পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের প্রায় সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশের আট জেলা- সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে পাট, ভুট্টা, বাদাম ও সবজি ক্ষেতসহ আমন ধানের বীজতলা। বন্যার পানিতে পুকুর ডুবে বেরিয়ে গেছে মাছ। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য চাষিরা। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভেঙে গেছে চলনবিল রক্ষা বাঁধ। এতে ৩ লক্ষাধিক গবাদি পশু নিয়ে খামারিরা বিপাকে পড়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, যমুনার কিছু পয়েন্টে পানি ইতোমধ্যে বিপদসীমার ওপরে উঠে গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে কিছু এলাকার পানি বেড়ে গেছে। আগামী কয়েকদিনে পানি আরও বাড়বে। এ কারণে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যা কবলিত হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত পানি বেড়ে আট জেলার আরও অনেক এলাকা প্লাবিত হবে। এর পাশাপাশি টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর এবং নেত্রকোণাসহ আরও কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা জানান, মাঝারি ধরনের এ বন্যা দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।
টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পানির ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি গতকাল সকালেও বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুড়িগ্রামের চিলমারী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দ্রæতগতিতে পানি বৃিদ্ধ পাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি আগামী ১০ দিন বাড়তে পারে। মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যক‚ল পয়েন্ট এবং রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এসব জেলাতেও বন্যার শঙ্কা আছে। এর প্রভাবে জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জ প্লাবিত হতে পারে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, জেলার শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী থেকে তাড়াশের নিমাইচড়া পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চলনবিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। শাহজাদপুর উপজেলার রাউতারা সুইস গেট সংলগ্ন এলাকার ১ হাজার ২৫০ মিটার রিং বাঁধটি অবশেষে বন্যার পানির প্রবল চাপে ভেঙে গেছে। ফলে বৃহত্তর চলন বিলাঞ্চলের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটমোহর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, আত্রাই, রাণীনগর, শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এসব অঞ্চলের হাজার হাজার গো-খামারে (বাথান) লালন পালন করা প্রায় ৩ লক্ষাধিক গবাদিপশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে খামারিদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ-দুর্গতি পোহাতে হচ্ছে। দেশের দুগ্ধশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ চলনবিলাঞ্চলের খামারিরা তাদের গবাদিপশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় রোপিত উন্নতজাতের গো-খাদ্য (কাঁচা ঘাস) আকষ্মিক বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলে গো-খাদ্য কাঁচা ঘাসের তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় দেড় যুগ ধরে ফি বছরই ফসল রক্ষার নামে এই বালুর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে অস্থায়ীভাবে এ বাঁধ নির্মাণ ব্যয় ৯৯ লাখ টাকা হলেও গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যয় বেড়ে প্রায় দেড় কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার হরিলুট হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম স্থানীয়দের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ কাজে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। সিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়েছে। এ বাঁধের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ৩১ মে পর্যন্ত। এ অঞ্চলের জমি থেকে সব ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। ফলে বাঁধটি ভেঙে গেলেও কৃষকের কোন ক্ষতি হয়নি।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ৯৫৫ হেক্টর জমির পাট, ৩৭১ হেক্টর তিল, ১০ হেক্টর ভুট্টা, ৫৫ হেক্টর আউশ, ২৩ হেক্টর সবজি, ১৭ হেক্টর কাউন, ৭৮ হেক্টর জমির আখ মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকের ৫০ শতাংশ ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া যমুনার পানি বৃদ্ধিতে টাঙ্গাইল জেলার নগরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলায় নদী ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৮ সেমিন্টমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়াও অন্যান্য নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগাম বন্যার ফলে চরাঞ্চলের আবাদি ফসলাদি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে পাট, ভুট্টা, কাউন, তিল, চিনা বাদাম ও সবজিক্ষেত। এ পর্যন্ত কুড়িগ্রাম সদর ও রৌমারী উপজেলায় ৩৭ হেক্টর আউশ, ৯৩ হেক্টর তিল এবং ৬ হেক্টর মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, এ মাসের শেষে ব্রহ্মপুত্র নদে আরোও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা দুই দিনের বৃষ্টি আর ভারতের ঢলের ফলে তিস্তাসহ জেলার সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে আমন ধানের বীজতলার পাশাপাশি বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে বিভিন্ন পুকুরের মাছ বের হয়ে যাওয়ার ফলে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারতের ঢল সামাল দিতে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। তারপরও চরাঞ্চলে ১০ হাজার পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে গেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভারতের ঢলে ঠাকুরগাঁওয়ে সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। টাঙ্গন নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে। নিমজ্জিত হয়েছে পাট, ভুট্টা, সবজি ক্ষেত ও বীজতলা। ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে প্লাবিত এলাকার প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ তাদের পরিবার ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।