পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত একদশকে অপ্রদর্শিত অর্থের এক বিশাল অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিদেশে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকার অংশবিশেষ দেশে ফেরত আনার পরিকল্পনার কথা সরকারের সংশ্লিষ্টরা কখনো কখনো বললেও আদতে কখনো তা সম্ভব হয়নি। সেই সাথে প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের সময় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে সুধি মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বিগত সময়ের গতানুগতিক বাস্তবতা থেকে এবারের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। করোনা মহামারীর কারণে দেশ দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনে থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় একদশক ধরে যেখানে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার শতকরা সাড়ে ৬ থেকে ৮ ভাগ সেখানে করোনার প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি শতকরা ১.৬ ভাগে নেমে আসতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি আরো কমে ১ শতাংশে নেমে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে বিশ্বব্যাংক। জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতি, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্য অর্জনে এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।
করোনা মহামারীর কারণে ইতোমধ্যে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের আয়-রোজগার ও কর্মসংস্থানের পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, চলমান করোনা ছুটিতে দেশের ৫১ শতাংশ মানুষের খানাভিত্তিক আয় শূন্যে নেমে এসেছে এবং অর্থনৈতিকভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ। করোনা পরিস্থিতি ক্রমে আরো ভয়াবহরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় আজ আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষিত হতে চলেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ ঘাটতি সর্বস্ব বিশাল আকারের বাজেট নিয়ে সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও করোনায় সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা কাটিয়ে জনজীবনের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য নিঃসন্দেহে বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চলমান করোনাকালীন সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকান্ড চালু রাখা এবং কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অপ্রদর্শিত অর্র্থ বিনিয়োগের সুযোগ অবারিত করার প্রস্তাব বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে অতীতে যারা বিরোধিতা করেছেন, এবার তারা অনেকটাই নিরব। উপরন্তু যৌক্তিক বিবেচনায় দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের অনেকেই এখন জরিমানার শর্ত শিথিল করে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিতে সুপারিশ করেছেন।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও গার্মেন্ট পণ্য রফতানির রেমিটেন্সের উপর ভর করে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশের অর্থনীতিতে সন্তোষজনক স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কাক্সিক্ষত গতি ফিরে আসেনি। উপরন্তু দেশ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়া বন্ধ করা যায়নি। দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা ও নিরাপত্তাহীনতাকেই টাকা পাচার ও বিনিয়োগ স্থবিরতার জন্য দায়ী করা হয়। শতকরা ১০ ভাগ জরিমানাসহ বিদ্যমান রাজস্ব ব্যবস্থার আওতায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েও কাক্সিক্ষত সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ব্যবস্থায় এনবিআরের বিড়ম্বনা এড়ানোর গ্যারান্টি থাকলেও সরকারের নীতি অনুসারে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকান্ডে সমন্বয় না থাকায় নিগ্রহের ভয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূল চ্যানেলে নিয়ে আসার সাহসী উদ্যোগে কেউ এগিয়ে আসেনি। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আজ জাতীয় বাজেট ঘোষিত হচ্ছে। করোনা মহামারীতে জীবন-জীবিকা রুদ্ধ হয়ে পড়ায় হঠাৎ দারিদ্র্যপীড়িত কোটি মানুষের জন্য ন্যূনতম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। একটি সম্ভাব্য ও অবধারিত বৈশ্বিক মহামন্দার সময়ে বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা করা কঠিন। এমতাবস্থায় দেশীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণ অসম্ভব নয়। বিশেষত বিশাল অংকের অপ্রদর্শিত অর্থ সহজ শর্তে প্রশ্নহীন নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। এমনকি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতেও এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।