পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নবাবগঞ্জ উপজেলায় একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এ উপজেলার ৮৭৪ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বেজা ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিস্তারিত প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। গত বছরের ৫ মে প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতিগত অনুমোদন পায়। বেজা বলেছে, এ প্রকল্পের দুটি উদ্দেশ্য। প্রথমত, ঢাকা শহরে যত বিপজ্জনক শিল্পকারখানা আছে, সেগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য জমির ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা ঢাকার আশপাশে জমি চান, তাদের জমির ব্যবস্থা করা। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঢাকা থেকে ৩৯ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ২৫৬ কিলোমিটার দূরে। এর ৮৭৪ একর জমির মধ্যে ৮৩৪ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন। এসব জমিতে কোনো বসতি নেই, বছরের একটা সময় পানির নিচে থাকে, বাকি সময় কৃষিকাজ হয়। স্থানটির কাছেই ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে যাতায়াতে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথেও যোগাযোগ সুবিধা থাকবে। এটি ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।
রাজধানীর কাছাকাছি নবাবগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত দূরদর্শী। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল। রাজধানীকে ভারমুক্ত করার জন্য এর অভ্যন্তরের শিল্পকারখানা বাইরে স্থানান্তর করার কথা নগরবিদরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন। সরকারও নানা সময়ে স্থানান্তর করার কথা বলেছে। তেজগাঁও শিল্প এলাকাকে ম্যানহাটনের মতো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পুরান ঢাকার বিপজ্জনক কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানাসহ অন্যান্য কারখানা সরিয়ে নেয়ার কথা বছরের পর বছর ধরে বলা হলেও তার বাস্তবায়ন নেই। ফি বছর যখন এ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়, তখন স্থানান্তরের দাবী জোরালো হয়ে উঠে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চকবাজরে লাগা আগুনে প্রায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন মারা যায়। প্রায়ই ছোট-খাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। এভাবে পুরান ঢাকায় একেকটি দুর্ঘটনা ঘটে, আর শিল্প সরানোর দাবি জোরালো হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এসব এলাকার কারখানা সরিয়ে নেয়ার কথা বলে। পরে আর অগ্রগতি দেখা যায় না। দুর্ঘটনার রেশ কেটে গেলে কিংবা আরেকটি ট্র্যাজেডি ঘটা না পর্যন্ত এসব কথা শোনা যায় না। বিভিন্ন সমিতির হিসাব অনুযায়ী, পুরান ঢাকায় প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম রয়েছে প্রায় ১২০০। এসব কারখানা এবং কেমিক্যাল গোডাউন সবসময়ের জন্য বিস্ফোরক হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার এসব কারখানা রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে মুন্সিগঞ্জে ৫০ একর জমিতে কারখানা সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থার কথা শুনছি। বাস্তবে এর অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তবে নবাবগঞ্জে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে, তা অত্যন্ত ভাল জায়গা। সেখানেও স্থানান্তর হলে খুব ভাল হয়। নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত সম্পর্কে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জরিপ করা হলে তার মধ্যে ১২৮টি দেশী এবং বাকি ৩০টি বিদেশী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখানে তারা ৯টি খাতে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। সেগুলো হলো খাদ্য ও পানীয়, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ননমেটালিক মিনারেলস, ওষুধ, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও আসবাব, রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক ও রাবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পরিপূর্ণভাবে চালু হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন ত্বরান্বিত হবে, তেমনি বিপজ্জনক কারখানা সরে যাওয়ার কারণে রাজধানী বিপদ ও ভারমুক্ত হবে।
সাধারণত বিশ্বজুড়ে সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো রাজধানী অথবা বড় শহরের কাছাকাছি থাকে। অবস্থানগত সুবিধার কারণে কারখানাগুলোর বাজার ধরা, সংযোগশিল্পের সুবিধা ও জনবলের প্রাপ্যতাসহ অন্যান্য সুবিধা পেয়ে থাকে। নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেহেতু ঢাকার কাছে, তাই এটিতে বিনিয়োগকারীরা এ সুবিধাগুলো সহজে পাবেন। অর্থনীতির স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব এর বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে খেয়াল রাখা দরকার, শিল্পাঞ্চলে কারখানা স্থানান্তরের কাজটি যাতে সতর্কতার সাথে করা হয়। আমরা দেখেছি, হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করা নিয়ে মালিকদের মধ্যে অনীহা এবং অন্যান্য জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে শিল্পনগরী যথাসময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন না করে এবং দূষণরোধক কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার অসম্পূর্ণ রেখেই স্থানান্তরের কাজ করা হয়। ফলে বুড়িগঙ্গার দূষণরোধ করতে গিয়ে ধলেশ্বরী এবং আশপাশের এলাকা দূষিত হয়ে পড়ে। নবাজগঞ্জের অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে এমনটি যাতে না ঘটে, এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেখানে পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। কলকারখানা স্থানান্তরের আগে সংশ্লিষ্ট মালিকদের আগে থেকে নোটিশ দিয়ে তাদের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলতে হবে। হুট করে স্থানান্তরের কাজ শুরু করা যাবে না। স্থানীয় জনগণকেও এ ব্যাপারে অবহিত করতে হবে। অঞ্চলটি যেহেতু দুটি নদীর কাছাকাছি, তাই ট্যানারি শিল্পের মতো নদী ও পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়, এ ব্যবস্থা সুচারুভাবে করতে হবে। এক জায়গার দূষণ কমাতে গিয়ে আরেক জায়গায় দূষণ ছড়িয়ে দেয়া কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।