Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওয়ারী লকডাউনের তৃতীয় দিন নাম লিখিয়ে যাওয়া-আসা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

স্বেচ্ছাসেবীর হাতে কম্পিউটারে কম্পোজ করা বিশাল ফর্দ। তালিকা দেখে দেখে ডাক্তার, নার্স, রোগী, সাংবাদিক ও ফার্মাসিস্টদের বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের কাউকে এলাকা থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। লকডাউন মানার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ নানা কারণ দেখিয়ে এলাকা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন, বেরও হচ্ছেন। এ দৃশ্য দেখা গেল গতকাল সকালে ওয়ারী পোস্ট অফিস গলির মাথায়। 

ওয়ারীর লকডাউনের তৃতীয় দিন গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাইরে বের হওয়ার চেষ্টায় মানুষের দীর্ঘ লাইন। খাতায় সিরিয়াল। ওয়ারীর হট কেক গলির সামনের রাস্তায় ২০ থেকে ২৫ জন বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। লকডাউন কার্যকরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাধ্য হয়েই কাউকে কাউকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, তারা শুধু ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট ছাড়া কাউকে বের হতে দিচ্ছেন না।
কথা হয় ওয়ারীতে দায়িত্বপালনরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য মো. সাঈদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওয়ারীবাসীর চাওয়ার শেষ নেই। করোনার এই মহামারি উপেক্ষা করে অনেকেই বাইরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বের হতে চান। অসময়ে ফোন করে জরুরি প্রয়োজন নয়, এমন কিছু এনে দেয়ারও দাবি করেন। অনেকে ফোর্স করেই বের হয়ে যাচ্ছেন। একজন নারীকে দেখিয়ে বলেন, গত দুইদিন তার বান্ধবী এসে গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বের হতে না দিলে তিনিসহ তার বান্ধবী বাজে মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে জোর করেই বের হয়ে যান। আবার জোর করেই ঢোকেন। আমরা অনেকটা অসহায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী জানান, তিনি কাজ করেন ইন্সুরেন্সে। কাজ না করলে খেতে পারবেন না।
ফাঁকা গলির পথ ধরে সামনে একটু হাটার পর দেখা যায় অনেকে বের হওয়ার জন্য ওয়ারী থানার পাশে র‌্যানকিন স্ট্রিট গেটে ভিড় করেছেন। গেটের সামনে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা বার বার অনুরোধ করলেও তারা শুনছেন না। অনেকেই স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে, পুলিশের কাছে, টহলরত সেনাবাহিনীর কাছে গিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ করছেন। অনেকে আবার স্বেচ্ছাসেবীদের হুমকি দিচ্ছেন।
বন্ধ গেইটের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বললেন, তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যাবেন। হাজী শামছুল আলম নামের ওই ব্যক্তি জানালেন লকডাউন এলাকা থেকে বের হওয়া এবং প্রবেশের জন্য সিরিয়ালের তালিকায় তার নাম রয়েছে। বাইরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যাবো। বাসায় টাকা না থাকলে আমরা কীভাবে খাবো।
দেখা গেল শাসমুল আলমের মতো অনেকেই নানা প্রয়োজনের কথা বলে খাতায় নাম লিখিয়ে এলাকা থেকে বের হচ্ছেন। হট কেক গলির সামনের স্বেচ্ছাসেবকরা জানালেন, সকাল ১১টা পর্যন্ত সেখান দিয়ে বের হয়ে যাওয়া ৯২ জনের নাম খাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভিড় সামলাতে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গোল চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। আর এক একজন করে খাতায় নাম অ্যান্ট্রি করে বের হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকায় প্রবেশেরও সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে টিপু সুলতান রোড দেখা গেল ফাঁকা।
স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না। তারা খুবই অদ্ভ‚ত কারণ দেখিয়ে প্রবেশ ও বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। মো. মামুন খান নামের এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমরা ডাক্তার, নার্স, রোগী ও ফার্মাসিস্ট ছাড়া কাউকে এলাকা থেকে বের হতে দিচ্ছি না। তবে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্বে থাকা রেড ক্রিসেন্টের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে চাকরিজীবীরা এসে বের হতে চান। অফিস থেকে তারা ছুটি পাননি। ফলে তাদের বের হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওয়ারী

২০ এপ্রিল, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ