পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ব্যবসা-বাণিজ্যে জোর নিরাপত্তা দাবী করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ দাবী জানিয়েছেন। তারা মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। সব কিছু স্থিতিশীল রয়েছে। কোনো কোনো মহল এ নিয়ে প্রপাগা-া চালাচ্ছে। তবে জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তবে আস্থার যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, গুলশান হামলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো ক্ষতি হয়নি। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআই তার মাসিক একসভায় বলেছে, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনিরাপদবোধ করছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত কয়েক দিনে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্য দেশে মিটিং করার জন্য বলছেন। এতে একদিকে যেমন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে অর্ডার হারানোরও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা বিদ্যমান। গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার আগ পর্যন্ত এ পরিস্থিতির মধ্যেই অর্থনীতি রয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করে পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এর সাথে অর্থনীতিবিদ ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার মতামতের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তাদের মতামতে এ ধারণাই প্রতীয়মান হয়, যে কাক্সিক্ষত মাত্রায় বা যে ধরনের অগ্রগতি হওয়ার কথা, তা শ্লথ পর্যায়ে রয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় পর পর দুটি হামলার ঘটনা ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের যে আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে, তাতে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। সরকারের পক্ষে সবকিছু ঠিক আছে বলা স্বাভাবিক হলেও, ব্যবসায়ীদের বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, অর্থনীতির যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা নির্বিঘেœ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও বিনিয়োগ করার ভরসা পাচ্ছেন না। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য এ ধরনের অনিশ্চিত পরিবেশ যে কোনোভাবেই কাম্য নয়, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। বলাবাহুল্য, গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা বরাবরই ছিল। বিনিয়োগকারীদের কাছে অদৃশ্য এ অনিশ্চয়তাই বড় হুমকি হয়ে দেখা দেয়। ফলে তারা অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে থাকে। দেশি প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ বিদেশে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। কেউ কেউ বৈধ-অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচার করে দেন এবং তা অব্যাহত রয়েছে। অর্থ প্রবাহও কমে গেছে। ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। বিপুল পরিমাণ টাকা অলস পড়ে আছে। দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস পোশাকশিল্প অনেকটা অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে পড়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ’ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। শুধু পোশাক শিল্পই নয়, চামড়া শিল্পও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া এমনও দেখা যাচ্ছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় নতুন শিল্পকারখানা মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম বৃহৎ উৎস জনশক্তি রপ্তানি খাতেও চরম মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। দেশের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স আসে মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ থেকে। গত অর্থবছরে আটটি দেশের মধ্যে ছয়টি থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সউদী আরব থেকে ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা এবং আরব আমিরাত থেকে ৮৭২ কোটি টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা কমে গেছে। সব মিলিয়ে ছয় দেশ থেকে এক বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। মধ্যপ্রাচ্যের আট দেশের মধ্যে প্রধান ছয়টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯০৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার, যা সমাপ্ত অর্থবছরে নেমেছে ৮৫৫ কোটি ডলারে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান খাত জনশক্তি রপ্তানিতে বিগত কয়েক বছর ধরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এটিও একটি বড় আঘাত। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের টানাপড়েন অব্যাহতভাবেই চলছে। এ অবস্থায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যেই একধরনের নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। বিদেশিরা আরও শঙ্কিত হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। এ প্রেক্ষিতে দেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষুণœ হচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের স্বাভাবিক গতি না থাকলে যতই উন্নয়নের কথা বলা হোক না কেন, তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কথার ফুলঝুরি না ছড়িয়ে বরং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার মূল প্রতিবন্ধক অপসারণে মনোযোগ দেয়া ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বাস্তব পরিস্থিতি পাশ কাটিয়ে বা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রবণতা অর্থনীতিকে অধঃগতির দিকে ঠেলে দেবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথটিকে মসৃণ রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণের বিকল্প নেই। এজন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিজনিত যে কোনো বাধা যে কোনো উপায়ে দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপসের সুযোগ নেই। ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের কর্মপরিবেশসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে তাদের সুবিধা-অসুবিধা অবহিত হতে হবে এবং সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কনফিডেন্স সৃষ্টি করতে হবে। এ কাজগুলো দ্রুত করা দরকার। তা নাহলে, ব্যবসা ও বিনিয়োগে যে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে, তা দেশকে আরও গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।