পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে গতকাল তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে নদীভাঙন। চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে লাখ লাখ বন্যাকবলিত মানুষের। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে বা উঁচু স্থানে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে খামার ও পুকুরের মাছ। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন জেলায় ২২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার্তরা এখনো ত্রাণ পাচ্ছেন না।
সিরাজগঞ্জ জেলা সদরে যমুনা নদীর পানির প্রবল স্রোতে একটি বাঁধের ৭০ মিটার নদীতে ধসে গেছে। এ কারণে বাঁধ অভ্যন্তরের পাচঠাকুরী এলাকার প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীনের আশঙ্কায় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। ধরলা নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০০ মিটার অংশ ভেঙে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাঁধের বেশিরভাগ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নওগাঁ জেলার আত্রাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের পিছন দিক এবং খেলার মাঠের কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। পদ্মায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদীভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি ধীরে ধীরে কমলেও ধরলা নদীর পানি আবারো বাড়তে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঘরবাড়ি ৮ দিন ধরে পানিতে ডুবে আছে। জেলা প্রশাসন সূত্রমতে, জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। প্রায় ১৭ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। আর বেসরকারি হিসাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২ লাখের উপর। এছাড়া গত দু’দিন ধরে ভারী বর্ষণের কারণে সড়ক ও বাঁধের উপর আশ্রিত মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে। দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সঙ্কট। বেড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বন্যা দুর্গতরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে পড়েছে চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে নারী, শিশু-কিশোরী ও বৃদ্ধদের অবস্থা খুবই নাজুক।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল ভোর রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়তে থাকে। যা সকাল ৬ টায় বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি, গয়াবাড়ী ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, শৌলমারি ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চরের মানুষজন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনা নদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যা কবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা। বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নিচ্ছে বিভিন্ন বাঁধ ও উচু সড়কে। এ পর্যন্ত পুরো জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ১০ জন এবং সাপের কামড়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ভোগ কমাতে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, গতকাল সকালে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি এবং শাখা নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
টাঙ্গাইলে আবার বাড়তে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। গেল দুইদিন যমুনা নদীতে পানি কমলেও বিগত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী তীর উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। একই সাথে বাড়ছে ধলেশ্বরীসহ অভ্যন্তরীণ নদ নদীর পানি। ফলে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা।
সুরমা ও পুরাতন সুরমা নদীর পানি বাড়ায় সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে হাওড়পাড়ের মানুষ। জেলার শাল্লা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন শত শত পরিবার। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি। বেশ কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বিদ্যালয়ে। সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বাড়ায় ডুবে গেছে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের বিভিন্ন এলাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।