পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লাদাখ সীমান্ত ঘিরে ভারত-চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। স¤প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী সেখানে এম৭৭৭৭ হুইটজারের তিনটি রেজিমেন্ট এবং কে৯ বজরা বন্দুকের একটি রেজিমেন্ট মোতায়েন করেছে। এর জবাবে চীনও সেখানে শতাধিক ট্রাক-মাউন্টেড হুইটজার কামান মোতায়েন করেছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তিব্বতে ভারতের সীমান্ত বরাবর ১০০ টি দূরপাল্লার পিসিএল-১৮১ লাইট, ট্রাক-মাউন্টেড হুইটজার মোতায়েন করেছে। পিএলএ-র সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই অঞ্চলে এম৭৭৭ আল্ট্রা-লাইট হুইটজারের তিনটি রেজিমেন্ট ভারতের মোতায়েনের প্রতিক্রিয়ায় পিসিএল-১৮১ হুইটজার মোতায়েন করা হয়েছে। এসসিএমপি রিপোর্টে উদ্ধৃত সূত্র দাবি করেছে যে, চীনের পিসিএল-১৮১ কামানের পাল্লা ভারতের এম৭৭৭ এর দ্বিগুণেরও বেশি। ‘পিএলএ ভারতের সীমান্তে ১০০ টিরও বেশি পিসিএল-১৮১ লাইট, ট্রাক-মাউন্টেড হুইটজার মোতায়েন করেছে। এই চীনা-উন্নত লঞ্চারের গুলির পরিসীমা এম৭৭৭ এর দ্বিগুণ।’ পিসিএল-১৮১ হল ১৫৫ মিমি চাকার স্ব-চালিত হাউইটজার কামান যা চায়না নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রæপ কর্পোরেশন বা নরিনকো দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। কামানটির ওজন মাত্র ২৫ টন, যা এর পরিবহন সহজ করে তোলে।
চীনের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচারকারী সিসিটিভি চলতি বছরের আগস্ট মাসে জানিয়েছিল যে, চীন সীমান্তে পিসিএল-১৮১ কামান মোতায়েন করেছে। এপ্রিলে, সিসিটিভি দাবি করেছিল যে, জিনজিয়াং-এ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ২০০ মিটার (১৭ হাজার ফুট) উঁচুতে পিসিএল-১৯১ গাড়িতে লাগানো হুইটজার কামান মোতায়েন করা হয়েছে। চীনা সামরিক ম্যাগাজিন মডার্ন শিপস অনুসারে, পিসিএল-১৯১ আরও বড় গোলা বহন করতে পারে, যার পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো যায়।
চীন ও ভারতের মধ্যবর্তী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের। এ নিয়ন্ত্রণরেখাকে ১৯৫৯ সালে চীন ‘ডি ফ্যাক্টো’ সীমান্তরেখা হিসেবে ঘোষণা করে। তবে এটি সুস্পষ্টভাবে দুই দেশের সীমানা চিহ্নিত করতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এলাকাটির ভৌগোলিক অবস্থা এবং পর্বতসংকুল অঞ্চলে জরিপ ও সীমানা নির্ধারণে প্রতিক‚লতা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার আশপাশে গত এক দশকে দেশ দুটি কর্তৃক ব্যাপকভাবে রাস্তা, সেতু, রেল লিংক ও এয়ার ফিল্ড নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। গত বছর লাদাখে কেন্দ্রশাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত করার পর ভারত তার সামরিক ঘাঁটির সঙ্গে সংযুক্ত করে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একটি রাস্তা নির্মাণ করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে।
অসমর্থিত কিছু প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের সেনারা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য একে অপরকে আটক করে রেখেছিলেন। সেখানে দুই দেশের সামরিক অবস্থান সুরক্ষিত। এদিকে উত্তেজনা কমাতে দুই পক্ষের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে না। দুর্গম এই পার্বত্য সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে ১৯৬২ সাল যুদ্ধে জড়ায় ভারত-চীন। এরপর দুই দেশের মধ্যে সীমানা বিভাজনকারী রেখা এলএসি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে দুই দেশ তাদের অবস্থান নিয়ে কখনোই একমত হয়নি এবং উভয় পক্ষ প্রায়ই একে অপরের বিরুদ্ধে সীমান্ত অতিক্রম করার অভিযোগ তুলে আসছে। আবার উভয় পক্ষই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকার পরিসর বাড়াতে চায়। এ কারণে সময়ে সময়ে দুই পক্ষ নিজেদের অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের জুনে এক সংঘর্ষ হয়, যা গত ৪০ বছরের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ।
ওই লড়াইয়ে ভারতের অন্তত ২০ জন ও ৪ জন চীনা সেনা নিহত হয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘস্থায়ী এই উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে দুই দেশের সামরিক নেতারা কয়েক দফা মুখোমুখি আলোচনা করেন এবং আলোচনার সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলমান। গত বছরের জুনের সংঘর্ষের পর এ পর্যন্ত ১৩ দফা সামরিক বৈঠক হয়েছে। সবশেষ বৈঠকটি হয়েছে গত রোববার। এবারের আলোচনার সমাপ্তি ভালো হয়নি। আগের আলোচনাগুলোয় সীমান্তে দুই পক্ষের দাবি নিয়ে সামান্য অগ্রগতি হলেও সবশেষ বৈঠকের পরদিন গত সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চীনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা করার অভিযোগ তুলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারত তার অবস্থান থেকে এটা দেখতে পেয়েছে যে, এলএসি বরাবর স্থিতাবস্থা নষ্ট হয়েছে চীনের একতরফা কার্যকলাপ এবং তাদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে। কাজেই ভারতীয় পক্ষ বাকি এলাকাগুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু চীন রাজি হয়নি। এ ছাড়া চীনের পক্ষ থেকে কোনো দূরদর্শী প্রস্তাবও দেয়া হয়নি। ত্রয়োদশ বৈঠকের আগে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে বলেছিলেন, চীন এলএসির ওপারে সেনা না সরালে ভারতও সেনা সরাবে না। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার ফলে ভারতও সেনাদের সতর্ক থাকার ওপর জোর দিয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর ধারণা, এলএসিতে চীন ৬০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। পাশাপাশি জানা যাচ্ছে, ভারতের সেনাসংখ্যাও ৫০-৬০ হাজারের মতো।
বেইজিং অবশ্য এই পরিস্থিতিকে অন্যভাবে দেখছে। পিপলস লিবারেশন আর্মির ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র কর্নেল লং শাওহুয়া বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি সহজ করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে চীন। দুই সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের সার্বিক পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য পুরো আন্তরিকতা প্রদর্শন করেছে। তবে, ভারত এখনো অযৌক্তিক ও অবাস্তব দাবিতে অটল। এতে আলোচনা আরও কঠিন হয়েছে।’ চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গেøাবাল টাইমস ট্যাবলয়েডের একটি বিস্তৃত নিবন্ধে ‘সীমান্তের পূর্ব অংশে নতুন করে ঘটনা ঘটানো হচ্ছ ‘ বলে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও এ বছরের শুরুর দিকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, সত্যিকার অর্থে অগ্রগতি হচ্ছে। উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতেও দেখা গিয়েছিল, সীমান্তে থাকা সেনা সমাবেশ সরাচ্ছে চীন। এতে করে ওই অঞ্চল থেকে বিশ্বের মনযোগ সরে যায়। বিগত কয়েক সপ্তাহে ভারত ও চীনের গণমাধ্যমগুলো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় নতুন করে দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ করে। তবে এসব তথ্যের বিশ্বস্ত কোনো সূত্রের উল্লেখ ছিল না। যদিও বলা হচ্ছে, এসব সমস্যাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গেøাবাল টাইমস বলেছে, সেনাদের এমন মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সীমান্তে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। তবে গ্লোবাল টাইমসের এই প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যের সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশেষজ্ঞরা নতুন করে সংঘাত শুরুর ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, চীনের শুধু ভারতের ঔদ্ধত্য চাওয়াগুলো প্রত্যাখ্যান করলেই চলবে না, ভারতের নয়া সামরিক আগ্রাসন থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ গ্লোবাল টাইমসের এর আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কিছুদিন আগেই ওই অঞ্চলে মোতায়েন থাকা চীনের পিএলএর সেনারা প্রাত্যহিক কাজের পরিবেশকে উদ্বেগজনক বর্ণনা করে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছিলেন। ওই প্রতিবেদনে সীমান্ত অঞ্চলে চীনের নতুন অবকাঠামো নির্মাণের খবরও জানানো হয়েছিল।
সীমান্তে চলমান অস্থিরতা নিয়ে গত সোমবার চীনের গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনের এক শিরোনামে বলা হয়, পিপলস লিবারেশন আর্মির সীমান্তরক্ষী সেনারা আসন্ন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। তাইওয়ান ও হিমালয়ের দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৮০০ মাইল বা সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটারের। দুই অঞ্চলের পরিবেশও সম্প‚র্ণ ভিন্ন। কিন্তু এ দুই এলাকা নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিবেশীদের দ্ব›দ্ব রয়েছে। দুই অঞ্চলেই পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে এবং চীনের দাবি, এসবের কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।