পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই জালনোটের কারবারিদের সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা যায়। করোনাভাইরাসের কারণে গত ঈদুল ফিতরে ঈদের বাজার জমেনি বলে জালটাকার কারবারও সুবিধাজনক ছিলনা। তবে এই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই জালটাকা চক্রের সক্রিয় তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। গত রোববার রাজধানী ঢাকার মিরপুর ও বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালটাকা ও ভারতীয় রুপী তৈরীর যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমান জালনোট উদ্ধার করেছে র্যাব। জালটাকা তৈরী চক্রের পুরুষ ও নারী ৬ সদস্যকে আটক করে তাদের কাছ থেকে প্রায় পৌনে চারকোটি টাকা মূল্যের ১০০০ টাকার বাংলাদেশী নোট এবং ৫০০ ও ২০০০ রুপি নোটে প্রায় ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় মূদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে এই চক্রটি ৩০৪০ কোটি টাকার জালনোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশে জালনোট তৈরীর এটিই একমাত্র চক্র নয়। বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের আরো অনেক চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। ইতিপূর্বে গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাড়ি থেকে জালনোট তৈরীর কারখানাসহ বিপুল পরিমান জালনোট জব্দ করেছিল র্যাব।
প্রায়শ সাধারণ মানুষকে জালটাকার বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে জালটাকা শনাক্ত হওয়ার পর অশেষ বিড়ম্বনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকে। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ সারাদিনের আয়-উপার্জনের পর ৫০০-১০০০ হাজার টাকার নোটটি জালটাকা হলে তার বিপন্ন দশা সহজেই অনুমেয়। ঈদের বাজারে গরুর বেপারি ও খামারিদের মধ্যে বিপুল পরিমান জালটাকা ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকায় এ সময়টিকে টার্গেট করে জালনোট চক্র। গত কয়েক বছর ধরে জালনোট নিয়ে সরকারি প্রশাসনের তরফ থেকে বাড়তি সর্তকতা ও ও সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তির মাধ্যমে জালটাকা শনাক্তের ব্যবস্থা থাকায় অবাধে জালনোট ছড়ানো অনেক কঠিন হলেও এর মধ্যেও কিছু জালনোট মানুষের মধ্যে ঠিকই ছড়িয়ে পড়ছে। এই জালনোট চক্রের সাথে একশ্রেণীর ব্যাংক কর্মচারির যোগসাজশ থাকার অভিযোগও অতীতে বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। জালনোট চক্রগুলোর পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ও যোগসুত্র থাকার সম্ভাবনা অস্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন সময়ে জালনোট তৈরীর মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ চক্রের সদস্যরা ধরা পড়লেও আন্ডারগ্রাউন্ড সিন্ডিকেটের মূল হোঁতারা সম্ভবত ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। তা না বিপুল পরিমান মূদ্রা ও সরঞ্জামসহ দু’চারজন র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পরও বাকীরা সক্রিয় থেকে এমন তৎপরতা চালাতে পারত না।
ঈদের বাজার শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে রাজধানীতে কোটি কোটি টাকার জালনোটসহ চক্রের সদস্যদের আটকের ঘটনা খুবই ইতিবাচক। তবে এ ধরনের আরো অনেক চক্র দেশে-বিদেশে সক্রিয় থাকা যেহেতু অস্বাভাবিক নয়, অতএব ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সর্তকতার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন সময়ে জালটাকা তৈরী ও বিপণন চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও প্রচলিত আইনী দুর্বলতার কারণে তারা সহজেই আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। জালমূদ্রা নিয়ন্ত্রণে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তির বিধান রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলেও বছরের পর বছর ধরে তা ঝুলে আছে। অবশেষে সম্প্রতি সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে আইনের খসড়া চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার জালটাকার কারবারে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়ার পরও প্রস্তাবিত আইনে লঘুদন্ডের বিধান থাকায় এ ধরনের আইন জালনোট বন্ধে কতটা কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। পর পর তিনবার এবং ৫০০ পিসের বেশি জালনোট নিয়ে ধরা পড়লেই কেবল কেউ সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আসবে। এমন আইনের কারণে জালনোট চক্রের হোঁতারা কৌশল বদল করে এবং নতুন নতুন লোক রিক্রুট করে কারবার চালাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আইনের কঠোরতার চেয়ে আইনের বাস্তবায়ন এবং কঠোর নজরদারি ও জনসচেতনতাই বেশি কাম্য। ঈদের বাজারে জালনোট চক্রের তৎপরতা রুখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে জালনোট সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও পশু ব্যবসায়ীদের সতর্কতা ও সচেতনতা সৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনার উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।