Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যাদুর্গতদের প্রতি এই উপেক্ষা দুঃখজনক

প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশের অন্তত ১৮টি জেলা এ মুহূর্তে বন্যার পানিতে ভাসছে। অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে এই বন্যা দেখা দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আছড়ে পড়া এই বন্যায় ওই ১৮টি জেলা ছাড়াও নতুন নতুন এলাকা প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে। দু’চার দিনের মধ্যে বন্যা মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তখন পরিস্থিতি যে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বন্যা কবলিত ১৮টি জেলায় মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপক ও মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। অর্থনীতি অপরিমেয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। যোগাযোগ ও অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। খাদ্য ও জ্বালানি সংকট চরমে উঠেছে। বৃহত্তর রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, ফরিদপুর, ঢাকা এবং সিলেটে চলমান বন্যায় অন্তত ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর ডুবে গেছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। মাছের খামার ভেসে গেছে। বাঁধ, রাস্তাঘাট ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে গেছে। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফুলছড়ি-সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য সব নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু রাস্তা ও স্থানে আশ্রয় নিয়েছে তারা সম্পূর্ণ নিরালম্ব হয়ে পড়েছে। পানিবন্দিদের উদ্ধারে যেমন কোনো তৎপরতা নেই, তাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর উদ্যোগ নেই তেমনি তাড়িত ও বিভিন্ন জায়গায় আশ্রিত মানুষের জন্য ব্যাপক কোনো ত্রাণ তৎপরতাও লক্ষণীয় নয়। খাদ্য, পানি ওষুধপত্র ইত্যাদির অভাবে মানুষের দুর্র্দশার কোনো অবধি নেই। সরকারী বা স্থানীয় প্রশাসনের তরফে কোথাও কোথাও ত্রাণসামগ্রী যা দেয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও বিস্ময়কর বাস্তবতা হলো, সরকারের তরফে এই বন্যা, মানবিক বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতিকে তেমন একটা গ্রাহ্যেই আনা হচ্ছে না। এ মুহূর্তে সরকারের সমস্ত মনোযোগ একমাত্র সন্ত্রাস দমনেই নিবদ্ধ। সরকারের বিবেচনায় সন্ত্রাসই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। বন্যা বা অন্য কিছু সে তুলনায় কিছুই নয়। এতগুলো জেলায় কোটি কোটি মানুষের এই কঠিন বিপদ, অপরিসীম দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা ও বিপন্নতার প্রেক্ষিতে সরকারের যেখানে উচিত ছিল সবকিছু ফেলে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো, তাদের সেবা ও রক্ষায় নিয়োজিত হওয়া সেখানে সরকার বলতে গেলে চুপচাপ। বিষয়টি পাত্তা দেয়ারই প্রয়োজন বোধ করছে না। স্থানীয় প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। স্থানীয় প্রশাসন কিইবা করতে পারে! যতটুকু পারছে, করছে, যা মোটেই যথেষ্ট নয়। সন্ত্রাসবাদ দেশের জন্য একটা বড় সমস্যা এবং অবশ্যই গভীর উদ্বেগের বিষয় তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজে লাগানো হবে এবং অন্যান্য বিষয়, বিশেষ করে চলমান বন্যা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা হবে, এটা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ডিসি সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানেও দেখা গেছে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ডিসিদের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনই তাদের প্রধান কাজ। এ অবস্থায় ডিসিদের পক্ষে অন্যান্য কাজে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া যে কঠিন তা বলাই বাহুল্য। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ধীরে ধীরেই ঘটছে। ডিসি সম্মেলনের সময়ও বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছিল। বন্যা মোকাবিলায় তাদের দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে কিনা তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। যেহেতু জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনকেই তাদের প্রধান দায়িত্ব বলে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, সুতরাং তারা এদিকে কতটা নজর দেবেন বা দিতে থাকবেন তা বলার উপায় নেই। বন্যার্ত মানুষের জন্য এটি অবশ্যই একটি নেতিবাচক খবর। সাধারণত বন্যা বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানীয় প্রশাসন প্রধান ভূমিকা রাখে। সরকারিভাবে প্রদেয় ত্রাণসামগ্রী স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বিতরণ করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতার সমন্বয়কের ভূমিকাও পালন করে।
সরকারের দিক থেকে বড় গলা করে বলা হয়ে থাকে, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা অন্য অনেক দেশের চেয়েই বেশি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও তাদের থেকে উন্নত। অথচ এ মুহূর্তে লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ফেলে, সহায়-সম্বল হারিয়ে বাঁধে ও রাস্তাঘাটে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এখন সবচেয়ে বড় কাজ পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা, এবং সকল দুর্গত-বিপন্ন মানুষের খাদ্য-পানিসহ জীবনধারণের উপকরণ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা, রোগ-বালাই থেকে মুক্ত রাখা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন যা দিচ্ছে বা করছে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। ত্রাণসামগ্রীর জন্য সর্বত্র হাহাকার চলছে। এও কম বিস্ময়কর নয় যে, বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতারও তেমন কোনো খবর নেই। আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক ও কল্যাণমূলক সংস্থা দুর্গতমানবতার সেবায় ও ত্রাণে স্বর্তঃস্ফূতভাবে এগিয়ে যেত। এবার তাও দেখা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে চলমান বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটতে পারে, বন্যা হতে পারে প্রলম্বিত। কিন্তু সরকারের সেদিকে নজর বা খেয়াল আছে বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করব, বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় এবং দুর্গত মানুষের সেবা ও কল্যাণে সরকার দ্রুতই প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিপন্ন মানুষকে বাঁচানো, সুরক্ষা দেয়া, সহায়তা ও পুনর্বাসন করার চেয়ে বড় কোনো কাজ হতে পারে না। এটা সরকারের অপরিহার্য দায়িত্ব। এ দায়িত্ব সরকার উপেক্ষা করতে পারে না। আমরা এও আশা করব, দুর্গতদের ত্রাণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন মহলও এগিয়ে আসবে।

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যাদুর্গতদের প্রতি এই উপেক্ষা দুঃখজনক
আরও পড়ুন