পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রবার্ট ক্লাইভ (১৭২৫-১৭৭৪ খ্রি.) ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ ও ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘটিত পলাশী যুদ্ধে বিজয়ী ইংরেজ সেনাপতি। উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম স্থপতি। আয়ারল্যান্ডের একটি মাঝারি জমিদার পরিবারের সন্তান রবার্ট ক্লাইভ। আঠারো বছর বয়সে প্রথমে তিনি মাদ্রাজে ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির চাকরিতে যোগ দেন। পরে ১৭৪৮ সালে কোম্পানির মাদ্রাজ সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং দ্রুতই একজন দক্ষ সমরকর্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। কর্ণাট যুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্ব এবং দাক্ষিণাত্যে তাঁর অব্যাহত সামরিক সাফল্য তাঁকে ইতিহাসের পাদপ্রদীপের আলোতে নিয়ে আসে। ১৭৫৩ সাল তিনি দেশে ফিরে গেলে তাঁকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং কোম্পানির কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স তাঁকে ‘জেনারেল ক্লাইভ’ উপাধিসহ একটি রত্নখচিত তরবারি উপহার দিয়ে সম্মানিত করে।
১৭৫৬ সালে নবাব আলিবর্দী খান মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মনোনীত উত্তরাধিকারী দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলাহ বাংলার মসনদে আরোহণ করেন। সিরাজ ছিলেন বয়সে তরুণ এবং একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি নিজেকে চারদিক থেকেই শত্রু পরিবেষ্টিত দেখতে পান। তাঁর প্রতিপক্ষের মধ্যে অন্যতম ও প্রভাবশালী ছিল ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সমকালীন ব্রিটিশ ও ভারতীয় এমনকি, আধুনিককালেও ঐতিহাসিকদের অনেকেই ইংরেজদের সাথে বিরোধ ও সংঘর্ষের জন্য সিরাজকেই দায়ী করেছেন। কারো কারো মতে, মনস্তাত্তি¡কভাবে সিরাজ-উদ-দৌলাহ ইংরেজ বিদ্বেষী ছিলেন এবং এদেশ থেকে ইংরেজদের বহিষ্কার করা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কেউ কেউ মনে করেন, সিরাজ-উদ-দৌলাহর আত্মম্ভরিতা, অর্থলিপ্সাই ইংরেজদের সাথে তাঁর সংঘর্ষের মুখ্য কারণ। এসব অভিযোগের কোনোটিই যে সত্য নয় সমসাময়িক ইংরেজ, ফরাসি এবং ডাচ কোম্পানির দলিল-দস্তাবেজ বিচার-বিশ্লেষণ করে বর্তমান ইতিহাসবিদদের অনেকের গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে। মসনদে আরোহণের পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ ইংরেজদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তবে তিনি তাদের সবরকমের সুযোগ-সুবিধা দেবেন। অন্যথায় তাদের এদেশ থেকে বহিষ্কার করাই হবে তাঁর একমাত্র নীতি। একজন সার্বভৌম নৃপতি হিসেবে নবাবের এ ধরনের অবস্থান নিঃসন্দেহে যৌক্তিক ও প্রশংসনীয়। তবে কোম্পানি নবাবের এ আহবানে সাড়া দেয়নি, বরং তার বাণিজ্য পরিচালনায় আইনের সীমা লংঘনসহ নিজস্ব নিরাপত্তার নামে নবাবী কর্তৃত্বের প্রতি উপেক্ষা-উপহাস এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও প্রশাসনে হস্তক্ষেপের মতো গর্হিত কাজ অব্যাহত রাখে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নবাব ইংরেজদের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কূটনৈতিক প্রয়াস চালান। তবে কোম্পানির কলকাতার গভর্নর ড্রেকের অনমনীয় ও যুদ্ধংদেহী মনোভাবের জন্য তা ব্যর্থ হয়। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়েই নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ ইংরেজদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রথমে ইংরেজদের কাশিমবাজার দুর্গ দখল করা হয়। এরপর নবাবী ফৌজ ১৭৫৬ সালের ২০ জুন কলকাতার ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করে।
বাংলার ইতিহাসের উপর্যুক্ত চলমান ঘটনা প্রবাহের মধ্যে ১৭৫৫ সালে রবার্ট ক্লাইভ আবার মাদ্রাজে ফিরে আসেন। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ কর্তৃক ইংরেজদের কলকাতা কুঠি দখলের সংবাদ মাদ্রাজে পৌঁছলে মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ কলকাতার দুর্গ পুনর্দখল ও বিপদগ্রস্ত ইংরেজদের উদ্ধারের জন্য রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে নৌপথে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। এডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে একটি সাহায্যকারী নৌবাহিনী ক্লাইভের সাথে যোগ দেয় এবং তাঁদের যৌথ নেতৃত্বে ১৭৫৭ সালের ২ জানুয়ারি ইংরেজরা কলকাতা পুনর্দখল করে নেয়। কলকাতায় নিযুক্ত নবাবের ফৌজদার মানিকচাঁদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং সময়োচিত ব্যবস্থা না গ্রহণ করায় ক্লাইভ সহজেই কলকাতা দখলে সফল হন। কলকাতা পুনরুদ্ধারের ঘটনা মানিকচাঁদ যথাসময়ে নবাবকে অবহিত করেননি। ১৭৫৭ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় এ সংবাদ পেয়ে নবাব হতবাক হয়ে যান। এ অবস্থায় নবাব ইংরেজদের সমুচিত শাস্তি দানের লক্ষ্যে কলকাতা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলেও কুচক্রী জগৎশেঠ, মীরজাফর, খোজা ওয়াজিদ, রায় দুর্লভ প্রমুখ দরবারের প্রধান অভিজাতদের পরামর্শে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইংরেজদের সাথে সমঝোতা করেন। ফল হিসেবে ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির সাথে নবাবের অবমাননাকর আলিনগরের চুক্তি সম্পাদিত হয়।
কলকাতা পুনর্দখল ও নিজেদের স্বার্থনুকূল আলিনগর সন্ধি সম্পাদনে সাফল্য রবার্ট ক্লাইভের জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দেয়। তাঁর সাফল্যে সন্তুষ্ট হয়ে কোম্পানির মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ ক্লাইভকে কলকাতায় কোম্পানির গভর্নর নিয়োগ করেন। উচ্চাভিলাষী ও ধূর্ত ক্লাইভ এবার বাংলা থেকে তাঁদের প্রতিপক্ষ ফরাসি বণিক কোম্পানিকে বিতাড়িত করেন। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ এতে বাধা দেয়ায় নবাবের সাথেও তিনি চূড়ান্ত নিস্পত্তির সিদ্ধান্ত নেন। ক্লাইভ বুঝেছিলেন যে, বাংলায় কোম্পানির বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব সম্প্রসারণে প্রধান বাধা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ। তাই তিনি তাঁকে অপসারণ করে নিজেদের স্বার্থনকূল একজনকে বাংলার মসনদে সমাসীন করার সিদ্ধান্ত নেন। এব্যাপারে তিনি কোম্পানির কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করেন। ক্লাইভ উপলব্ধি করেছিলেন যে, কোম্পানির বিদ্যমান সামরিক শক্তি দিয়ে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহকে উৎখাত করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি বাঁকা পথে অগ্রসর হন। মুর্শিদাবাদ দরবার ও রাজনীতিতে জগৎশেঠ ও মীরজাফর গং এর নেতৃত্বে সিরাজ বিরোধী যে ষড়যন্ত্রী দলের উদ্ভব হয়েছিল, চতুর ক্লাইভ প্রলোভন ও কূটকৌশলে তাঁদের সাথে আঁতাত গড়ে তোলেন। এ আঁতাতের চূড়ান্ত পরিণতি হলো ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধ নামক এক প্রহসনের। এ যুদ্ধে সিরাজ-উদ-দৌলাহ সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হন এবং পরবর্তীকালে মীরজাফরের পুত্র মীরণ কর্তৃক বন্দি ও ৩ জুলাই নিহত হন। মীরজাফরকে সিরাজ-উদ-দৌলাহর স্থলাভিষিক্ত করা হয়। মীরজাফর পুতুল নবাব হিসেবে ইতিহাসে ‘ক্লাইভের গাধা’ উপাধিতে পরিচিতি লাভ করেন।
রবার্ট ক্লাইভ কোর্ট অব ডাইরেক্টর্সকে লেখা পত্রে ফরাসিদের বিতাড়িত করা ও পলাশী যুদ্ধে বিজয়কে তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব বলে উল্লেখ করেছেন। এ বক্তব্য অবশ্যই সঠিক। কারণ মাদ্রাজে ধারাবাহিক বিজয় তাঁকে খ্যাতিমান করেছিল, কিন্তু সম্পদশালী করেনি। কিন্তু বাংলায় তিনি খ্যাতির সঙ্গে পর্যাপ্ত ধনসম্পদ লাভ করেন। একই সাথে তিনি ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের সূচনাকারীর গৌরবও অর্জন করেন। ১৭৬০ সালে অবসর গ্রহণ করে ক্লাইভ দেশে ফিরে যান। ১৭৬২ সালে তাঁকে Baron Clive of Plessey উপাধি দিয়ে আইরিশ অভিজাতমন্ডলীতে উন্নীত করা হয়। তা ছাড়াও ১৭৬৪ সালে তাঁকে Knight of the Order of the Bath উপাধি দেয়া হয়। শ্রুসবেরির মেয়র নির্বাচিত হন। ক্লাইভ যদিও গ্রাজুয়েট ছিলেন না, তবু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে Doctor of Civil Law ডিগ্রি দ্বারা সম্মানিত করে।
১৭৬৫ সালে রবার্ট ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন। এ পর্যায়ে তিনি এলাহাবাদ চুক্তির মাধ্যমে খেতাবসর্বস্ব মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে বার্ষিক নিয়মিত ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ানি নিশ্চিত করেন। সম্রাট তাঁকে ‘দিলার জং’, ‘সাইফ জং’, ‘মামিরুল মামালিক’, ‘সাবদাতুল মুলক’ ইত্যাদি এক গুচ্ছ উপাধি দ্বারাও সম্মানিত করেন। এবার ক্লাইভ কেবল পুলিশ ও বেসামরিক শাসনভার নামমাত্র নবাবের হাতে রেখে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। ক্লাইভের এই ব্যবস্থাকে ইতিহাসে ‘দ্বৈতশাসন’ বলা হয়।
১৭৬৭ সালে ক্লাইভ ইংল্যান্ড ফিরে যান। কিন্তু ভারতে রেখে যান ঘুষ, দুর্নীতি, স¤পদ আত্মসাৎ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, দুর্বৃত্তায়ন আর অপরাজনীতির এক ঘৃণ্য ইতিহাস। তিনি কিছু দিন প্যারিসেও বাস করেন। তারপর আবার দেশে ফিরে আসেন। এ সময় তাঁকে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত করা হয়। এদিকে ১৭৭০ সালে (বাংলা ১১৭৬) বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইতিহাসে এটি ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত। এতে বাংলার এক-তৃতীয়াংশ লোকের করুণ মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় খোদ ইংল্যান্ডে হৈ চৈ পড়ে যায়। ক্লাইভ এবং কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতি ও পার্লামেন্ট উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তদন্তে ভারতে ক্লাইভের অপশাসন, দুর্নীতি, লুণ্ঠনের বিস্ময়কর কাহিনী বের হয়ে আসে। আত্মসম্মান রক্ষার্থে অর্জিত সব সম্পদের বিনিময়ে তদন্ত বন্ধ করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ক্লাইভ। অবশেষে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর লন্ডনের ব্র্যাকলি স্কয়ারের নিজ বাড়িতে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ক্লাইভ আত্মহত্যা করেন। তিনি কোনও সুইসাইড নোট লিখে না যাওয়ায় তাঁর আত্মহত্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। ইতিহাসবিদ স্যামুয়েল জনসন লিখেছেন, ‘(ক্লাইভ) এমন সব অপরাধের মাধ্যমে তাঁর ভাগ্য গড়ে তুলেছিলেন, যেগুলো সম্পর্কে তাঁর চৈতন্য শেষমেশ তাঁকে নিজের গলা কাটতে বাধ্য করেছিল।’ তাঁর আত্মহত্যা সম্পর্কে এটিই বহুল প্রচারিত মত। তাঁকে রাতের অন্ধকারে গোপনে সমাহিত করা হয়েছিল এবং তাঁর কবরে পরিচিতিমূলক কোনও ফলক বা চিহ্নও রাখা হয়নি।
রবার্ট ক্লাইভ ইতিহাসে এক চরম বিতর্কিত চরিত্র। উপমহাদেশের মানুষের কাছে তিনি এক বিয়োগান্তক কাহিনীর প্রণেতা, এক মূর্তিমান শয়তান। অন্যদিকে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবে এক সময় স্বদেশবাসীর কাছে তিনি বীর হিসেবে সম্মান লাভ করেছিলেন। স্যাক্সন যুগে স্থাপিত ইংল্যান্ডের ছোট্ট শহর শ্রুসবেরি ও ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র হোয়াইট হলের সামনে স্থাপন করা হয়েছিল রবার্ট ক্লাইভের দু’টি ভাস্কর্য। কিন্তু ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাইভ শেষ পর্যন্ত নিজ দেশেই আসামির কাঠগড়ায় দন্ডায়মান। উপমহাদেশের মানুষ এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চিন্তাশীল মানবতাবদীদের কাছে তিনি বরাবরই একজন খলনায়ক। সময়ের আবর্তে তিনি নিজ দেশেও উপনিবেশবাদের মূর্ত প্রতীক ও চরমভাবে ঘৃণ্য। ক্লাইভ উপমহাদেশের মানুষের জন্য অত্যাচারের প্রতীক। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর বিশ্বে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের যে উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে, ইংল্যান্ডে এর প্লাবন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই রবার্ট ক্লাইভের মূর্তি অপসারণের দাবি উঠেছে। আওয়াজ উঠেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিটিও প্রত্যাহারের। এ দাবি জানানোদের মধ্যে যেমন আছেন সাধারণ মানুষ, তেমনি ব্রিটেনের অনেক বিখ্যাত লেখক ও ইতিহাসবিদ। বিখ্যাত হোয়াইট মুঘলস এবং দ্য অ্যানার্কি: দ্য রিলেন্টলেস রাইজ অব দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গ্রন্থের লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পলও এদের একজন। দ্যা গির্ডিয়ান পত্রিকায় লেখা এক নিবন্ধে ব্রিটিশ সরকারের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কীভাবে ক্লাইভের মতো লোকের মূর্তি এখনো আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, “ক্লাইভ এমন কোন ব্যক্তি নন, যাকে আমাদের এই যুগে সম্মান জানানো উচিৎ।--- এখন সময় এসেছে এই মূর্তিটিও যাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়ার।--- কেবল এই কাজ করার মাধ্যমেই আমরা শেষ পর্যন্ত আমাদের অতীত কৃতকর্মের মুখোমুখি হতে পারবো এবং যতকিছুর জন্য আমাদের ক্ষমা চাওয়া দরকার, সেই ক্ষমা চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো। তারপরই এই সাম্রাজ্যবাদী অতীতের ভারী বোঝা থেকে মুক্ত হয়ে আমরা সামনে আগাতে পারবো।’
ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তবে ইতিহাস কাউকে ক্ষমাও করে না। পলাশী নামক প্রহসনের যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহর পরাজয় ও তাঁর হত্যাকান্ডের পর, তাঁকে ইতিহাসে খলনায়ক হিসেবে চিত্রিত করার দেশি-বিদেশি অনেক চক্রান্ত হয়েছে এবং এখনও চলছে। তবে ঐতিহাসিক সত্যকে কখনও চাপা দিয়ে রাখা যায় না। সময়ের পরিক্রমায় ইতিহাসে সত্য উদ্ভাসিত হয়। এ ক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। তাই পলাশীর প্রায় পৌনে তিন’শ বছর পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ আজও ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে স্বমহিমায় ভাস্বর। অন্যদিক রবার্ট ক্লাইভ ও তাঁর এদেশীয় দোসর মীর জাফর ও জগৎশেঠ গং ইতিহাসের ঘৃণ্য খলনায়ক। এটিই ইতিহাসের শিক্ষা।
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢা.বি.
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।