মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ধূসর পাহাড় আর বরফ ঢাকা শৈল চ‚ড়া। লাদাখের এই ল্যান্ডস্কেপের মধ্য দিয়েই বয়ে চলেছে গালওয়ান নদী। যার উৎস কারাকোরাম পর্বতমালার পূর্ব অংশ। আকসাই চীন পেরিয়ে লাদাখের ওপর দিয়ে গিয়ে শিয়ক নদীতে মিশেছে সেই ধারা। এই গতিপথের মধ্যেই আঁকা হয়েছে ভারত এবং চীনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)। স¤প্রতি দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সীমান্ত সঙ্ঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পূর্ব লাদাখের এই গালওয়ান উপত্যকা। কিন্তু এই গালওয়ান নদী ও উপত্যকার রুক্ষ ভ‚গোলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভিন্ন স্বাদের এক ইতিহাস।
নয়াদিল্লি ও বেজিং দু’পক্ষের কাছেই স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এই গালওয়ান উপত্যকা। পৃথিবীর উচ্চতম সীমান্ত এলাকাগুলির অন্যতম এই এলাকা। আর সে কারণেই ভ‚রাজনৈতিক দিক থেকে এই এলাকার গুরুত্ব ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। গত বেশ কয়েক দিন ধরেই গালওয়ান উপত্যকায় মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে ভারত এবং চীনের সেনা। সেনা স্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকেও দু’পক্ষের সম্পর্কের বরফ গলেনি। সোমবার রাতে এই উপত্যকাতেই সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী। তার পর থেকেই গালওয়ান উপত্যকার নাম উঠে আসছে বার বার।
সোয়া শো বছর আগে গালওয়ান উপত্যকার নামকরণ করা হয়েছিল লাদাখেরই কিংবদন্তী অভিযাত্রী গুলাম রসুল গালওয়ানের নামে। লাদাখ এবং আশপাশের এলাকা ছিল তার নখদর্পণে। আত্মজীবনী ‘সার্ভেন্টস অব সাহিবস’ বইতে একাধিক রোমহর্ষক অভিযানের কথা লিখেছেন গুলাম রসুল গালওয়ান। হিমালয়ের তিব্বত বা ইয়ারখন্দে নানা অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন গুলাম রসুল। তারই নানা কাহিনী ধরা রয়েছে ওই বইতে। পাহাড়-পর্বতে নিত্যনতুন অভিযানে গুলাম রসুলের হাতেখড়ি মাত্র ১২ বছর বয়সে। পরিবারের অবস্থা হতদরিদ্র। তাই ওই বয়সেই স্যার ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ডের দলে কুলি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন রসুল। ১৮৯২-তে চার্লস মারে (সেভেন্থ আর্ল অব ডানমোর) এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট কর্নেলের সঙ্গে পামির অভিযানে বেরিয়ে পড়েন গুলাম রসুল। আর গালওয়ান নদীর নামকরণের কাহিনির সূত্রপাত সেই অভিযান দিয়েই। তখন গুলাম রসুলের বয়স মাত্র ১৪। পথ তো নয় আকসাই চীনের রাস্তা যেন গোলকধাঁধা। বিষফোঁড়া খারাপ আবহাওয়া। এই দুইয়ের জেরে ভিনদেশী মানুষের পথ হারানোই সেখানে দস্তুর। সব আশঙ্কা সত্যি করেই ওই এলাকায় রাস্তা ভুল করে অন্য পথে চলে যায় চার্লস মারের ক্যারাভ্যান। একদিকে খাদ, অন্য দিকে গিরিবর্ত। দুর্গম এলাকায় পথ হারিয়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন চার্লস মারে এবং তার দলবল। কার্যত মরতে বসেছিল অভিযাত্রীদের দলটি। শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখান ১৪ বছরের বালক গুলাম রসুলই। ওই দুর্গম এলাকার ভিতর দিয়েই সহজ পথ খুঁজে বের করেন তিনি। তার দেখানো রাস্তায় এসে একটি নদীর তীরে পৌঁছে ওই অভিযাত্রী দলটি। ১৪ বছরের ওই কিশোর রসুলের গুণে অভিযাত্রী দলের নেতা চার্লস মারে এতটাই মুগ্ধ হন যে, ওই নদীর নামকরণ করেন ‘গালওয়ান নালা’। আর তার পর থেকে ওই উপত্যকা ও নদী গালওয়ান নামেই পরিচিত। কুলি বা টাট্টু ঘোড়া চালকের পেশা দিয়ে জীবন শুরু করে লেহ-র ব্রিটিশ জয়েন্ট কমিশনারের প্রধান সহকারী পর্যন্ত হয়েছিলেন গুলাম রসুল। কিন্তু লাদাখের ওই পাহাড়, নদী, গিরিখাত তাকে টানত। তাই থিতু হওয়া হয়ে ওঠেনি। একের পর এক অভিযানে সামিল হয়েছিলেন তিনি। পথই ছিল তার এক মাত্র নেশা। মাত্র ৪৭ বছর বেঁচে ছিলেন রসুল। কিন্তু লাদাখের ওই বেপরোয়া অভিযাত্রীর নামের সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে গালওয়ান উপত্যকা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।