Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেপাল সরকারকে উৎখাতে ভারতে বৈঠক, জড়িত কাঠমান্ডুর দূতাবাস -ওলি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২০, ২:৫৯ পিএম

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বলেছেন, তার সরকারকে উৎখাতের জন্য ভারতে বৈঠক হচ্ছে। তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত করছে ভারত এবং দেশের শাসকদলের একটি অংশ। নাম না করলেও ওলির ইঙ্গিত, এই চক্রান্তে কাঠমান্ডুতে ভারতের দূতাবাস মদত দিচ্ছে। গত রোববার প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা মদন ভাণ্ডারির ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের সরকারি বাসভবনে এক ভাষণে তিনি এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।

ওলি অভিযোগ, ভারত-নেপাল সীমান্তের তিনটি জায়গা নেপালের ম্যাপে চিহ্নিত করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেছে ভারত। তিনি দাবি করেন, তার সরকারের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং উৎখাতের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে কে.পি. শর্মা বলেন, এ বিষয়ে দিল্লি থেকে খবর আসছে। সংবিধান সংশোধন করে দেশের নতুন মানচিত্র গ্রহণ করায় ভারতে এ বৈঠকগুলো আয়োজিত হচ্ছে।

নেপালে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কাঠমান্ডুতে এখন কমিউনিস্ট পার্টির যে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক চলছে, ভারত বিরোধিতার কারণে সেখানে ওলি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এবং এ বৈঠকেই তার অপসারণের পথ প্রশস্ত হতে পারে। সাবেক মাওবাদী নেতা ও বর্তমানে নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির দলীয় প্রধান প্রচণ্ড-ই (পুষ্প কুমার দহাল) এ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেপালের পার্লামেন্টের নিন্মকক্ষে দেশটির সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী ১৩ জুন সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এতে নতুন মানচিত্র গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে বিতর্কিত লিমপিয়াধুরা-কালাপানি-লিপুলেখ অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারত এ এলাকাগুলোকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে। ১৮ জুন বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবি ভাণ্ডারি।

ওলি বলেন, নেপালের ভূখণ্ড চিহ্নিত করায় খুশি হয়নি ভারত। আমাদের জাতীয়তাবাদ এত দুর্বল নয়। আমরা আমাদের মানচিত্র পরিবর্তন করেছি এবং এখন যদি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে গদিচ্যুত করা হয় তাহলে নেপালের কাছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। ভারতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কিছু মানুষ মনে করছে নেপালের নতুন মানচিত্র গ্রহণ করা অপরাধ। আপনারা হয়তো শুনেছেন ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বদলানো হতে পারে। এবার যদি আমাদের পদচ্যুত করা হয় তাহলে নেপালের স্বার্থের পক্ষে কথা বলার সাহস কেউ পাবে না। কারণ তাকেও দ্রুতই সরিয়ে দেয়া হবে। আমি নিজের জন্য বলছি না। আমি দেশের জন্য বলছি। আমাদের দল, আমাদের সংসদীয় দল এমন ফাঁদে পা দেবে না। যারা চেষ্টা করছে, করুক।

উল্লেখ্য, নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির দুটি অংশ রয়েছে সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদী কেন্দ্র। প্রথমটির নেতৃত্বে ছিলেন কে পি ওলি আর দ্বিতীয়টির প্রচণ্ড। ২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে এ দলের এখন মোট ১৭৪ জন এমপি আছেন, এদের মধ্যে সিপিএন-ইউএমএলের ১২১ জন আর মাওবাদী কেন্দ্রের ৫৩ জন। আর এ দুই দলের সংযুক্তির মাধ্যমেই সভায় কমিউনিস্টেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়েছিল। নেপালের দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে প্রচণ্ড নাকি প্রধানমন্ত্রী ওলিকে সরাসরি হুমকি দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় রাজনৈতিক ভাবে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে নেপালে। ওলিপন্থীদের অভিযোগ, ওলির বিরুদ্ধে এ বার ভারতকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে ওলি-বিরোধীরা। রোববার ওলি নিজেই সেই অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ, ভারতের দূতাবাসও এই চক্রান্তে সামিল হয়েছে। কিন্তু কেউ তাকে এবং তার সরকারকে গদিচ্যূত করতে পারবে না। ওলির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সূত্র: ডয়চে ভেলে, দ্য হিন্দু।

 

 



 

Show all comments
  • Monjur Rashed ৩০ জুন, ২০২০, ৩:১৯ পিএম says : 0
    Courageous leader ----- please proceed with your vision.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত-নেপাল

১৫ আগস্ট, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ