পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে সরকার। বন্যা কবলিত জেলার সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে কবলিত জেলার মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে জেলাগুলোয় সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। বন্যা কবলিত ১২ জেলার জন্য সরকার ২ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে মানবিক সহায়তা বাবদ রয়েছে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ২৪ লাখ টাকা এবং গো খাদ্য কেনার জন্য রয়েছে আরও ২৪ লাখ টাকা। এছাড়াও মানবিক সহায়তা বাবদ ১০ হাজার ৯০০ টন চালও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মুহূর্তে দেশের ১৫টি জেলা বন্যা কবলিত। এসব জেলার ওপর দিয়ে বহমান নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলায় বসবাসকারী মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও মাছের ঘের। জেলাগুলো হচ্ছে- রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের ১১টি নদীর পানি ১৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেশের উত্তর-পূর্বাংশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্ট, ঘাগট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্ট, ব্রহ্মপুত্র নদীর নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্ট, যমুনা নদীর ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ পয়েন্ট, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্ট, ধলেশ্বরীর এলাসিন, পদ্মার গোয়ালন্দ, সুরমার কানাইঘাট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্ট এবং পুরাতন সুরমার দিরাই এলাকা। বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১০১ পর্যবেক্ষণাধীন পানি স্টেশনের মধ্যে ১৭টিতে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ৬১টি স্টেশনের পানি বাড়ছে, কমছে ৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে একটির। ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ১৮, ঘাগটের গাইবান্ধা পয়েন্টে ২৭, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ২৯, যমুনার ফুলছড়ি পয়েন্টে ৫৬, যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৫৯, যমুনার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৫১, যমুনার কাজিপুর পয়েন্টে ৫৫, যমুনার সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৩৫, যমুনার আরিচা পয়েন্টে ১০, বাঘাবাড়ির আত্রাই পয়েন্টে ৪৯, ধলেশ্বরীর এলাসিন পয়েন্টে ৪৬, পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৪৬, পদ্মার ভাগ্যক‚ল পয়েন্টে ২০, পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে ১১ এবং পুরাতন সুরমার দিরাই পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, এখন যে পরিস্থিতি আছে তা আগামী ৪-৫ দিন প্রায় একই রকম থাকবে। এরপর আবার বৃষ্টি শুরু হলে পানি বাড়তে পারে। এতে দেশের উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাংশের যেসব এলাকা এখন প্লাবিত, সেখানে পানির উচ্চতা বাড়বে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। আগামী সপ্তাহে নতুন এলাকা আবার প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর আরিচা এবং ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর ভাগ্যক‚ল পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আমাদের বিভিন্ন জেলার সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে নদীভাঙন। চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে লাখ লাখ মানুষের। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে বা উঁচু স্থানে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে খামার ও পুকুরের মাছ। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গতকালও বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপরে। যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ জেলায় এনায়েতপুরের ঘাটাবাড়ি ও পাকুরতলায় ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। পাউবো থেকে সেখানে অস্থায়ী জরুরি প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হলেও ভাঙন কোনভাবেই থামছে না। থেমে থেমে ভাঙনে মানুষজন ক্রমশ বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে। বেড়েছে স্বাস্থ ঝুঁকি। বন্যা দুর্গতরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে পড়েছে চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে নারী, শিশু-কিশোরী ও বৃদ্ধদের অবস্থা খুবই নাজুক।
নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে।
রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে ধীর গতিতে। প্রতিদিনই পদ্মা নদীর পানি রাজবাড়ীর তিনটি স্টেশনে কয়েক সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিমাপকৃত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। যা বর্তমান বিপদসীমার ৮ দশমিক ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধীর গতিতে পানি বাড়লেও পদ্মার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট এবং প্রায় ৩ হাজার পরিবার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।