Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙছে নদী বাড়ছে দুর্ভোগ

বেশিরভাগ এলাকায় কমছে পানি চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বানের পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ। এ ছাড়া তীব্র নদী ভাঙনের কারণে অনেকে ভিটেমাটি হারাচ্ছেন। মেঘনার ভাঙনে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ এখন হুমকির মুখে। যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জ সদরে বাঁধের ৭০ মিটার ভেঙে গেছে। এছাড়া দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ছড়াতে শুরু করেছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগও।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, এখনও অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যাপ্রবণ প্রধান প্রধান নদ-নদীরগুলোর পানি কমছে। তাই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর কমে আসবে। মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানির সমতলও হ্রাস পাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে।
এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। অপরদিকে রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি ধীরে কমতে শুরু করলেও নতুন বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, মেঘনার ভাঙনে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের পুরানবাজার হরিসভা এলাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ঝুঁকি এড়াতে জিওব্যাগ ভর্তি বালি ফেলা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কারের জন্যে প্রস্তাবিত ৪৩০ কোটি টাকার প্রকল্প গত মার্চ মাসে স্থগিত হয়ে গেছে। পাউবো প্রকৌশলী জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার করা হয়নি। একটি বাঁধ পাঁচ বা দশ বছর পর পর সংস্কার করতে হয়। কিন্তু তা করা হয়নি।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার জানান, মেঘনা নদীর পানি ও স্রোতধারা বৃদ্ধির কারণে হরিসভা এলাকা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এখানাকার ৯০ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে বালিভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক হাজার বস্তা ফেলা হয়েছে। আরো ফেলা হবে। এখানে মোট ১৫ হাজার বালিভর্তি বস্তা ফেলা হবে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা বিমল বলেন, আমরা খুব আতঙ্কে রয়েছি। অনেক বাসিন্দা ভাঙন আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা সদরে যমুনা নদীর পানির প্রবল স্রোতে একটি বাঁধের ৭০ মিটার নদীতে ধসে গেছে। এ কারণে বাঁধ অভ্যন্তরের পাচঠাকুরী এলাকার প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীনের আশঙ্কায় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জেলার এনায়েতপুরের ঘাটাবাড়ি ও পাকুরতলায় যমুনার ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। পাউবো থেকে সেখানে অস্থায়ী জরুরি প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হলেও ভাঙন কোনভাবেই থামছে না। থেমে থেমে ভাঙনে মানুষজন ক্রমশ বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে যমুনা সেতুর সংযোগ সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। ধরলার ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০০ মিটার অংশ ভেঙে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাঁধের বেশিরভাগ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নওগাঁ জেলার আত্রাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলতি বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের পিছন দিক এবং খেলার মাঠের কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদীভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জামালপুর জেলায় নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৪০০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জেলার সাতটি উপজেলার মোট ৪৯টি ইউনিয়নে প্রায় চার লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। পাবনা জেলায় পানি কমলেও ভাঙন তীব্র হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষি জমি ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, এই এলাকায় নদী ভাঙন প্রতিদিন প্রবল হচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মার ভাঙনও তীব্র হয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধেও আছড়ে পড়ছে পদ্মার ঢেউ। তবে এই জেলায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ