Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদ্যোৎপাদনে প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগাতে হবে

তৈমূর আলম খন্দকার | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

অদৃশ্য করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী সর্বক্ষেত্রে চলছে মন্দাভাব। অর্থনীতি, উৎপাদন, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য একটি অপরটির সম্পূরক। ফলে করোনা যত দিন চলবে তার চেয়ে বেশি দিন চলবে মন্দাভাব। এমন দিনও আসতে পারে যেখানে সরকার বা মানুষের হাতে টাকা থাকবে, কিন্তু খাদ্য পাওয়া যাবে না। ইতোপূর্বে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কোনো কোনো রাষ্ট্র কাগজী নোট ছাপিয়ে ফল পেয়েছে উল্টো। এতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। তখন বাজারদর নাগালের বাইরে চলে যায়। মানুষের প্রাথমিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যার জন্যই জীবিকা। সব কিছুরই বিকল্প হতে পারে, কিন্তু খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। কোনো কারণে যদি আমাদের খাদ্যের প্রধান উপাদান ‘ধান’ চাষের ঘাটতি ঘটে, তখন বিদেশ থেকেও চাল আমদানি করা দূরুহ হয়ে পড়বে। কারণ পৃথিবীব্যাপীই চলছে এখন মন্দাভাব, যা কাটিয়ে উঠার জন্য বড় বড় রাষ্ট্রগুলিই হিমশিম খাচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব নাগরিকের খাদ্যের চাহিদা মিটানো। কিন্তু প্রয়োজন মতো খাদ্যই যদি মজুদ না থাকে, তবে সরকার খাদ্যের চাহিদা মিটাবে কীভাবে? তখন সরকার ব্যর্থ হবে বটে, কিন্তু পিতার সামনে সন্তানেরা না খেয়ে মরার করুণ দৃশ্য দেখতে হবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর বিশ্লেষণ মতে, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৭ কোটি মানুষ মারাত্মক খাদ্যাভারের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা করেছে। ফলে প্রকৃতির আচরণ পরিবর্তনের পাশাপাশি নাগরিকদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। পূর্বে ও বর্তমান খাদ্যাভাস হচ্ছে মানুষ ব্যাঞ্জন অর্থাৎ তরকারী দিয়ে ভাত খায়। এখন ভাত দিয়ে তরকারী খেতে হবে। অর্থাৎ ভাতের পরিমাণের চেয়ে তরকারীর পরিমাণ বেশি হতে হবে। চিকিৎসকদের মতে, ভাত জাতীয় খাদ্যে চিনি জাতীয় উপাদান বেশি থাকে, যা খেলে ডায়াবেটিস ও স্থূলতা রোগের সৃষ্টি হয়। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এদেশের মানুষের মতো এতো পরিমাণ ভাত কেউ খায় না। ‘ক্ষণা’ নামক একজন পন্ডিত ব্যক্তি কিছু বাণী দিয়ে গেছেন, যা ক্ষণার বচন নামে পরিচিত। ক্ষণার একটি বচন বা বক্তব্য আজ পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নাই। ক্ষণার একটি উল্লেখযোগ্য বচন হলো, ‘উনা ভাতে দূনা বল, অধিক ভাতে রসাতল।’ অর্থাৎ যে কম ভাত খায় তার শরীর দ্বিগুণ সবল থাকে এবং যে বেশি ভাত খায় সে যায় রসাতলে।

সরকারি ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা সঠিকভাবে বিলি বণ্টন না হওয়ায় অভিযোগ ছাড়াও ‘মুখ দেখে সাহিদারী’ অর্থাৎ ত্রাণ বা সরকারি অনুদান নিজেদের লোকদের নিকট বিতরণ, অধিকন্তু রয়েছে সরকারি লোক দ্বারা ত্রাণ চুরির ঘটনার পাশাপাশি কালোবাজারী ও মুনাফাখোরদের ভয়াল থাবা। ফটো সেশনের ত্রাণ নেয়াও অনেক কষ্টকর। পূর্ব থেকে স্লিপ সংগ্রহ করে প্রধান অতিথি আসার অপেক্ষায় রৌদ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। অন্যদিকে অনেক পরিবার না খেয়ে থাকে, অথচ লোকলজ্জার ভয়ে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বা কারো কাছে কোনো কিছু চাইতে পারে না। এই মর্মে পবিত্র কোরানশরীফে স্পষ্ট নির্দেশিকা দিয়ে মহান আল্লাহপাক বলেছেন, ‘(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকা সন্ধানে ভ‚পৃষ্ঠে ঘোরাফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায়না বলে, অবিবেচক লোকরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে, তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাঞ্চা করে না’ (সূরা বাক্কারাহ: ২৭৩)। বর্তমানে সবচেয়ে খাদ্যভাবে রয়েছে ঐ সকল পরিবার যারা মানুষের নিকট কিছু চাইতে বা যাঞ্চা করে না বা চক্ষুলজ্জার কারণে কারো নিকট কোনো সাহায্য চাইতে পারে না। কোরানিক নির্দেশিকা মোতাবেক দান বা ত্রাণে তাদের অগ্রধিকার রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, এই শ্রেণির পরিবারগুলিই এখন ত্রাণ থেকে বঞ্চিত।

যখন মানবজাতি অবিচার, অত্যাচার, ব্যাভিচার, অন্যের অধিকার হরণ, অশ্লীলতার সীমা লংঘন করছে তখনই আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে করোনার মতো গজব নাজিল হয়ে থাকে, একথা জোরেসোরেই আল্লাহপাক আল-কোরানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতিকে বর্ণিত কারণে ধ্বংস করেছেন বলে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি একথাও ঘোষণা দিয়েছেন যে, এ ধ্বংসলীলা শুরু ও শেষ হওয়ার দিনক্ষণ তিনিই নির্ধারণ করেন। এখানে বিবেচ্য বিষয় দুটি। প্রথমটি হলো, যে কারণে ইতোপূর্বে বিভিন্ন জাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন, সে কারণগুলি বর্তমান বিশ্বে চরমভাবে এখনো বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত, যেহেতু ধ্বংসলীলা শুরু ও শেষ হওয়ার দিনক্ষণ তিনি (আল্লাহ) নির্ধারণ করবেন সেহেতু মরণ ব্যাধি করোনা থেকে বিশ্ব কখন মুক্তি পাবে তা এখনো আঁচ করা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা আগামী জানুয়ারি ২০২১ সালের কথা বলাবলি করছেন। কিন্তু নির্ভর করার মতো আশ্বাস কেউ প্রদান করছেন না। তবে করোনায় মৃত্যু যদি এমনিভাবে হতে থাকে ২০২১ সাল আসতে আসতে বিশ্ব সভ্যতা উজাড় হয়ে যেতে পারে। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পরম করুণাময় আল্লাহ অবশ্যই আমাদের মাফ করে দেবেন। কারণ, মাফ করাই আল্লাহপাকের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে কায়মনোবাক্যে পরিষ্কার ভাষায় অপরাধ স্বীকার করে পুনরায় অনুরূপ অপরাধ না করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই আল্লাহপাকের দরবারে মাফ চাইতে হবে।

সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে আমাদের জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। ত্রাণ নিয়ে জটিলতা আমাদের দেশের নতুন কিছু নয় এবং অন্যদিকে একটি পরিবারের খাদ্যপুষ্টি ত্রাণ থেকে কতটুকু যোগান পাওয়া যেতে পারে? করোনার কারণে প্রাপ্ত অবসর সময়টি দু’ভাবেই কাটানো যায় (১) আড্ডা মেরে, টিভিতে সিনেমা নাটক প্রভৃতির মাধ্যমে অবসর সময় কাটানো যায় অথবা (২) দেশ ও জাতি এবং নিজেদের পরিবারের জন্য এ করোনা যুদ্ধে কীভাবে টিকে থাকা যায় তার জন্য নিজেদের গন্ডির মধ্যে থেকেই সাধ্যমত চেষ্টা করা যায়। ‘যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে’ আল্লাহ তাদের ‘সফলকাম’ হিসাবে সূরাহ আল মু’মিনুন এর তৃতীয় আয়াতে উল্লেখ করেছেন। অথচ আমাদের অনেকেরই সময় কাটে পরনিন্দা পরচর্চা ও চোগলামী করে, যা সৃষ্টিকর্তা মোটেই পছন্দ করেন না। অবসর সময়কে আমরা অভিশাপ না আশীর্বাদ হিসাবে গ্রহণ করবো সেটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। তারপরও প্রতিটি ব্যক্তির নিকট পরিবার, জাতি ও রাষ্ট্রের একটি চাহিদা থাকে, কারণ পরিবার ও রাষ্ট্রই ব্যক্তিটিকে প্রতিপালন করে। স্মরণ রাখা দরকার যে, ইমাম বুখারীর বর্ণনা মতে রসুল (সা.) বলেছেন যে, ‘সুস্থতা ও অবসরতা’ মানবজাতির জন্য অন্যতম নিয়ামত।

বাংলাদেশে পলিমাটির দেশ। আবহাওয়া ও মটির উর্বরাশক্তি উৎপাদনে সহায়ক। কিন্তু দেশবাসীর চরিত্র বৈচিত্র্যময়। দাদা যে চারা রোপণ করে গিয়েছে সে গাছটি নাতি কেটে বিক্রি করে দিয়েছে কাঠ বা লাকড়ি হিসাবে। এতে নিজে উপকৃত হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে কর্তনকৃত জায়গায় অনুরূপ একটি গাছের চারা রোপণ করার উপলব্ধি নাতির মাথায় আসে না। ক্ষেত্র বিশেষে তা ভিন্ন হতে পারে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন যে, ‘আগামী কাল কেয়ামত হবে জানলেও যদি সুযোগ পাও তবে একটি গাছের চারা রোপণ কর।’ অথচ রাস্তা দিয়ে চলার পথে একটি গাছের চারা দেখলে অনেক মানুষ আছে, যারা তা মাড়িয়ে চলে যায়। ঘুণাক্ষরেও তার বিবেক বলে না যে, এ গাছের চাড়াটি একদিন ছায়া, ফল, জ্বালানি, অক্সিজেন ও কাঠ উপহার দিতে সক্ষম হবে। বিষয়গুলি সম্পূর্ণ মানবিক চিন্তা-চেতনার উপর নির্ভরশীল, চিন্তাশীল ব্যক্তিরা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য অবশ্যই চিন্তা করছেন। তবে চিন্তাশীলের চেয়ে বাকপটুদের অবস্থান রাষ্ট্রীয়ভাবে সুদৃঢ় বিধায় চিন্তাশীলদের পরামর্শ কোথাও ধোপে টিকে না। অন্যদিকে চিন্তাশীলদের একটি অংশ সরকারের তাবেদারী করে এখন ভোগবিলাসে ব্যস্ত।

চিকিৎসকরা মন্তব্য করছেন যে, ফ্যাট সৃষ্টি করে এমন খাদ্যাভাসের চেয়ে সবজি খাদ্যাভাস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক নিরাপদ। গ্রাম অঞ্চলে একটি বাড়ির আঙ্গিনার চারপার্শ্বে যে পতিত জায়গা থাকে সে মাটিতে অনায়াসেই পরিমিত সবজি চাষ করা যেতে পারে। কিছু সবজি গাছ আছে যা ঘরের চালের নিচে বীজ বপন করলে গাছটি উঠানের জায়গা দখল না করে ঘরের চালে উঠিয়ে দেয়া যেতে পারে। অনেক পরিবারে শিক্ষিত মহিলারা শহরের বাড়ির ছাদ ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করে একদিকে পরিবারের সুস্বাস্থ্যের যোগান দিচ্ছেন, অন্যদিকে পরিবারটির অর্থনৈতিক সাশ্রয় হচ্ছে। এ পদক্ষেপে সংশ্লিষ্ট পরিবারটি উপকৃত হলেও লাভবান হচ্ছে জাতি। কারণ প্রতিটি মানুষই জাতির একটি অংশ। একজন মানুষ, একটি পরিবার যখন লাভবান হয়, তখন এটা জাতিরই লাভ, কারণ এতে কিছুটা হলেও জাতির বোঝা লাঘব হয়।

জনসংখ্যার তুলনায় খাদ্য চাহিদা মিটানোর বিষয়টি মাথায়ই রেখেই বিগত সরকারগুলি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী ম্যানিফেস্টোতে উল্লেখ করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, নৈতিকতা, প্রশিক্ষণ ও সরকারের বাস্তবায়নমুখী রাজনৈতিক সাংগঠনিক পদক্ষেপের অভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা যায় নাই। তবে নাগরিকদের একটি অংশ বৃক্ষ রোপণে উৎসাহী হয়েছে। দ্বিতীয় বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লব সম্পর্কে যার একটুও চিন্তা চেতনা ছিল না এমন ব্যক্তি তৎকালীন সরকারের এম.পি/মন্ত্রী হয়েছেন। স্বনির্ভর বাংলাদেশ তথা ১৯ দফা কর্মসূচী বা পরবর্তী সরকারের ১৮ দফা কর্মসূচীতে কী লেখা আছে যে বলতে পারবে না এমন ব্যক্তিও সংশ্লিষ্ট সরকারের এম.পি/মন্ত্রী হয়েছে। ফলে দলীয় ম্যানুফেস্টো মোতাবেক রাজনৈতিক দলগুলির সাংগঠনিক ভ‚মিকা যেভাবে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তা বাস্তবায়ন না হলেও সরকারি বাজেট পুরোটাই খরচ হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজে মাটি কেটে তার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী উদ্বোধন করেছিলেন, যা ভেস্তে গেছে মর্মান্তিক ১৫ আগস্টের পরে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ১ ডিসেম্বর যশোরের উলশী যদুনাথপুরের বেতনা নদী স্বেচ্ছাশ্রমে খননের মাধ্যমে স্বনির্ভর আন্দোলনের কর্মসূচী উদ্বোধন করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, স্বেচ্ছাশ্রমে ৯০০ মাইল খাল খনন করেছিলেন। জিয়াউর রহমান দেশের যুব শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ১৯৭৭ সালের ১৮/১৯ ফেব্রুয়ারি দু’দিনব্যাপী শেরে বাংলা নগরে জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গনে একটি যুব সমাবেশের আয়োজন করেন। একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে সমাজ কল্যাণ বিভাগের মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে উক্ত জাতীয় সম্মেলনে একজন তালিকাভুক্ত ডেলিগেট হিসাবে অংশগ্রহণ করেছি, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নথিতে নিশ্চয় এর রেকর্ড পাওয়া যাবে। পরের বছর তিনি যুব মন্ত্রণালয় গঠন করেন। ১৯৮০ সালের ৩০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাম সরকার চালু করার ঠিক এক বছর পর একই দিনে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। জেলায় জেলায় যে যুব কমপ্লেক্স চালু করেন তাও পরবর্তীতে উদ্যোগ ও উদ্যমের অভাবে ফলপ্রসূ হয় নাই। উভয় রাষ্ট্রপতিই নিহত হয়েছেন দেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচ্ছিন্ন অংশের নির্মম বুলেটে। উভয় রাষ্ট্রপতির দলই পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু জনগণকে আর সেভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয় নাই। কারণ একদল আর এক দলকে ঠেকানোর জন্যই ব্যস্ত থেকেছে।

এখন জনগণকে রাজনীতি সচেতন হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধুমাত্র সরকার বা বিরোধী দলের উপর নির্ভরশীল হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। জনগণের একটি অংশ রয়েছে যারা ভাবাবেগে বা অলস জীবন যাপন করে না। নারায়ণগঞ্জ জেলায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দ এলাকায় রাস্তার দু পাশে পতিত জায়গায় ফুলগাছ লাগিয়ে একদল ফুল চাষির জীবিকা নির্বাহ করতে দেখেছি। অনুরূপ একটি এলাকায় দেখেছি যে, সরকারি রাস্তার উভয় পাশে সীম গাছের ঝাঁকা, রাস্তার উভয় পাশে সরকারি পচা ডোবায় কচুরীপানার স্তূপ করে সামান্য কিছু মাটি ফেলে দেখেছি লাউ-কুমড়া গাছ চাষ করতে। বাংলাদেশের মাটি সোনারমত খাঁটি। দেশে অনেক সরকারি পতিত জমি রয়েছে, যা বিনামূল্যে বা বিনা লীজ মানিতে সবজি উৎপাদন করতে জনগণকে উৎসাহীত করা গেলে খাদ্য ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তবে উৎপাদিত কোন ফসলের কোন ভাগ বা অংশ সরকার যদি দাবি না করে তবে প্রান্তিক চাষিরা এ মর্মে বেশি উৎসাহিত হবে। প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে পতিত জমি চাহিদা মতো বণ্টন করার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে করে সরকারি অফিসে যাতায়াতে হয়রানি না হতে হয়। অনুরূপ স্থলপথ, রেলপথের পতিত জমি ও ডোবা, এমনকি নদীর দুই পাশে পতিত জমি বাৎসরিক বণ্টন নামা ভিত্তিতে প্রান্তিক চাষিদের বিনা দাবিতে বর্গা দেয়া হোক, নিম্নবর্ণিত দুটি শর্তে (১) বণ্টনকৃত স্থানে শুধুমাত্র সবজি ও মাছ চাষ চলবে ও (২) বণ্টনকৃত জায়গার অবস্থান পরিবর্তন বা স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। অন্যদিকে বণ্টন নিয়ে চাষাবাদ না করে জমি ফেলে রাখলে একটি টোকেন বা নামেমাত্র জরিমানার বিধান রাখা যেতে পারে। আসুন, আমরা সকলেই পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য আমাদের মূল্যবান সময় ও চিন্তা-চেতনা উৎসর্গ করার ভূমিকাসহ ত্রাণের সাথে ফলমূল, সবজি প্রভৃতির বীজ ত্রাণগ্রহীতাদের নিকট পৌঁছে দিয়ে উৎপাদনে তাদের উৎসাহিত করি। নিজেদের বাঁচার কথা চিন্তা করে প্রতিটি পরিবার থেকে নিজ উদ্যোগেই এ কর্মসূচী গ্রহণ করা উচিৎ, নিজেদের স্বার্থে।
লেখক: রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন