Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশৃঙ্খল গণপরিবহন

করোনাকালে সীমিত পরিসরে ফেরেনি শৃঙ্খলা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২০, ১২:৪৩ এএম

গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা থামছে না। করোনাকালে সীমিত পরিসরে চলছে যানবাহন। যাত্রী কম, রাস্তাও ফাঁকা। এই ফাঁকা রাস্তাতেও বেপরোয়া বাস চালকরা। এতে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। করোনার প্রার্দুভারের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু শুরু থেকেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ার স্থলে নেয়া হচ্ছে শতভাগ বেশি। ইতোমধ্যে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) এ নির্দেশ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হলে ও স্বাস্থ্যবিধি না নামলে বাসের রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) ও রুট পারমিট বাতিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) এসব নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

সীমিত পরিসরে চলতে গিয়েও গণপরিবহনের মধ্যে সবচেয়ে বেপরোয়া বাস চালকরা। তারা কোনো নিয়ম মানে না। রাস্তা ফাঁকা পেলেই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। আরেক বাসকে কিভাবে ওভারটেক করা যাবে সে চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। একই সাথে যাত্রীর জন্য যেখানে সেখানে দাঁড়ানোর পুরনো অভ্যাস এখন বলবৎ আছে তাদের। চলতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের নজর এড়িয়ে সিগনাল না মানার প্রবনতাও আছে আগের মতো। সব মিলিয়ে বেপরোয়া চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

চালকদের বেপরোয়া আচরণের জন্য ট্রাফিক পুলিশও কম দায়ী নয়। তাদের গাছাড়াভাবে রাস্তায় এখন শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই ওভারটেকিং, সিগনাল না মানাসহ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করতে দেখা যায়। আবার রাস্তায় যানবাহন কম থাকার সুযোগে ট্রাফিক পুলিশ ঠিকমতো ডিউটিও পালন করে না। ট্রাফিক বক্সে গিয়ে বসে থাকে। গতকাল বুধবারও রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগিদের মতে, ট্রাফিক পুলিশ এখন গাড়ি ধরে মামলার দেন-দরবার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রাস্তার যানবাহনের দিকে তাদের নজর কম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই মহাসড়কে চলতে দেখা গেছে রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক। শুধু কি তাই, মহাসড়ক দিয়ে উল্টো পথেও দিনরাত চলছে মোটরচালিত রিকশা ও ভ্যান। এসবের দিকে পুলিশের কোনো নজর নেই।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করছেন পেশাদার চালকরা। এ কারণে অপেশাদারদের দিয়েই বাস চালাতে বাধ্য হচ্ছে মালিকরা। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে তারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যাত্রীর পাওয়ার জন্য কার আগে কে যাবে-এমন অশুভ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হচ্ছে তারা। গতকাল দুপুরেও রাজধানীর গুলিস্তান ও বাড্ডা এলাকায় কয়েকটা বাসের মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা দেখা গেছে। বাস চালক ও হেলপারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিন চুক্তিতে চালাতে গিয়ে চালকরা যাত্রীর জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দিন শেষে তাদের একটা নির্দ্দিষ্ট অঙ্কের টাকা মালিককে দিতে হয়। যাত্রী কম থাকায় সারাদিন ট্রিপ মেরেও তাদের পেটের ভাত জুটছে না। এ কারণে পেশাদার চালকরা এখন রাস্তায় নেই বললেই চলে।

এদিকে, শর্তে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও শৃঙ্খলা আনার কথা বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না। দুরপাল্লার বাসগুলোতে কিছু কিছু স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও সিটি সার্ভিসে এর বালাই নেই। গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে সিটি সার্ভিস বাসগুলোতে। ভিতরে আসন খালিও রাখা হচ্ছে না। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা যায় করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠছে। অন্যান্য গণপরিবহন যেমন টেম্পু, হিউম্যান হলার, অটোরিকশাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এমনকি করোনায় সেগুলোতে বাসের মতো অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নিয়ম না মানার শাস্তি হিসাবে বিআরটিএ কে গাড়ির রুট পারমিট ও নিবন্ধন বাতিলের যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরতে পারে বলে অনেকেই আশাবাদী। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, নির্দেশনার পর নির্দেশনা আসছে। তবে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তদারকি থাকতে হবে। আইন না মানলে অভিযান চালানোর ব্যবস্থাও থাকতে হবে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইউছুব আলী মোল্লা বলেন, গত ১ জুন থেকেই অতিরিক্ত ভাড়ার ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় অভিযান আরো জোরদার করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশৃঙ্খল

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ