পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন শুধু দাবী-দাওয়া বিক্ষোভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। ৭দিনের আন্দোলনের সময় তারা দৃষ্টান্তমূলক সাফল্যের সাথে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছে। যে সব ভিআইপির প্রোটকলের কারণে রাস্তায় সাধারণ যাত্রীদের প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়, তাদের গাড়ী ও চালকদের লাইসেন্স না থাকার ঘটনাও শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়েছে। আইন সকলের জন্য সমান, এই আপ্তবাক্যটি বহুল শ্রæত হলেও আমাদের সমাজে এর বাস্তব প্রয়োগ কখনো দেখা যায়নি। কিশোর শিক্ষার্থীরা মাত্র এক সপ্তাহে তা দেখিয়ে দিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবীর সাথে দলমত নির্বিশেষে সমগ্র জাতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সরকার তাদের দাবী মেনে নিয়ে দ্রæত তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। সংগত কারণে সংশ্লিষ্ট সকলেই প্রত্যাশা করেছিল এবার হয়তো সড়কে নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে আসবে। আদতে তা হয়নি। শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে যাওয়ার দিন থেকেই সপ্তাহব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে। ট্রাফিক সপ্তাহে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত নজরদারী ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের কারণে এমনিতেই গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও আইন লঙ্ঘণের হার কমে আসার কথা। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিশেষ নজরদারির কারণে মোটরবাইক চালকদের হেলমেট ব্যবহার, অনেক রাস্তায় পরিবহনের যথাযথ লেইন ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি চোখে পড়লেও গণপরিবহন ও জনসাধারণের রাস্তা পারাপারে আগের মতই বিশৃঙ্খলা এখনো দেখা যাচ্ছে।
গতকাল প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ঢাকার সড়কে আগের মতই বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা সতর্কতা ও আইন লঙ্ঘনের চিত্র উঠে এসেছে। ওভারটেকিং, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, উল্টোপথে গাড়ী চালনা, চলন্তবাসে চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং পথচারীদের যত্রতত্র নিয়ম লঙ্ঘন করে রাস্তা পারাপারের ঘটনা খুব একটা কমেনি, এই চিত্র থেকেই সেটা বুঝা যায়। শিক্ষার্থীরা রাজপথ থেকে শ্রেনীকক্ষে চলে গেলেও চালকের লাইসেন্স, গাড়ির লাইসেন্স ও ফিটনেস না থাকা এবং ট্রাফিক সপ্তাহের কারণে এখনো প্রায় অর্ধেক গাড়ী রাস্তায় নামেনি। এহেন বাস্তবতায় গণপরিবহন ও রাজপথ যতটা নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালিত হওয়ার কথা আদতে তা দেখা যাচ্ছে না। সরকারের মন্ত্রী-আমলা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা সকলের চোখ খুলে দিয়েছে, এখন থেকে তাদের দেখানো পথেই পরিচালিত হবে সড়ক ও গণপরিবহন। সড়ক ব্যবস্থার কাঙ্খিত উন্নয়নে আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনপ্রত্যাশা ও নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবীতে পুরো সমাজকে ঝাঁকি দেয়া এমন একটা আন্দোলনের পর ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের মধ্যেও সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্টদের এমন ব্যর্থতা মেনে নেয়া যায়না। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে গাড়ীর ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য বিআরটিএ’র অফিসে লাইন দিতে দেখা যাচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বা নিশ্চয়তা না থাকায় এসব সার্টিফিকেট সংগ্রহের পর সব গাড়ী রাস্তায় নামলে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর প্রস্তাবিত ও বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন ইতিমধ্যে মন্ত্রী পরিষদ সভায় গৃহিত হয়েছে। আইনের ভালমন্দ, প্রত্যাশা ও অপূর্ণতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রভাবশালী মহলের চাপে দীর্ঘদিন আটকে থাকা আইনের খসড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে দ্রæত বাস্তবায়ণের পথে এগিয়েছে। তবে সড়ক নিরাপত্তাসহ সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের নিশ্চয়তাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে আইনের সময়োপযোগী পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও বিদ্যমান আইনের সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেও শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত করা সম্ভব। নিরাপদ সড়কের দাবী পুরণে পরিবহন মালিক, চালক ও শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সতর্কতা ও আইন মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে লাখ লাখ পথচারী ও যাত্রী সাধারণের রাস্তায় চলাচল, পারাপার ও গাড়িতে উঠানামার ক্ষেত্রে সতর্কতা ও সচেতনতা না থাকলে শুধুমাত্র আইন করে অবস্থার প্রত্যাশিত পরিবর্তন অসম্ভব। এ ক্ষেত্রেও প্রথম কাজটি করতে হবে ট্রাফিক সিস্টেম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নগরীর জনবহুল ও যানজটপ্রবণ পয়েন্টগুলোতে এবং মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ এবং আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ নজরদারীর ব্যবস্থা করতে হবে। গাড়ীর চালক-হেল্পারদের দক্ষতা, নিরাপত্তা বিধি, গাড়ীর ফিটনেস ইত্যাদি লঙ্ঘনের দায়ে আইনে বিদ্যমান শাস্তি প্রয়োগে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাস্তা পারাপার, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রীজ ব্যবহারে বিধি লঙ্ঘনের জন্য সংশ্লিষ্ট পথচারীদেরও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার আগে এর অপূর্ণ দিকগুলো পুর্ণবিবেচনার দাবী রাখে। বিশেষত: গাড়ী রাস্তায় নামানোর আগে প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং ভাড়া নির্ধারণের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রস্তাবিত আইনে উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। শুধু মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের আইন দিয়ে সড়কে পথচারী ও গণপরিবহন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।