Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হয়রানি বন্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জঙ্গিদের খোঁজে রাজধানীর বিভিন্ন মেসে পুলিশের তল্লাশির নামে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ কর্মজীবী, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীরা। পুলিশ আতঙ্কে অনেকে মেস ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মেসগুলোর মধ্যে মাদরাসার শিক্ষার্থী থাকলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। মেস মেম্বারদের গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে নানা প্রশ্ন করা হচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছে। অন্য খবরে বলা হয়েছে, মিরপুর, পল্লবীতে ব্যাচেলরদের বাড়িভাড়া দিতে নিষেধ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লা। এই নির্দেশের পর অনেক বাড়িওয়ালাই বাড়ি থেকে মেস উঠিয়ে দিচ্ছেন। শুধু মিরপুর নয়, সারাদেশেই মেস ভাড়ায় আগের চেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, মেসে যে বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থী বসবাস করে তারা কোথায় যাবে?
মেস সংস্কৃতি কোন নতুন কিছু নয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোতে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এমনকি গ্রামাঞ্চলেও যেসব জায়গায় মেসব্যবস্থা নেই সেখানেও লজিং ব্যবস্থা রয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল ফজল, কবি আল মাহমুদ, ড. আতিউর রহমানসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি জীবনের একটা সময়ে লজিং পেয়ংগেস্ট অথবা মেসে থেকেছেন। আমাদের শিল্পসাহিত্য সিনেমা নাটকেও মেস জীবন উঠে এসেছে। রাষ্ট্র্র যেহেতু নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে অক্ষম তাই অধিকাংশ তরুণ নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে কষ্ট করে মেসে বসবাস করে। বর্তমান সময়ে পোশাক শ্রমিকসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী রাজধানী ঢাকায় মেস ভাড়া করে থাকছে। এর পিছনে অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক বাস্তবতাও রয়েছে। পারিবারিক কারণও যুক্ত হয়ে আছে। সীমিত আয়ের মানুষেরা মেসে থেকে যা কিছু সঞ্চয় করছে সেটাই তাদের পোষ্যদের পাঠাচ্ছে। অফিসিয়ালি মেসের কোন স্বীকৃতি নেই। অনিবার্য কারণেই জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেক এলাকাতেই ব্যাচেলরসহ বিভিন্ন পেশার লোক এবং শিক্ষার্থীরা থাকছে। এখন হঠাৎ করে এই সংস্কৃতিতে ছেদ পড়তে শুরু করেছে। ব্যাপারটি কেবলমাত্র মেসের বেলাতেই নয়। গত কিছুদিন থেকে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যে সব তরুণ শিক্ষার্থী বাসাবাড়িতে গিয়ে টিউশনি করে তাদেরও সন্ধ্যার পর বের হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেককেই বিনা কারণে গ্রেফতার হতে হচ্ছে। মামলার ভয়ে অনেকই মুখ খোলে না। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলে তো কথাই নেই। এসব তরুণের ঘরের বের হওয়াই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জায়গায় জায়গায় তাদের তল্লাশির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের তরুণ সমাজই জাতির ভবিষ্যৎ। সেই তরুণ সমাজকেই আজ ব্যাপক সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে পড়তে বাধ্য। সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টিতেও সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। প্রাসঙ্গিকতায় এটা বলা যায়, কোথাও কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য যদি থাকে বা সে ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ এমনকি গ্রেফতারও করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই ঢালাও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাড়িওয়ালারাদের বাড়িভাড়া দিতে নিষেধ করলে বা নিরুৎসাহিত করলে তারা অবশ্যই এথেকে বিরত থাকবেন বা থাকতে বাধ্য হবেন। এমনিতেই ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া দিতে সাধারণত বাড়ীর মালিকরা আগ্রহী নন। সাধারণত নিম্নমানের বাড়ীই মেসের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিদ্যমান বাস্তবতায় এসব বাড়িওয়ালারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। মেসসংঘ নামের মেসবাসীদের সংগঠনটির মহাসচিব বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে মেসের সদস্য কেন সবার তথ্য পুলিশের কাছে থাকা উচিৎ। গুটিকয় জঙ্গির অপরাধের দায় লাখ লাখ মেস সদস্যের উপর দেয়া উচিৎ নয়। কারণ জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আমলা-পুলিশেরও অনেকে একদিন মেসে থেকেই পড়াশোনা করেছেন। মেস উচ্ছেদ করা হলে তা হবে অমানবিক।
গত কিছুদিনে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশের কোন নাগরিকই যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। এভাবে কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। নিরীহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে মূল সমস্যার সমাধান হবে, এমন ধারণা সঙ্গত নয়। দেশের অর্থনীতিসহ সামগ্রিক ব্যবস্থাই এখন বলতে গেলে বিপর্যস্ত। তার উপর যদি মেসে বসবাসকারী কর্মজীবীরা হয়রানির শিকার হয় তবে তা কোনোভাবেই অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে না। সুতরাং, কি কারণে এবং কেন কাদের স্বার্থে এসব হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তা অনুসন্ধান জরুরি, গুটিকয় দুষ্কৃতকারীর কারণে বিশাল সংখ্যক মানুষের হয়রানি এবং মেস থেকে উচ্ছেদ হওয়া কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, সময়ের প্রয়োজনেই তরুণদের হয়রানি বন্ধ করা অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হয়রানি বন্ধ করতে হবে

আরও পড়ুন