পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবল বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারত ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দিয়েছে। এতে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা এবং মনু নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। গতকাল লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।
সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী ও মনু নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণার হাওর অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীর পানিও বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে জামালপুর জেলার অনেক নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙনের ফলে বসতভিটা-জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার।
এদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির ফলে পার্বত্য অঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে পাহাড় ধসের শঙ্কাও রয়েছে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ার ফলে উজানে ভারতে আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে বর্ষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এতে সেখানে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত তাই ফারাক্কা এবং গজলডোবা বাঁধের সব কটি গেট খুলে দিয়েছে। এতে ভারত থেকে বানের পানি ভাটির দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশে নেমে আসায় এবং বৃষ্টিপ্রাতও বেশি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে দেশে মৌসুমী বায়ু এখনো সক্রিয় রয়েছে। এতে আরও দু’দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এমন বৃষ্টির ধারা ঝরতেই থাকলে স্বাভাবিকভাবেই নদ নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে আগামী সপ্তাহে দেশের বন্যাপরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙনও দেখা দিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি ১২ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা (১৩ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার) অতিক্রম করতে পারে। এদিকে, পানি বাড়ায় জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের পাট, বাদাম, তিলসহ বিভিন্ন ফসলি জমিগুলো তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল।
এদিকে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা আবারো ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে চিরচেনা রূপ। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মুহিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।তবে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি এবার বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখা।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় কমে গিয়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা হাফিজুর রহমান সেলিম জানান, উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গত কয়েকদিনের নদী ভাঙ্গনে বসতভিটার পাশাপাশি ফসলি জমিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে থেতরাই ইউনিয়নের দড়ি কিশোরপুর, নগর পাড়া, হোকডাঙ্গা গ্রামের মাস্টারপাড়া, মাঝিপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, দালালী পাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।