মনিরোধক পণ্যের আধিক্যকে কারণ হিসেবে দেখছেন। এসব কারণে নারীরা এখন কম সন্তান নেয়াটাই পছন্দ করছেন, বলছেন তারা। বিশ্বের অনেক দেশে আবার প্রজনন হার কমাকে ‘সফলতা’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। প্রজনন হারের এ ক্রমাবনতি জাপান, ইতালি, স্পেনসহ বেশকিছু দেশের জন্য এখনি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ভাষ্য গবেষকদের। তাদের ম‚ল্যায়ন অনুযায়ী, জাপানের জনসংখ্যা এ শতাব্দির শেষ নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে মাত্র ৫ কোটি ৩০ লাখে। যেখানে ২০১৭ সালেও দেশটির জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ইউরোপের দেশ ইতালিতে ২০১৭ সালে ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ লোক; প্রজনন হার কমতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ এটি ২ কোটি ৮০ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে ২৩টি দেশের জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ বেশি তাদের মধ্যে মাত্র দুটি দেশের জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে অর্ধেকের বেশি থাকতে পারে, বলছেন গবেষকরা। “এটা চোয়াল ঝুলে পড়ার মতো ব্যাপার,” বলেছেন অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুরে। প্রজনন হার কমায় চীনের জনসংখ্যাও আগামী ৮ দশকে অনেক কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, আর ৪ বছরের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে হবে ১৪০ কোটি। এরপর তা কমতে কমতে ২১০০ সাল নাগাদ থাকবে মাত্র ৭৩ কোটি ২০ লাখ। গবেষকদের অনুমান, যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ২০৬৩ সালে হবে সবচেয়ে বেশি, ৭ কোটি ৫০ লাখ। ২১০০ সালে সেটি কমে হবে ৭ কোটি ১০ লাখ। বিশ্বের ১৯৫টি দেশের ১৮৩টিতেই প্রজনন হার এমন হবে যে তা আর প্রতিস্থাপন যোগ্য থাকবে না; যার ফলে এ বিষয়টি বিশ্বের দেশগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। জনসংখ্যা কমলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমবে, কমবে বন ধ্বংস করে কৃষিজমি বানানোর তৎপরতা। ফলে প্রজনন হার কমাকে অনেকে ভালো বললেও বিজ্ঞানীরা খুশি হতে পারছেন না। কেননা, তাদের হিসাবে ২১০০ সাল নাগাদ তরুণদের তুলনায় বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা এখনকার অনুপাতে অনেক বেশি থাকবে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল ৬৮ কোটি ১০ লাখ; ২১০০ সালে এ সংখ্যা থাকবে মাত্র ৪০ কোটি ১০ লাখ। অন্যদিকে ২০১৭ সালে ৮০ বছরের বেশি বয়সীর সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ১০ লাখ; ২১০০ সালে এটি বেড়ে হবে ৮৬ কোটি ৬০ লাখ। “এটি সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বৃদ্ধদের এ পৃথিবীতে কারা কর দেবে? বেশি বয়সীদের স্বাস্থ্যসেবায় কারা অর্থ খরচ করবে? কারা তাদের দেখভাল করবে? সেসময় চাকরি থেকে অবসর নেয়ার সুযোগ থাকবে তো?,” প্রশ্ন অধ্যাপক মুরের। জনসংখ্যা বাড়াতে যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশই গত কয়েক বছর ধরে অভিবাসনের উপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু যখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেরই জনসংখ্যা সংকুচিত হতে শুরু করবে, তখন কেবল অভিবাসনের মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান করা যাবে না। প্রজননে উৎসাহিত করতে অনেক দেশ সবেতন পিতৃত্বকালীন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি, বিনাম‚ল্যে শিশুসেবা, নানান ধরনের আর্থিক সুবিধা ও চাকরিকালীন সুযোগ দিলেও এগুলোই যে সুস্পষ্ট সমাধান, তাও বলা যাচ্ছে না। সুইডেন এ ধরনের সুবিধা দিয়ে প্রজনন হার ১ দশমিক ৭ থেকে ১ দশমিক ৯ এ নিতে পারলেও অন্য অনেক দেশই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেনি। সিঙ্গাপুরের প্রজনন হার গত কয়েক বছরের মতোই এ বছরও ১ দশমিক ৩ এর আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। “আপনি যদি কোনো সমাধান বের করতে না পারেন, তাহলে মনুষ্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যদিও তা হতে আরও বেশ কয়েকটি শতক লাগবে,” বলেছেন মুরে। তবে প্রজনন হার বাড়াতে গিয়ে নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। তেমনটা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেও বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ জনসংখ্যা সংকুচিত হতে দেখলেও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ২১০০ সাল নাগাদ এখনকার তিন গুণ হয়ে ৩০০ কোটি ছাড়াতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। সেসময় ৭৯ কোটি ১০ লাখ মানুষ নিয়ে নাইজেরিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশে পরিণত হতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে। বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।