Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার টেস্ট ও চিকিৎসাসুবিধা ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে সরকার এলাকাভিত্তিক লকডাউনের কথা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটে ৫০টি জেলা ও ৪০০টি উপজেলাকে পুরোপুরি লকডাউন (রেড জোন) দেখানো হয়েছে। আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন) দেখানো হয়েছে ৫টি বিভাগ, ১৩টি জেলা ও ১৯টি উপজেলাকে। আর লকডাউন নয় (গ্রিন জোন) দেখানো হয়েছে ১টি জেলা ও ৭৫টি উপজেলাকে। ওয়েবসাইটে ৬ জুন সর্বশেষ আপডেটে করা এই তালিকা ছাড়াও ঢাকা মহানগরীর ৩৮টি এলাকাকে আংশিক লকডাউন করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে দেখানো এই তালিকা নিয়ে ইতোমধ্যে নানান বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, ওয়েবসাইটটি হালনাগাদ না করায় এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তার অনুমোদন পেলেই সেটা কার্যকর করা হবে। আইইডিসিআর সূত্রে বলা হয়েছে, দু’য়েক দিনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার ওয়ারী ও রাজাবাজার এলাকাকে রেড জোন ধরে লকডাউন করা হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই গত রোববার ওয়ারী ও রাজাবাজার এলাকায় কে বা কারা লকডাউনের ঘোষণা দেয়। কোনোরূপ পূর্ব প্রস্তুতি ও সুনির্দিষ্ট সরকারি ঘোষণা ছাড়া এরকম লকডাউন করা যায় না। দেখা গেছে, ওই দুই এলাকার মধ্যে ওয়ারীতে লকডাউন করা হয়েছে, যার অধিকার কারো নেই। দুই মাসাধিককাল সাধারণ ছুটি ও গোটা দেশে অঘোষিত লকডাউন থাকার পর ছুটি সমাপ্ত ও লকডাউন তুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তারপর লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসে স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করেই। এর ফল হিসেবে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন, এই সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ করার জন্য নতুন করে আংশিক বা এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সুযোগ ও প্রয়োজনীয়তা এখন আর নেই। তার আগেই সেটা শেষ হয়ে গেছে।

দুঃখজনক হলেও স্বীকার করতে হবে, দীর্ঘ ছুটি ও লকডাউনকালে আমরা করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো সফলতা দেখাতে পারিনি। লকডাউন ক্ষেত্র বিশেষে কার্যকর হয়নি, ঘরে থাকার নির্দেশনা যথাযথভাবে পালিত হয়নি, সঙ্গনিরোধ লংঘিত হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি অমান্য হয়েছে। যার পরিণতি উদ্বেগজনক ও বিপর্যয়কর হয়েছে। ওদিকে এই সময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জরুরি বিষয়টি প্রায় সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখনো এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লকডাউনের সময় যেহেতু আর নেই, সুতরাং পরীক্ষা ও চিকিৎসার দিকেই সর্বোচ্চ নজরনিবেশ করতে হবে। করোনাকারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাই বলতে গেলে ভেঙ্গে পড়েছে। করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গত তিন মাসে করোনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৭ জনের। যেখানে প্রতি ৫ জনে ১ জন করোনায় আক্রান্ত বলে তথ্য পাওয়া গেছে, সেখানে ১৭ কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষায় কত দিন লাগবে আর কতজন ততদিনে পরীক্ষার জন্য বেঁচে থাকবে, সেটাই প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাপকহারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ছাড়া গত্যান্তর নেই। অধিক সংখ্যায় পরীক্ষা হলে যারা ‘পজেটিভ’, তাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভবপর হবে। এর ব্যতিক্রম হলে সংক্রমণ আরও বাড়বে। সুতরাং পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এরপরই আসে চিকিৎসা প্রসঙ্গ। বলতে গেলে এতদিনে করোনা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থায়ই গড়ে ওঠেনি। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও তার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের শোচনীয় ব্যর্থতা।

কিছু সরকারি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। নির্দিষ্টকৃত হাসপাতালগুলোতে এযাবৎ খুব কম সংখ্যক রোগীই চিকিৎসা পেয়েছে। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া যেমন দুরূহ, তেমনি চিকিৎসা পাওয়াও রীতিমত ভাগ্যের ব্যাপার। ভর্তির জন্য যাওয়া ও ভর্তি হওয়া রোগীদের কী ধরনের বিড়ম্বনা, হয়রানি ও অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তার আংশিক বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তা লোমহর্ষক বললেও কম বলা হয়। করোনা রোগী বাদে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো হাসপাতালেই অন্য রোগীদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার জন্য কেউ হাসপাতালে গেলে তার ভর্তি হওয়া কিংবা চিকিৎসাসুবিধা পাওয়া চাঁদ হাতে পাওয়ার শামিল। অনেককেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। হাসপাতাল ও ডাক্তারদের এরকম অসদাচারণ ও দায়িত্বহীনতার নজির বিশ্বের অন্যান্য দেশে কমই দেখা যায়। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে রোগীর মৃত্যু হওয়ার ঘটনা এপর্যন্ত যে কত ঘটেছে, তার কোনো হিসাব নেই। এসব দায় কে নেবে? বিস্ময়কর ব্যাপার, হাসপাতাল ও ডাক্তারদের এহেন ব্যবহারের জবাবদিহির ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত করা হয়নি। করোনা রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে সরকারি নির্দেশনা দেয়া হয়। এই নির্দেশনা সব হাসপাতালে পালিত হয়নি। করোনা চিকিৎসার জন্য প্রায় সব হাসপাতালেই আইসিইউ’র অভাব আছে, অভাব আছে অক্সিজেনের এবং ভেন্টিলেটরের। এসব ছাড়া ক্রিটিকাল করোনা রোগীদের চিকিৎসক কীভাবে সম্ভব হতে পারে? নাইজেরিয়া করোনার ওষুধ বাংলাদেশ থেকে এরোপ্লেন ভরে নিয়ে গেছে। অনেক দেশই অন্য দেশ থেকে ওষুধ, ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশকেও সে পথ অবলম্বন করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা টেস্টের জন্য র‌্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করার কথা বলছেন। সেটাও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। মানুষের জীবন আগে। তার সুরক্ষার প্রয়োজনে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব টেস্ট ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনার-টেস্ট
আরও পড়ুন