Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার আরো অবনতি

লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

টানা বৃষ্টি আর ভারতের পানির ঢলে দেশের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বন্যা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে পাট, ভুট্টা, বাদাম ও সবজি ক্ষেতসহ আমন ধানের বীজতলা। বন্যার পানিতে পুকুর ডুবে বেরিয়ে গেছে মাছ। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস চাষিরা। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। করোনা মহামারিতে এমনিতেই মানুষ এখন অসহায়। এ অবস্থায় বন্যা কবলিত হয়ে তারা দিশেহারা।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে চলতি সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত পানি বেড়ে বন্যা আরও কয়েক জেলায় বিস্তৃত হবে। সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, সিলেট ও সুনামগঞ্জ এই আট জেলার আরও এলাকা প্লাবিত হবে। এর পাশাপাশি টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর এবং নেত্রকোণাসহ আরও কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা জানান, মাঝারি ধরনের এ বন্যা দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি আগামী ১০ দিন বাড়তে পারে। মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকূল পয়েন্ট এবং রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এসব জেলাতে বন্যার শঙ্কা আছে। এর প্রভাবে জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জ প্লাবিত হতে পারে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা সংবাদদাতা হাফিজুর রহমান সেলিম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমর, ফুলকুমরসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। সর্বশেষ কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ২১ হাজার পরিবারের মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গতকাল নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকাসহ বিভিন্ন এলাকা। বন্যার কারণে সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।

কয়েকদিনের পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে হঠাৎ করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে করে তিস্তা নদী বেষ্টিত থেতরাই, বজরা, দলদলিয়া, গুনাইগাছ ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, হাতিয়া, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বর্ষার শুরু থেকে নদীভাঙ্গন তীব্র রুপ ধারণ করায় ওই এলাকার শত শত বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বজরা ইউনিয়নের চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, রাস্তা-ঘাটসহ মসজিদ ও মন্দির। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল কাদের জানান, বন্যা মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক গতকাল উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে অবিরাম বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের পীরগাছায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে বন্যা দুর্গত মানুষজন। তিস্তা নদীর তীরবর্তী গাবুড়ার চর, শিবদের চর, কিশামত ছাওলা, পূর্ব হাগুরিয়া হাশিম, ছাওলা, চর কাশিম, শিবদেব, রহমতের চর, চর তাম্বুলপুর ও চর রহমত গ্রামের প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারের মানুষজনের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর জন্য গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা দুই দিনের বৃষ্টি আর ভারতের ঢলের ফলে তিস্তাসহ জেলার সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে আমন ধানের বীজতলার পাশাপাশি বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে বিভিন্ন পুকুরের মাছ বের হয়ে যাওয়ার ফলে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারতের ঢল সামাল দিতে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। তারপরও চরাঞ্চলে ১০ হাজার পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে গেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভারতের ঢলে ঠাকুরগাঁওয়ে সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। টাঙ্গন নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে। নিমজ্জিত হয়েছে পাট, ভুট্টা, সবজি ক্ষেত ও বীজতলা। ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে প্লাবিত এলাকার প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ তাদের পরিবার ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ