Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিষণ্ণতা বাড়ছে তরুণদের

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা এটা সামাজিক সঙ্কটের সৃষ্টি করবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার একটি মেস বাড়িতে বসবাসরত ছাত্রদের বিছানাপত্র এবং সার্টিফিকেট ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছে মেস মালিক। বিষয়টি স্থানীয় থানাকে জানানোর পর অভিযুক্ত মেস মালিককে গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রদের বিছানাপত্র, সার্টিফিকেট, বইখাতা ভাগাড় থেকে তোলার দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় দেখানো হয়। ভাড়া দিতে না পারায় বিছানাপত্র ফেলে দেয়া হয়েছে বলে মেস মালিক পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ছাত্রদের অভিযোগ তাদের পঞ্চম, অষ্টম, এসএসসি ও এইচএইচসি সার্ফিফিকেট, মার্কস সার্টিফিকেট ফেলে দেয়া হয়েছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সামনে ছাত্ররা যখন নিজেদের এই দুর্দশার বর্ণনা দেন; তখন অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এ ঘটনা গতকাল বৃহস্পতিবারের। 

বিষন্নমনে ছাত্ররা যখন হাউমাউ করে কাঁদছিলেন তখন স্থানীয় থানা পুলিশ তাদের মার্কস সার্টিফিকেট তোলার ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দেয়। ছাত্ররা জানান, টিউশনি নেই, ক্লাস নেই দীর্ঘদিন। এ জন্য বিষন্নতায় ভুগছেন। এ দৃশ্য সারাদেশের। হাজার হাজার ছাত্র মেস বাড়িতে থেকে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ করতেন। করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ। ফলে তারা না পারছেন মেসের বিল দিতে না পারছেন নিজে চলতে। আবার সামনে চাকরি-বাকরি হবে এমন সম্ভবনাও কমে আসছে। ফলে বিষন্নতা পেয়ে বসেছে তরুণ মনে।
দিন যতই যাচ্ছে, করোনা-সংক্রমণও তত বাড়ছে। ঘরে বসে ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে একাকিত্বের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া একের পর এক কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। সামনে কি হয় তা নিয়েও অনিশ্চয়তা। এসব কারণে করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তি, মৃতদের স্বজন ও বেকার ব্যাক্তদের মধ্যে বিষন্নতা আশঙ্কাজনক বাড়ছে বলে মনে করছেন মনোবিজ্ঞানীরা। তাদের শঙ্কা করোনা পরিস্থিতি আরো বেশিদিন স্থায়ী হলে বিষন্নতা নতুন করে সংকটের সৃষ্টি করবে।
জানতে চাইলে মনোবিদ অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, করোনা মানুষকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সংকটের মধ্যে সময় পার করছে। দিন যতই যাচ্ছে, এই প্রবণতাও বাড়ছে। অনেকেই কর্ম হারাচ্ছেন। অনেকের চাকরি হারানোর ভীতি রয়েছে। এতে বিষন্নতা বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে, একটি পরিকল্পনা তৈরি করা। সুনির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করা। যেখানে মাধ্যমে বেকারত্ব কমানোর পাশাপাশি কর্মের নিশ্চয়তা থাকবে। মানুষকে চিন্তমুক্ত রাখার বিকল্প নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বলেন, অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক ধরনের একাকিত্বে সময় কাটাচ্ছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে বেকার সময় পার করছে। এসব ঘটনা একজন মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই নানারকম দুশ্চিন্তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে বিষন্নতা বাড়ছে।
ওয়েবভিত্তিক চিকিৎসা মাধ্যম ‘ডাক্তার বাড়ি’র প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. গওছুল আযম বলেন, করোনায় বড় সমস্যা বিষন্নতা। অ্যালকোহল বা ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। ঘুমের প্যাটার্ন বদলানো যাবে না। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। শারীরিক ব্যায়ম করতে হবে। পাশাপাশি রুটিনমাফিক লাইফ স্টাইলও চালাতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এম এ সালাউদ্দিন কাউসার বলেন, পরিস্থিতি কারো নিয়ন্ত্রণ অনুকূলে না থাকায় বিষন্নতা বাড়ছে। কারও বিষন্নতা তৈরি হলে তাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তরুণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ