Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২০, ৯:৩৪ এএম

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ শনিবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি ডায়াবেটিসসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব শেখ নাজমুল হক সৈকত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সৈকত ইনকিলাবকে জানান, কয়েকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অসুস্থবোধ করলে তাকে দ্রুত সিএমএইচে নেয়ার পথে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গাড়ীতে তার সহধর্মিনীর কাঁধেই তিনি ঢলে পড়েন। সিএমএইচে নেয়ার পর চিকিৎসকরা বহু চেষ্টা করার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর কর্মময় জীবন: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
তিনি স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদরাসায় পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর একই মাদরাসার কওমি ধারায় পড়াশোনা করেন। তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
তিনি খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এমকম এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রিও অর্জন করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি অ্যাডভোকেট হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে ছয় দফার উত্তাল আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে তিনি গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন।
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশসেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
শেখ মো. আবদুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী সংসদীয় আসন-২১৭, গোপালগঞ্জ-০৩ (টুঙ্গীপাড়া কোটালীপাড়া) আসনে যতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, শেখ আবদুল্লাহ তার পক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সব কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবে সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাত্রিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শাহাদত বরণ করলে দেশ এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জীবনে এক দুর্দিন উপনীত হয়। এসময় গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে শেখ আবদুল্লাহ সব লোভ লালসা, ভয়ভীতি, হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে অকুতোভয় সৈনিকের ভূমিকা নিয়ে আপসহীনভাবে দলের প্রতি অনুগত থাকেন এবং দলের নিবেদিত কর্মী সমর্থকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর শেখ আবদুল্লাহ তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। তিনি কওমি মাদরাসা বোর্ডগুলোর শিক্ষা সনদের অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতাও করেছেন তিনি। এছাড়া অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে আসছিলেন তিনি।
এদিকে, করোনাভাইরাস মহামারীতেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন বিষয়য়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এপিএস সৈকত জানান, আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ সাপেক্ষেই মরহুমের নামাজে জানাজা এবং দাফন কাফনের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৪ জুন, ২০২০, ১১:১৬ পিএম says : 0
    শেখ মো. আব্দুল্লাহ সম্পর্কে এতসব আমার জানা ছিলনা, জানতেপেরে ভালই লাগছে আল্লাহ্‌ ওনাকে ভালভাবেই পৃথিবীতে সম্মান দিয়েছিলেন। আবার এই সংবাদে জানতে পারলাম উনি করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেদিক থেকে চিন্তা করলে তার ভাগ্য নিয়ে বলাযায় তিনি শহিদের মর্যাদা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন মহামারিতে মৃত্যুর কারনে। আবার তিনি একজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধা মানে গাজী সেদিক থেকেও তিনি যদি সততার সাথে চলে থাকেন তাহলে তার মৃত্যুও শহিদের মর্যাদায় হবে। কাজেই মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো. আব্দুল্লাহ সাহেবের মৃত্যু যেভাবেই ধরিনা কেন তিনি ভাল ভাবেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সহযোদ্ধার মৃত্যুতে মনটা ভরাক্রান্ত হয়ে আছে আর সারাক্ষন মনে হচ্ছে আমারও যাবার সময় এসেগেছে। জানা অজানা সহযোদ্ধারা একে একে অনেকেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। আমারও বয়স হয়েছে ৭০ পুরো করতে যাচ্ছি এ বছরের ১লা সেপ্টেম্বর তারিখে। একদিন আমিও এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবো সেদিন আমার সহযোদ্ধা আব্দুল্লার মত করে আমাকে কেহই এভাবে স্মরণ করবেনা। আমার মৃত্যুর কথাটা হয়ত পত্র পত্রিকায় আসবেনা নীরব ভাবেই আমাকে চলেযেতে হবে এটাই সত্য। তবে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা সেসময়ে ছাত্রলীগ করতাম কাজেই মুক্তিযুদ্ধে আমাকে যেতেই হয়েছিল। নিজের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দেশ ছেড়ে প্রবাসে বসবাস করছি সন্তানদের মঙ্গলের জন্যে। আল্লাহ্‌ আমাকে এখানেও একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আল্লাহ্‌ যেভাবে সম্মানিত করে থাকেন সেভাবে আমাকেও এখানে শুখ ও শান্তি দিয়েছেন। তবে আমার অন্যান্য সহযোদ্ধাদের মত করে বড় নেতা বা বড় ব্যবসায়ী কিংবা বড় সরকারি অফিসার আমাকে বানাননি। আমি আল্লাহ্‌র দরবারে শুক্রিয়া জানাই তিনি আমাকে অত বড় দায়িত্ব না দিয়ে আমাকে অল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। যাতে করে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে বিরাট ফর্দ নিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে না ইনশ’আল্লাহ। আমি সবার কাছে দোয়া চাই আল্লাহ্‌ যেন আমাকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দেন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্তেকাল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ