পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের কয়েকটি জেলায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। যেসব জেলা বেশি প্লাবিত হয়েছে সেগুলো হলো- সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, ফরিদপুর, গাইবান্দা ও লালমনিরহাট। এসব জেলার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তা, ধরলা অববাহিকার নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের আরও কিছু জেলা বন্যাকবলিত হতে পারে। সব মিলিয়ে এবার ২৩-২৪টি জেলা বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বৃষ্টি থাকবে আরও তিন চারদিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ জুলাই পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টির পরিমাণ কমে এলেও পাঁচদিন বিরতি দিয়ে ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের প্রায় সব জায়গাতেই বৃষ্টি হয়েছে। সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বগুড়াতে ১০৭ মিলিমিটার। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ১০৬ মিলিমিটার। এ ধারা অব্যাহত থাকবে আরও চারদিন। ১৪ জুলাইয়ের পর ৫ দিনের জন্য বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসবে। এরপর আবার ১৮ বা ১৯ জুলাই থেকে বৃষ্টি শুরু হবে।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাসহ জামালপুর, ফরিদপুর ও সিলেটসহ ১২ জেলায় ইতোমধ্যে বন্যা এসে গেছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের ২৩ থেকে ২৪ জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সাধারণত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি বাড়লে দেশের ২০ থেকে ২৪টি জেলায় বন্যা দেখা দেয়। এবারও এই চারটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে বলে আগেই জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
গত ২৭ জুন থেকে চলা বন্যার ফলে এখনও বেশকিছু জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি জমে আছে। নদ-নদীগুলোও পানিতে ভরপুর। এ অবস্থায় নতুন পানি দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এবং আরও বিস্তৃতি ঘটছে বলে জানিয়েছেন বন্যা বিশেষজ্ঞরা।
বন্যার পানিতে মাঠ ও গোচারণ ভূমির ঘাস মরে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন কৃষিজীবীরা। আমনের বীজতলা আবারও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষক দিশেহারা। বানভাসিরাও অন্তহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ।
সুনামগঞ্জ : প্রথম দফার বন্যার পানি নামতে না নামতেই সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় বন্যা হানা দিয়েছে। জেলার তাহিরপুর দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মেঘালয় সীমান্তের শতাধিক ঝরনা পানি উজান থেকে প্রবল বেগে নামছে ভাটিতে। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বসত ভিটে, গবাদি পশু, পুকুরের মাছ। এরকম চিত্র সদর উপজেলার লালপুর, রাধানগর, কুতুবপুর, রসুলপুর, চালবন, ভাদেরটেক গ্রামে। যত দূর চোখ যায় পানি আর পানি।
সুরমা নদীর দুকূল ছাপিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে গ্রামগুলোয়। পানিতে সুনামগঞ্জ-সাচনা, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের ২০টি জায়গা তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে কার্লভাটগুলোর সংযোগ সড়ক থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
পানি বৃদ্ধিতে ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। সুরমা, চেলা, ইছামতি নদীর পানি উপজেলার সব হাওর ও খালবিলে দ্রুত বৃদ্ধির ফলে এ অঞ্চলে আবারও বড় রকমের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার, চেলা ও ইছামতির পানি ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
লালমনিরহাট : উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি আবারও বাড়ছে। ভারতের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে আবারও তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ সুইস গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
সিলেট : ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সিলেটে সবকটি নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। নগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী বাসাবাড়ি ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। নতুন করে জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে হাওরাঞ্চলের ফসলি জমি আরেক দফা তলিয়ে গেছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি সিলেটে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে গতকাল কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সিলেটের গোয়াইনঘাটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের বসতবাড়িসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দি হয়ে অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। বসতবাড়ির পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের ওপর দিয়ে কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ডাউকি নদীর প্রবল স্রোতে নদীর তীরবর্তী এলাকার কয়েক জায়গায় ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উপজেলার সারী ও ডাউকি নদীর পানি।
গাইবান্ধা : টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট ও যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি যে কোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এছাড়া ঘাঘট, কাটাখালী ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার ১৩টি পয়েন্টে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে স্রোতের তীব্রতা। এতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে নদীভাঙন।
চাঁদপুর : ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে প্রমত্তা মেঘনা চাঁদপুরে উত্তাল হয়ে ওঠেছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের অর্ধশত বাড়িঘর। নদীপাড়ের অনেকে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন দিশেহারা। কেউ কেউ বসতি সংলগ্ন এলাকায় হোগলা পাতার বাঁধ দিয়ে ভাঙন ঠেকিয়ে বাড়িঘর রক্ষার চেষ্টা করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমে আশপাশের চরাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হোগলা পাতা ও গাছের ডালপালা দিয়ে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালান। গত কয়েক দিনে মেঘনার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের ইব্রাহিমপুর ও পাশের আলুরবাজার ফেরিঘাট এলাকা। এছাড়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ছোট একটি বাজার ও বিআইডবিøউটিসির টার্মিনালের একাংশ। নতুন করে আবারো ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আশপাশের কয়েকশ’ পরিবার।
কিশোরগঞ্জ : ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরআলগী গ্রামটি ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়েছে। বর্তমানে এই গ্রাম ব্রহ্মপুত্রে বিলীনের উপক্রম হয়েছে। ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ১০ দিন ধরে ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ব্রহ্মপুত্র যেন ফুলে ফেঁপে উঠছে। প্রতিদিন ভাঙছে নদীর দুই পাড়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।