পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ২০২০-২১ অথাবছরটি বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। জীবন রক্ষা, খাদ্যের সরবারহ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বেকারত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষিক্ষেত্রে নানা সমস্যা, রপ্তানিমুখী শিল্পের বাজার হারানো, প্রবাসী আয়ের অধগতি, রাজস্ব আদায়ে নিন্মমুখিতাসহ নানা সমস্যা মোকাবেলায় আগামী অর্থ বছরের জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।
করোনা মহামারির কারণে দেশে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষকে খাওয়ানো, তাদের বাঁচিয়ে রাখা। তার পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগী হতে হবে। আমাদেরকে জীবনও রক্ষণ করতে হবে জীবিকার রাস্তাও তৈরি করে দিতে হবে।
২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে অর্থায়ন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে আর কোনো অর্থ বছরে এমন সংকট দেখা দেয়নি। করোনার আঘাতে অর্থনীতিতে যে বড় ধাক্কা তা সামাল দিতে একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাত দিতে হবে। এজন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল নির্ধারিত সময়ে বাজেট পেশ করবেন। এটি হবে দেশের ৪৯তম, আওয়ামীলীগ সরকারের ২১তম ও অর্থমন্ত্রী হিসাবে আ.হ.ম মুস্তফা কামালের দ্বিতীয় বাজেট। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আগামী অর্থ বছরের জন্য ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দের লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি জিডিপির ৬% ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ বিশাল ঘাটতি রাজস্ব আয় দ্বারা মিটানো সম্ভব নয়। তাছাড়া গত মার্চ মাসে এখাতে আদায় নেতিবাচক বা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ জন্য অর্থমন্ত্রণালয়কে দাতাদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে হবে। শুধু বাজেটের জন্য নয়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সরকারকে দাতাদের কাছ থেকে সাহায্য না নিয়ে কোনো উপায় নেই।
ইতোমধ্যে সারা বিশে্ব অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আর করোনার ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে থামে কেউ বলতে পারছে না। এই বৈশি^ক সংকটে আমাদেরকে আমাদের নিজস্ব বাস্তবতার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। জীবনের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের রক্ষা, রপ্তানীমুখী তৈরী পোশাক শিল্প ও শ্রমিকদের সুরক্ষা, রাজস্ব আদায়ের গতি বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন, বেকারত্ব হ্রাস এবং সর্বপরি সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দরিদ্র এবং দেশের জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ হলো অতি দরিদ্র। অর্থাৎ দেশের ১৬ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার ৩ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্র এবং ১ কোটি ৭০ লাখ অতি দরিদ্র। করোনা মহামারিতে এ দরিদ্রের হার আরও বেড়ে যেতে পারে। এই শ্রেণির লোকদের জীবন ও খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। এদের অনেকে কাজ হারাচ্ছে। বিভিন্ন উৎস থেকে তাদের আয় আসতো। সেই উৎসগুলোও কমে গেছে। তাই তাদের প্রণোদনার বিষয়টি বজেটে আনতে হবে। চলমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় কম হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আয় যত কম হোক না কেন ব্যয় কমবে না। এতে সরকারের বাজেটে ঘাটতি হলেও মানুষের জীবন বাঁচানোকে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনীতির মন্দাভাব দূর করতে, সামষ্টিক অর্থনীতির গতি ফিরে পেতে সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে, যাতে অর্থনীতিতে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা থাকে এবং তা দিয়ে অর্থনীতির চাকা ঘুরতে পারে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয় অবশ্যই থাকা উচিত তা হলো: ১. করমুক্ত আয়সীমা ৩৬০০০/- (তিন লাখ ষাট হাজার) টাকা করা উচিৎ। ২. স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অতীতের যে কোনো সময় থেকে এখাতে উল্লেখযোগ্য হারে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ৩. কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। কৃষকের মুখে হাসি ফুটাতে হবে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে জোর দেয়া উচিৎ। ৪. সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে ও এর আওতাও বাড়াতে হবে। এখানে অপচয় বন্ধ করতে হবে। অপচয় বন্ধ করলে এর আওতা আরো বাড়ানো সম্ভব। ৫. প্রশাসনিক ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যায় সংকোচন করা উচিত। ৬. কালো টাকা সাদা করার এবং উৎপাদনশীলখাতে বিনিয়োগের সুযোগ থাকতে হবে। ৭. বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বড় প্রকল্পে হাত না দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পসমূহে অর্থ বরাদ্দ দেয়া উচিৎ। ৮. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের রক্ষায় বিশেষ সহায়ক ফান্ড কার্যকরভাবে বরাদ্দ রাখতে হবে। ৯. বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত। ১০. রপ্তানি খাতের উন্নয়নের জন্য নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি বাড়ানো উচিৎ।
লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।