পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী ঢাকার পানি নিকাশ ব্যবস্থা এতটাই বেহাল দশায় উপনীত হয়েছে যে, সামান্য বৃষ্টিতেই সর্বত্র পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নগরীর অধিবাসীদের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। গত কয়েক বছর ধরেই এটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর আগে ভারি বৃষ্টিপাত হলে নগরীর চিহ্নিত কয়েকটি এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দিত এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানি সরেও যেতো। কিন্তু এখন পানিবদ্ধতা সাধারণ উপসর্গ পরিণত হয়েছে এবং পানি সরে যাওয়ার সময়ও বেড়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যে-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা বলার মতো নয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, এই বৃষ্টিপাতেই ডিএন্ডডি বাঁধ এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের কষ্ট-দুর্ভোগ অকথ্য। বর্ষার প্রারম্ভকালেই যদি এরকম পরিস্থিতি হয়, তবে ভরা বর্ষায় কী হবে, সহজেই অনুমান করা যায়। এবার সারাদেশে বড় রকমের বন্যার আশংকা করা হচ্ছে। আলামত দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের বন্যা’৮৮ সালের সেই ভয়াবহ বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে ভারতের ঠেলে দেয়া পানিতে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে, মধ্যঞ্চলেও খুব শিগগির বন্যাক্রান্ত হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ’৮৮ সালের বন্যার সময় রাজধানীর অবস্থা কতটা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল, অনেকেরই তা অজানা নেই। পুরো নগরী দিনের পর দিন পানিতে ডুবে ছিল। পানি সরার কোনো নাম ছিল না। চারপাশের নদীগুলো পানিতে এতটাই ভরপুর ছিল যে, পানি সরানোর কোনো উপায় ছিলনা। নদীর পানি উপচে ভেতরে প্রবেশ করায় বরং পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এবার দেশজুড়ে বড় বন্যা হলে রাজধানীর অবস্থা যে আরো করুণ ও শোচনীয় হয়ে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। বিগত ৩ দশকেরও বেশি সময়ে রাজধানীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। নগরীর আয়োতন বেড়েছে; সেই তুলনায় নর্দমার পরিধি বাড়েনি। বিদ্যমান নর্দমার একটা বড় অংশ ভরাট হয়ে গেছে। নিয়মিত ময়লা তোলা হয়নি। নগরীতে প্রবাহমান খালের অস্তিত্ব এখন আর দেখা যায় না। অনেক খাল বা তার অংশ বিশেষ দখল হয়ে গেছে। অনেক খালের নাম-নিশানা পর্যন্ত নেই। যেসব খাল এখনো দখলের বাইরে আছে, তারা ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত চার নদী নির্বিচার দখলের শিকার, দূষণে বিষাক্ত। নাব্যতা কমতে কমতে এরকম অবস্থা হয়েছে যে, নদীগুলোর বিভিন্ন অংশে শুকনার সময় ছোটখাটো নৌযান পর্যন্ত চলতে পারেনা। ঢাকা ওয়াসার তথ্যমতে, রাজধানীর পানি নিকাশিত হয় তার আওতাধীন ৩৮৫ কিলোমিটার বড় নর্দমা ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট এবং প্রায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘের ২৬টি খাল দিয়ে। এবার সংস্থাটির তরফে ২৪টি খাল (৪৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার), ৭ কিলোমিটার বক্স কালর্ভাট ও ৩০০ কিলোমিটার, নর্দমা পরিষ্কারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই লক্ষ্যমাত্রার কতটা অর্জিত হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। ড্রেনেজ সার্কেলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, বেশির নর্দমা পরিষ্কার করা হয়েছে, তবে খাল পরিষ্কার বা খনন করা হয়নি। এখাতে কোনো বরাদ্দ নেই। অন্য একটা প্রকল্পের মাধ্যমে খাল রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনিজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ খাল উন্নয়ন প্রকল্প’, নামের একটি প্রকল্পের কথা জানা যায়, যা পাশ হয়েছে ২০১৮ সালের মে মাসে। ৫৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় আছে ১৬টি খাল। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। ওদিকে ঢাকার চার নদী দখল ও দূষণ মুক্ত এবং নাব্য করার উদ্যোগ- আয়োজনের খবর তেমন একটা নেই। এই চার নদী রাজধানীর নিকাশিত পানির গন্তব্যস্থল।
পানি নিকাশ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা ওয়াসার সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা যে অনেক বেশী, পানিবদ্ধ রাজধানীর চিত্র ও গণদুর্ভোগই তার প্রমাণ। অন্যান্য বার তেমন কোনো অজুহাত থাকে না। তা সত্তে¡ও কাজকর্ম তেমন একটা হয় না। এবার করোনা একটা মস্তবড় অজুহাত। ফলে, গত কয়েক মাসে নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কার হয়নি বললেই বলা চলে। করোনার দোহাই দিয়ে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব অসমাপ্ত কাজ শেষ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনার বিরূপ প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হলেও অর্থনীতিতে এর প্রভাব সবচেয়ে গুরুতর। কৃষি, শিল্প, ব্যবস্থা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান রাজস্ব আহরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মহামন্দা দ্রুত ঘনিয়ে আসছে, সেটা স্পষ্ট। ‘সিপিডির বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেছেন, সরকার যেভাবে চলছে তাতে ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন দিতে হবে। পরিস্থিতি কতটা নাজুক ও আশংকাজনক, এই মন্তব্য থেকেই সেটা আন্দাজ করা যায়। করোনাসৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় আমাদের এখনই উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। করোনাকে সাথে নিয়েই এটা করতে হবে। বিনিয়োগে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিনিয়োগ হলে উৎপাদন, রফতানি ও কর্মসংস্থান হবে। করোনাকারণে ১ কোটি ৩০ লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে যে আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে, তা মোকাবিলার জন্য বিপুল বিনিয়োগ ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের বিকল্প নেই। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধারণ করে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ও ব্রতী হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।