Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের আচরণ অগ্রহণযোগ্য

প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোলের পুটখালি সীমান্তে এক বাংলাদেশী যুবককে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পরে তার লাশ ফেলে দিয়েছে নদীতে। এহেন বর্বরতা ও নৃশংসতা কেবল আগ্রাসী ও দখলদার বাহিনীর সদস্যরাই করতে পারে, প্রচলিত এমন ধারণা অনেক আগেই পাল্টে দিয়েছে বিএসএফ। সীমান্তরক্ষী বাহিনী হওয়া সত্ত্বেও সে আগ্রাসী ও দখলদার বাহিনীর মতোই আচরণ করে আসছে। এর আগেও বিএসএফ অনুরূপ আচরণ করেছে বহুবার। নজির হিসেবে ফেলানী হত্যার কথা উল্লেখ করা যায়। কাঁটাতারের বেড়া থেকে তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল বিএসএফের এক সদস্য। সীমান্তে বিএসএফের বাংলাদেশী হত্যা নিত্য ও নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুটখালি হত্যাকা-ের আগের দিনও গোদাগাড়ি সীমান্তে আরেক বাংলাদেশীকে হত্যা করে বিএসএফ। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, চলতি মাসে ৪ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে ও একজনকে পাথর মেরে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ বছরের ৭ মাসে হত্যা করেছে ২১ জনকে এবং ১০ বছরে ৬৮৪ জনকে। শুধু হত্যাই নয়, অপহরণ, ছিনতাই, ফসল ও গবাদি পশু লুট, এমনকি নারীর শ্লীলতাহানির মতো অপকর্মও বিএসএফ সদস্যরা আকসারই করে যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী বাংলাদেশী নাগরিকদের কাছে বিএসএফ মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবেই গণ্য। আগ্রাসী ও দখলদার বাহিনীর সদস্যদেরও যা করতে দ্বিধা জাগে, বুক কাঁপে বিএসএফ সদস্যরা তা অবলীলায় করে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, এ ধরনের অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি অনেকটাই নীরব দর্শকের আচরণ প্রদর্শন করে আসছে। এই বাহিনী সীমান্তে নাগরিকদের ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। তাদের সহায়সম্পদ, ইজ্জত-আব্রুও শোচনীয়ভাবে অরক্ষিত। আরো লক্ষ্যযোগ্য, সীমান্ত পথে ভারত থেকে বানের পানির মতো চোরাই পণ্য আসছে, ধুমসে মাদকসামগ্রী আসছে, আসছে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক। বিজিবি তা রুখতে পারছে না। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এই বাহিনী কি জন্য আছে?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো, এমন দাবি দু’দেশের ক্ষমতাসীনদের। তবে এ দাবি সরকার টু সরকারের ক্ষেত্রেই যে সীমাবদ্ধ ও প্রযোজ্য সেটা বলাই বাহুল্য। জনগণ টু জনগণ সম্পর্ক বলতে গেলে তলানিতে এসে উপনীত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সুসম্পর্ক ও দহরম-মহরম থেকে বাংলাদেশের মানুষ অন্তত এটুকু আশা করতে চায়, দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা ও ইস্যুগুলোর সুরাহা হবে। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ হবে, অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ে বিরোধের মীমাংসা হবে, বাণিজ্য অসমতা দূর হবে, বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত ভারতের বিতর্কিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ও টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প বন্ধ হবে, সর্বোপরি ভারতীয় বিদ্বৎ সমাজ ও মিডিয়ার একাংশের বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বন্ধ হবে। এসব ক্ষেত্রে বস্তুত কোনোই সুখবর নেই। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের কাছে ভারতের যা কিছু প্রত্যাশা, বাংলাদেশ সরকার তা অবলীলায় ভারতকে দিয়ে দিয়েছে ও দিচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ দমনে সহযোগিতা দিয়েছে, ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়েছে, বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে, বিনিয়োগ-সুবিধা ও ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়েছে। বলতে গেলে, দিতে এমন কিছু আর বাকি নেই। যে সরকার কোনো কিছু না পেয়েই ভারতকে এত কিছু দিয়েছে এবং আরো দিতে চায় সেই সরকার ভারতের কাছে ভালো না হয়ে পারে না। এই একতরফা সম্পর্কের গুণগানে ভারত সরকার বা ভারতীয়রা মশগুল থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করে আসছি, বাংলাদেশ সরকারও মশগুল। সরকারের ও সরকারি দলের অনেকের কথাবার্তা থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের মানুষের হতাশ ও উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট উদ্বোধন করেছেন। সেখানে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সরকার ও ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলাসহ পুরোহিত ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি একটিবারের জন্যও সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা, পানি সমস্যা, বাণিজ্য অসমতা ইত্যাদি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বাংলাদেশের তরফেও এ বিষয়গুলো তোলা হয়নি। অথচ এসব কথা বলার একটা সুযোগ ছিল, যা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারেনি। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা- নিন্দাযোগ্য (যার নিন্দা সবাই করেছে)। প্রশ্ন উঠতেই পারে, সীমান্তে বিএসএফের সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা- কি নিন্দাযোগ্য নয়? সীমান্তবাসী বাংলাদেশীদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকরা একমত : সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ ও নতজানু নীতির কারণেই বিএসএফ সীমান্তে সীমাহীন ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে পারছে। ভারতীয়দের একাংশ বাংলাদেশ সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলতে পারছে। এমনকি তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি প্রদর্শন করছে। ক’দিন আগে ভারতের আসাম বিধানসভার একজন বিধায়ক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন বিধানসভার অধিবেশনে। বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে শেখ হাসিনা সরকার ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে যুদ্ধ হোক। কোনো দেশের কোনো বিধায়ক অন্য কোনো দেশের প্রতি এরূপ হুমকি দিতে পারে তা কল্পনারও অতীত। ওই বিধায়কের উদ্দেশে আমরা বলে দিতে চাই যে, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিভাবে সে স্বাধীনতা সুরক্ষা করতে হয়, তা তারা জানে। যদি কোনো কারণে কোনো দেশের বাহিনী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কিংবা হামলা করে তবে এদেশের দেশপ্রেমিক মানুষ অবশ্যই তা রুখে দেবে, প্রতিরোধ করবে। জনতার জয় অবশ্যম্ভাবী। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে আমরা সরকারের ভারতনীতির আশু পরিবর্তন কামনা করি এবং জনগণকে সর্বদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতের আচরণ অগ্রহণযোগ্য
আরও পড়ুন