পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অব্যবস্থাপনার খেসারত ভোক্তাদের : সুষ্ঠু নীতিমালার অভাব দায়ী
শফিউল আলম : বেসরকারি স্থল কন্টেইনার ডিপোর (আইসিডি) অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত হয়রানি আর ভোগান্তির অভিযোগ করছেন আমদানি-রফতানিকারক, ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তাসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা। অথচ এই অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় খাতটিতে নেই কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। যখন যেমন খুশি মালিকরা একতরফা চার্জ বৃদ্ধি করেন। বেসরকারি ডিপো (আইসিডি) তথা অফডকে কন্টেইনারবাহী পণ্যের চাপ ও জট যতই বৃদ্ধি পায় অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও হয়রানির মাত্রাও ততই বেড়ে চলে। বর্তমানে বন্দরের পাশাপাশি অফডকেও জট আর চাপ বেশি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক শ্রমিকদের একশ’ ঘণ্টার আকস্মিক কর্মবিরতি ৩০ সেপ্টেম্বর স্থগিত হলেও কার্গোজটের জের চলছে এখনও। সেই সাথে বিভিন্নমুখী হয়রানির জেরে আইসসিডিগুলোতে বেসামাল অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার যে গচ্ছা টানতে হচ্ছে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে এর খেসারত দিতে হয় দেশের ভোক্তা সাধারণকে। তাছাড়া দেশীয় শিল্পের উৎপাদন খরচও বেড়ে চলেছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা কর্তৃপক্ষীয় নির্লিপ্ততার সুযোগে যথেচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে অধিকাংশ প্রাইভেট আইসিডি। অফডকে অনিয়ন্ত্রিত হারে ও যথেচ্ছ চার্জ উসুল, ন্যূনতম ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের অভাব, সময়মতো পণ্য হ্যান্ডলিং, মজুদের নিরাপত্তা, সংরক্ষণ, খালাস ও ডেলিভারি পরিবহন এবং সবক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদারকির অভাবের মতো অভিযোগগুলোই সবচেয়ে বেশি। প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামকে ঘিরে যত্রতত্র ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা আইসিডি বা অফডকের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নেই কোন সুষ্ঠু নীতিমালা। পরিচালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে আইসিডি ব্যবসা খাত। আইসিডি’র চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা রীতিমতো অতিষ্ঠ হলেও এর কোনো প্রতিকারই মিলছে না। ঊর্ধ্বতন মহলে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করেই চলছে আইসিডি’র তাবৎ অনিয়ম, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা। আইসিডি’র অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে সময়মতো হচ্ছে না শিল্পের কাঁচামাল খালাস কার্যক্রম। এতে করে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চার্জ আদায়ের ব্যাপারে সুষ্ঠু নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করার কারণে যথেচ্ছহারে চার্জ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ আইসিডিতে। একেক সময় একেক অজুহাতে বর্ধিত চার্জ আদায় করা হয়।
আমদানি-রফতানিমুখী কন্টেইনারবাহী দৈনিক শত শত কোটি টাকা মূল্যের হরেক ধরণের পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং ও মজুদ করছে বেসরকারি আইসিডিসমূহ। সমুদ্র পথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চাহিদা যতই বাড়ছে, আইসিডিতে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের চাপ ও কর্মব্যস্ততা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আইসিডি তথা অফডক ব্যবসায় ক্রমাগত বাড়লেও এর সুষ্ঠু পরিচালনায় বিভিন্নমুখী অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি-অনিয়ম ও অদক্ষতার অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। আইসিডিসমূহে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, মজুদ-স্টেকিং ও পরিবহনের উপযোগী ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের অভাব প্রকট। আবার কোন কোনো আইসডিকে ঘিরে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। কোনো কোনো প্রাইভেট আইসিডিতে সময়-সুযোগ বুঝে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ও রফতানি পণ্যসামগ্রীর চালান খালাসও হয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগরী, শহরতলী ও নগরীর কাছাকাছি বড় ও মাঝারি আকারের বেসরকারি স্থল কন্টেইনার ডিপোর (আইসিডি) সংখ্যা এখন ১৭টি। কিন্তু এসব আইসিডি’র যান্ত্রিক ও অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা তেমন বাড়ানো হয়নি। প্রাইভেট আইসিডি তথা অফডক পরিচালনায় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। আইসিডিগুলোতে বিরাজ করছে সমস্যা-সংকটের বহর। এরমধ্যে কন্টেইনার বা মালামাল হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী যন্ত্রপাতি অর্থাৎ হালকা ও ভারি ইকুইপমেন্ট রয়েছে খুবই অপ্রতুল। এসব কারণে আমদানি-রফতানিকারকদের প্রতিনিয়তই হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এদিকে আইসিডি পরিচালনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক), চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা ও শর্তাবলী পরিপূরণ এমনকি তোয়াক্কা করছেন না আইসিডি’র মালিকরা। জনবহুল এলাকায় যেনতেন প্রকারে আইসিডি স্থাপন করে নিত্য যানজটসহ বিভিন্নমুখী জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রাইভেট আইসিডি বা অফডককে একটি শিল্পখাত হিসেবে বিকাশিত করার সাথে সাথে সামগ্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি অফডক নীতিমালা তৈরির তাগিদ দিয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও আমদানি-রফতানিকারক মহল। তারা বলছেন, সমস্যা-সংকট ও সীমাবদ্ধতা কাটানো সম্ভব হলে বেসরকারি আইসিডি তথা অফডক খাত এদেশে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যভিত্তিক প্রাইভেট আইসিডি বা অফডকের হ্যান্ডলিং ও ধারণক্ষমতা বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার। এই খাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা এ যাবৎ বিনিয়োগ হয়েছে। রফতানিমুখী অপ্রচলিত পণ্য ও তৈরিপোশাক শিল্পপখাতের উদ্যোক্তারা অফডক সুবিধার দিকে অধিক হারে আকৃষ্ট হচ্ছেন।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠা আইসিডি বেশিরভাগই সেবার মান অনুন্নত। আইসিডি’র স্থান নির্ধারণ ও ভূমি ইজারায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। কর্মব্যস্ত ও জনবহুল আবাসিক, বাণিজ্যিক এলাকার পাশে আইসিডি স্থাপনের কারণে ব্যাপকহারে শব্দ ও পরিবেশ দূষণ, হরহামেশা দূর্ঘটনার অভিযোগ রয়েছে।
বেসরকারি আইসিডিসমূহে বিভিন্ন ধরণের ভারী, মাঝারি ও হালকা ব্যবহার্য যান্ত্রিক সাজ-সরঞ্জাম চাহিদার তুলনায় রয়েছে অপর্যাপ্ত। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি সেকেলে, অকেজো, লক্কর-ঝক্কর ও বিকল অবস্থায় রয়েছে। কন্টেইনার ওঠানামা, স্থানান্তর, মজুদের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমন্ট স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, রীচ স্টেকার, ফর্ক লিফট, স্প্রেডার, ফর্ক, কন্টেইনার মুভার, এম্পটি হ্যান্ডলার, টার্মিনাল ট্রাক্টর, ট্রেইলর, মোবাইল ক্রেন, লগ হ্যান্ডলার, লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাক্টর, হেভি ট্রেইলর ও লাইট ট্রেইলর রয়েছে খুবই অপ্রতুল। এ অবস্থায় কন্টেইনার ওঠানামায় সময় ও খরচ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অফডকসমূহকে ঘিরে বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট সমস্যাও জটিল আকার ধারণ করেছে। বন্দর ব্যবহারকারী তথা সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডাররা বেসরকারি আইসিডি পরিচালনায় একটি সুষ্ঠু ও সমন্বিত নীতিমালা অনুসরণের ব্যাপারে জোরালো তাগিদ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।