পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1719802399](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। একদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, আরেক দিকে অনবরত বৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি গত একদশকের মধ্যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুধু কুড়িগ্রাম ও সুনামগঞ্জেই লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে ও নদী ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই এখন আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাঁধ আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। আর যারা আশ্রয় পায়নি তারা আছেন খোলা আকাশের নিচে। অনেকের ঘরের ভেতরে পানি থৈ থৈ করছে। তাতে দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব। এখন তারা রয়েছেন চরম খাদ্যাভাবে। সরকারিভাবে শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ নানা উপকরণ বিতরণ করা হলেও তা অপ্রতুল। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ত্রাণবাহী নৌকা দেখলেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় বন্যার্তদের মধ্যে। বলা হচ্ছে প্রবল স্রোতের কারণে বিভিন্ন চরাঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে একশিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। সুনামগঞ্জে নিখোঁজ রয়েছে চারজন। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে নদীভাঙন। পরিস্থিতি যখন এতটাই নাজুক তখন তাদের দিকে তাকাবার যেন কেউ নেই। জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী ও সমাজের বিত্তবান কারো দৃষ্টিই যেন পড়ছে না এদের প্রতি। জনগণের সেবক নামের রাজনীতিকরা ব্যস্ত জঙ্গি দমন ও নিধনে। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেখানেই বন্যা সেখানেই ছুটে গেছেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ সে সময়ের রাজনীতিকরা। শুধু তিনি নন, সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের সব রাজনৈতিক কর্মী শ্রেণী-পেশার মানুষ, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সব স্তরের মানুষ এগিয়ে এসছে বন্যার্ত মানুষের সাহায্যে। এমন এক সময়ে দেশে এবার বন্যার আক্রমণ শুরু হয়েছে যখন আর কয়েকদিন পরেই আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
বাংলাদেশের বন্যা নিয়ে নতুন আলোচনা অর্থহীন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবেশীর বৈরী পানি নীতির কারণেই শুষ্ক মওসুমে যেমনি বাংলাদেশীদের থাকতে হচ্ছে পানির কষ্টে, তেমনি বর্ষায় ডুবতে হচ্ছে বন্যার পানিতে। বর্ষা মওসুম এলেই ভারতীয়রা বাঁধের মুখ খুলে দেয়। গতকাল প্রকাশিত খবরেও বলা হয়েছে, ভারত গজল ডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নদ-নদী দিয়ে ধেয়ে আসছে পাহাড়ি ঢল। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেট-সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা ও সুরমা নদী দিয়েও নামছে ঢল। ফলে প্রতিদিনই তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন জনপদ। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড়, জামালপুর ও সুনামগঞ্জে। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের কোন মহল বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখছেন এমন মনে হবার মত কোন তথ্য-উপাত্ত নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি রাজনীতিতে এক ধরনের বৈরী বাতাস থাকার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব এক্ষেত্রেও পড়েছে। যে কেউ স্মরণ করতে পারেন ’৭০-এর গোর্কি ’৮৬, ’৮৮ সালের বন্যায় এবং ’৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ কিভাবে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র যে যেভাবে পেরেছে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের টিফিনের পয়সা দিয়েছে দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে। উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা এবছর এমনিতেই ভাল নেই। খরার কারণে ফসলহানি হয়েছে। মাত্র ক’দিন পরে পবিত্র ঈদুল আজহা। বন্যার কারণে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে দুর্গত মানুষেরা এখন কেবলমাত্র বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু ন্যূনতম খাদ্যের প্রয়োজন সেটুকুও পাচ্ছে না। সরকারের নানামহল এখন এই দুর্গত মানুষের দিকে না তাকিয়ে তারা ব্যস্ত রয়েছেন নানাকর্মকা-ে। দেশের মানুষ যদি না বাঁচে তাহলে এসব দিয়ে কি হবে? বাস্তবতা হচ্ছে, উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনকে পর্যাপ্ত ত্রাণের পাশাপাশি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এখন থেকেই পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। সাধারণভাবেই এটা মনে করা হয় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ, দরিদ্র জনগোষ্ঠী। সহায়-সম্বল হারাবার পাশাপাশি তাদের জীবিকার পথও বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে যেমনি ত্রাণ, বিশুদ্ধপানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন; অন্যদিকে কৃষকের জন্য বীজ সরবরাহ করা না গেলে তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে অর্থনীতিতে। মূলত এসব যাদের দেখার দায়িত্ব সেই জনপ্রতিনিধিরা কাগজে কলমে থাকলেও তাদের বাস্তবে কোন উপস্থিতির প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক টানাপোড়েন, আস্থার সংকট বা চলমান বাস্তবতা যাই হোক, এটাই সত্যি যে মানুষের সেবার ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এটা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমত ভারতের সাথে যে ধরনের চুক্তির প্রয়োজন ছিল তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোন মাথাব্যথা রয়েছে এমন মনে হবার কোন কারণ নেই। শুষ্ক মওসুমে নদ-নদীগুলোতে পানি না থাকায় সামান্য পানিতেই বন্যা হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী এ বন্যার ক্ষয়-ক্ষতির দায়িত্ব ভারতের গ্রহণ করা ন্যায়সংগত। কারণ, তাদের দায় বেশি। বারবার বলার পরেও ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিরোধে বাংলাদেশ কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। গঙ্গাবাঁধের ব্যাপারেও কোন অগ্রগতি সাধিত হয়নি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে ভারতীয়দের অন্যায্য পানিনীতি আর বৈরিতার পাশাপাশি সরকারি উদাসীনতায় সর্বস্ব হারাচ্ছে দেশের মানুষ। এ অবস্থার অবসান প্রয়োজন। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দুর্গত মানুষের পাশে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিয়ে দাঁড়ানো। এই অভাগাদের জন্য কার্যকর কিছু করা অতীব জরুরি। সংশ্লিষ্ট সকলে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখবেন- এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।