পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সরকার খুতবা নিয়ন্ত্রণ করছে না। সংসদ নেত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন এমপির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরবী খুতবা যা অতীত থেকে চলে এসেছে তাতে হাত দেয়ার বা নতুন করে খুতবা তৈরির কোনো উদ্যোগ সরকার নেয়নি। খুতবার কয়েকটি স্তর রয়েছে। খুতবা-পূর্ব বয়ানে আলোচনার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী নির্দেশনামূলক আয়াত ও নবী করীম সা:-এর হাদীস থেকে কিছু উদ্ধৃতি একটি পুস্তিকা আকারে ছাপা হয়েছে। এটি সংক্ষেপে লিফলেট আকারেও প্রকাশ করা হয়। এসব মসজিদে পাঠানো হয় যেন ইমাম সাহেবগণ নিজেদের বয়ানে অন্যান্য উদ্ধৃতির পাশাপাশি এসব আয়াত ও হাদীস কালামও বর্ণনা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে অনেকটাই স্বস্তি দেখা দিয়েছে। গুলশান ও শোলাকিয়া ঘটনার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির একক সিদ্ধান্তে সারাদেশে ইমাম, খতিব ও আলেম-উলামার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। লাখো মসজিদে ইফা রচিত খুতবা আকারের কাগজ প্রেরণ করা হয়। রাজনৈতিক লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের পরোক্ষ চাপের মুখে এমন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় যে, কোনো ইমাম কাগজটি পাঠ বা অনুসরণ না করলে তাকে অপমানিত, লাঞ্ছিত, বহিষ্কার, গ্রেফতার ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হবে। ইফা ডিজি মিডিয়াকে বলেছিলেন, একটি খুতবা পাঠানো হলো, আগামী তিন সপ্তাহের খুতবাও একসাথে যাবে এবং এরপর সারাবছর পাঠ করার জন্য খুতবার নতুন বই পাঠানো হবে। একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সমাবেশে বক্তৃতায় বলেছেন, সরকারের তৈরি খুতবা অনুসরণ না করলে ইমামদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ পর্যায়ে দেশের নানা জায়গায় ইমামদের মারধর, বরখাস্ত, গ্রেফতার ও সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে। হেফাজতে ইসলাম সরকারি খুতবা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। ইসলামী আন্দোলনসহ বড় বড় ধর্মীয় সংগঠন গ্রেফতারকৃত ইমামদের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি, মিটিং-মিছিলের কর্মসূচি দেয়। ইমাম-খতিবদের বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে ভুলেভরা ও অগ্রহণযোগ্য এসব খুতবা বাধ্যতামূলক না করার আহ্বান জানায়।
এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ধর্মবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এর সদস্য এমপিগণ একক সিদ্ধান্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক জুমার খুতবা তৈরি ও প্রেরণের নিন্দা জানান। তারা প্রস্তাব করেন, দেশের সব ঘরানার যোগ্য আলেম ও আরবীবিদদের সমন্বয়ে ইফার ব্যবস্থাপনায় খুতবা তৈরির উদ্যোগ নেয়ার। শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদের সংগঠন জমিয়তুল উলামা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় এবং খুতবা তৈরিতে সরকারকে সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এর প্রেক্ষিতে দেশের সর্বস্তরের ইমাম, খতিব ও আলেমগণ আবারও উদ্বিগ্ন হন। তারা মন্তব্য করেন, সরকারি উদ্যোগে বিতর্কিত লোকজনের সহায়তা ও বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় টাইপের ডিজির সমন্বয়ে যদি লাখ লাখ মসজিদের জন্য খুতবা প্রণয়ন করা হয়, তাহলে এ দেশে ইসলাম ও মুসলমানের স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃতি এবং বিনাশ কেউ ফেরাতে পারবে না। দেশের বরেণ্য আলেমরা মত দিয়েছিলেন, হাজার বছরের ধর্মীয় ইবাদত জুমা ও খুতবায় হস্তক্ষেপ করার মতো মারাত্মক একটি কাজ সরকারের নাম ভাঙিয়ে যে বা যারা করতে যাচ্ছে তাদের এ অন্যায় কাজটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী কি অবহিত আছেন? যেখানে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষয়টি জানত না এবং তারা এ পর্যন্ত ইসলামী অঙ্গনে ধর্মদ্রোহী অপশক্তির ইঙ্গিতে উদ্ধৃত প্রতিটি ফিতনা, অশান্তি ও বিতর্কের মূল ক্রীড়নক ইফা ডিজির একক সিদ্ধান্তে খুতবা সঙ্কট সৃষ্টি এবং দেশে ইমাম, খতিব উৎপীড়ন ঘটনার নিন্দা করে সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত না করেও যে কোনো অন্যায় সিদ্ধান্ত জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার মতো কাজ এ নিত্য অঘটন ঘটন পটু আমলার পক্ষে করা মোটেও অসম্ভব নয়। বুধবার সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় এ বিষয়টিই স্পষ্ট হয়েছে। এতে আলেমগণ কিছুটা হলেও স্বস্তি লাভ করেছেন। তারা বুঝেছেন, খুতবা-পূর্ব বাংলা বয়ানে জরুরি কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধই ছিল সরকারের কাম্য। খুতবা তৈরি, প্রেরণ বা তা পাঠ করা বাধ্যতামূলক করা নয়। লাঞ্ছনা, মারধর, বরখাস্ত বা গ্রেফতার হয়রানি তো অবশ্যই নয়। এ পর্যায়ে আলেমরা গ্রেফতারকৃত ও বহিষ্কৃৃত ইমামদের মুক্তি এবং পুনর্বহালের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এতটা যাচ্ছেতাই বা সমন্বয়হীনতা শোভনীয় নয়। শুরু থেকেই ধর্ম মন্ত্রণালয়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও পাশ কাটিয়ে ইফা ডিজি একক চিন্তা ও সিদ্ধান্তে বহুবার ইসলামী অঙ্গনে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়েছেন। দেশের সব পর্যায়ের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ এ বিষয়ে হাজারবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সরকার এ আপদ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। যারা শুভানুধ্যায়ী হিসেবে সরকারকে দীনি বিষয়ে যথার্থ পরামর্শ ও সহায়তা দিতে চেয়েছেন তাদের সবাইকে এ ব্যক্তিটির অবিমৃশ্যকারিতার ফলে দূরে সরে থাকতে হয়েছে। সর্বশেষ খুতবা নিয়ে দেশবাসীকে চরম উদ্বিগ্ন ও হেনস্থা করার মধ্য দিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা, সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতার গায়ে মারাত্মক ধস নামিয়ে দিয়েও কি এ ব্যক্তি ক্ষান্ত হবে, নাকি গোটা বিষয়কে টেনে আরো লম্বা করে শেষ পর্যন্ত পচিয়ে ছাড়বে তা কে জানে? অথচ খুতবা বা বয়ানে কী বলা হবে তা আলেমগণই ভালো জানেন। তাদের কিছু আয়াত, হাদীস কালাম উদ্ধৃত করে লিফলেট বা পুস্তিকা বানিয়ে পৌঁছে দেয়ার দরকার যেমন নেই, তেমনি তারা কী বললেন না বললেন তা পাহারা দেয়ার জন্য লোকজন লাগিয়ে দেয়ারও কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সরকার প্রয়োজন মনে করলে আলোচ্য বিষয় বলে ইমাম ও খতিব সাহেবদের কখনো কখনো অনুরোধ জানাতে পারে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন মনে করলে প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন, সংস্থা, ব্যক্তিত্ব বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের আলেম-উলামাদের সমবেত করে সরাসরি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যুতে সহায়তা চাইতে পারেন, তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু ভুল লোক, ভুল পদ্ধতি বা ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে ভুল বোঝাবুঝিই কেবল সৃষ্টি হতে পারে। বাড়তে পারে অহেতুক দূরত্ব। সংযোগ বৈকল্য ফাটল সৃষ্টি করতে পারে, যার প্রতিবিধান প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে। সংসদে প্রদত্ত তার ব্যাখ্যায় যেমন অনেক বিভ্রান্তি ও উৎকণ্ঠা কেটে গেছে, তার সময়োচিত সিদ্ধান্ত গোটা দৃশ্যপটও বদলে দিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।