Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নকল সুরক্ষা সামগ্রীর উৎপাদন ও বিপণনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেসব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছে, তার অধিকাংশই নকল। এসব সামগ্রী নকল করে দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে এবং তা এখন ভয়াবহ সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর ফুটপাতসহ দেশের প্রায় সব এলকায় যত্রতত্র এসব নকল সুরক্ষা সামগ্রী অবাধে বিক্রি হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, এতে করোনা সংক্রমণ রোধ তো দূরের কথা, উল্টো সংক্রমণকে ত্বরান্বিত করছে। এই সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নিম্নমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের কারখানাও গড়ে উঠেছে। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা, শপিং সেন্টার, মার্কেটসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মানহীন এসব সামগ্রী বিক্রি না হচ্ছে। এসব সামগ্রী মানসম্পন্ন কিনা, তা যেমন বিক্রেতা জানে না, তেমনি ক্রেতাও জানে না। এর মান নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস, হেডক্যাপ, পিপিই, অক্সিমিটার, পোর্টেবল ভেন্টিলেটরসহ এ সংক্রান্ত যত ধরনের সামগ্রী আছে সবই এখন ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য এসব পণ্য এখন করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
নকল পণ্য বিক্রি আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে নিত্য প্রয়োজনীয়সহ প্রায় সব ধরণের পণ্য নকল হচ্ছে। এসব পণ্যের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। নকল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও আইনের ফাঁকফোকড় দিয়ে বের হয়ে পুনরায় উৎপাদন শুরু করে। এ এক অপ্রতিরোধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। করোনার মহাদুর্যোগে যখন মানুষ দিশেহারা এবং এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নানা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছে, তখন মানুষের এই চাহিদাকে পুঁজি করে নকল ও মানহীন সামগ্রী উৎপাদনের হিড়িক পড়েছে। চোখের সামনে এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকলেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এটি এখন মানুষের জীবন নিয়ে খেলায় রূপ লাভ করেছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফুটপাতসহ যত্রতত্র যেসব সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে, তার কোনোটি প্রতিরোধযোগ্য তো নয়ই, উল্টো সংক্রমণকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে শুরুতেই বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিলেও তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি, এখনও নিচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, করোনা সুরক্ষা সামগ্রী এখন দুইধারী তলোয়ারে পরিণত হয়েছে। একদিকে ব্যবহৃত সামগ্রী যত্রতত্র ফেলায় পরিবেশের মারাত্মক দূষণ হচ্ছে, অন্যদিকে করোনার বিস্তারকে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বলা যায়, দেশে এখন মানসম্পন্ন করোনা সুরক্ষা সামগ্রী নেই বললেই চলে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, দেশে এ পর্যন্ত যত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে, তার জন্য নিম্নমানের পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রীকেই দায়ী করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের যদি এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তবে সাধারণ মানুষের অবস্থা কি, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। করোনা সংক্রমণ রোধে যে মাস্ক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে, সেই মাস্কের স্ট্যান্ডার্ড কি তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। বলা হয়েছে, কেএন-৯৫ মাস্ক সবচেয়ে বেশি কার্যকর। দেখা যাচ্ছে, আসল এই মাস্কের অবিকল মাস্ক ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি নীল রংয়ের সার্জিক্যাল মাস্ক হিসেবে পরিচিত মাস্কও ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার লেবুর রস ও রং মিলিয়েও তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। পিপিই’র যে স্ট্যান্ডার্ড তারও কোনো নির্দিষ্টতা নেই। অর্থাৎ করোনার সুরক্ষা সামগ্রীর সবকিছুই এখন ফুটপাতকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। অথচ এসব সুরক্ষা সামগ্রী বিশেষায়িত এবং এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ফার্মেসি বা বিশেষ কোনো কেন্দ্রে বিক্রি করার কথা। যারা ফুটপাতে বিক্রি করছে, এগুলো সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। উৎপাদনকারিরা মানুষের চাহিদাকে মাথায় নিয়ে ব্যবসা করার নিমিত্তে যেমন খুশি তেমনভাবে উৎপাদন করছে, আর ফুটপাতের বিক্রেতা উপার্জনের জন্য তা বিক্রি করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এবং ফেলে দেয়া সামগ্রী সংগ্রহ করে ধুয়ে বিক্রি করছে। চিকিৎসাবিদরা মনে করছেন, যারা এসব মানহীন ও নকল সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদন করছে, তারা মানুষ হত্যার মতো অপরাধ করছে। এদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া জরুরি। তা নাহলে করোনার সংক্রমণ কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, করোনা থেকে মুক্তি লাভের জন্য মানুষ যখন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে দোয়া করছে, তখন একশ্রেণীর অর্থলিপসু, দুর্বৃত্ত ও মনুষত্ব বিবর্জিত মানুষ নকল ও মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। তারা মানবতার শত্রু তে পরিণত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে এখনই থামাতে হবে।
করোনার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন পরামর্শমূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলেও সুরক্ষা সামগ্রীর মান নিয়ে তেমন কোনো প্রচার করছে না। অথচ সবার আগে এসব সামগ্রীর মানের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা জরুরি। পাশাপাশি নকল সামগ্রী উৎপাদনকারির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা অপরিহার্য। এ কাজটি করতে পারলে, করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আমরা মনে করি, নকল সুরক্ষা সামগ্রী সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং তা ব্যবহার না করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পত্র-পত্রিকা এবং গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনসহ ব্যাপক প্রচারণামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সুরক্ষা সামগ্রীর মান কী হবে এবং কোথায় তা পাওয়া যাবে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে হবে। ফার্মেসি ও নির্দিষ্ট করে দেয়া দোকান ছাড়া এগুলো বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। মসজিদ ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। করোনার মতো দ্রুত সংক্রমণশীল ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সাধারণ মানুষকেও নিজের সুরক্ষার বিষয়টি আমলে নিয়ে সচেতন হতে হবে। যেখান সেখান থেকে সুরক্ষা কেনার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন