মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সাউথ এশিয়ান মসিটরের এক প্রতিবেদনে পূর্ব আফ্রিকায় ১৮ মাস আগে অপহরণের শিকার ইতালিয়ান সাহায্যকর্মী সিলভিয়া রোমানো সম্প্রতি মুক্ত হয়ে ইতালিতে ফিরে যাওয়ার কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। ১৭ মে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রোমানো কাজ করতেন দক্ষিণ-পূর্ব কেনিয়ায় আফ্রিকা মিলেলে নামে পরিচিত একটি ইতালিয়ান চ্যারিটিতে। ২০১৮ সালে তাকে অপহরণ করা হয় বলে জানা যায়। কোনো গ্রুপ তাকে অপহরণের দায়দায়িত্ব স্বীকার করেনি। সিলভিয়া রোমানো ইসলামে ধর্মান্তরিত হন, তার নতুন নাম হয় সিলভিয়া আয়েশা।
ইতালিয়ান সংবাদ সংস্থা এএনএসএ তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, এটি সত্য। আমি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছি। এটি ছিল আমার স্বাধীন পছন্দ। অপহরণকারীরা আমার ওপর কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ করেনি। তারা সবসময় আমার সাথে মানবিক আচরণ করেছে। আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়। আমি কখনো শারীরিক নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হইনি।
তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপে কোঁতেকে বলেন, আমি ছিলাম শক্ত ও প্রতিরোধী। তিনি বলেন, কোরআন পাঠ করার পর তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন।
তিনি তার অপহরণ তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রসিকিউটরকে বলেন, আমি কারারক্ষীদের কাছে একটি বই দিতে বলেছিলাম। তারা আমাকে ওই পবিত্র গ্রন্থটি দিয়েছিল। আমি এটি পুরোপুরি ভালোমতো পড়েছি।
তিনি বলেন, ওই পবিত্র গ্রন্থের শিক্ষা নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করার পর আমি আমার ধর্মান্তরের জন্য প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত জানাই। এটা ছিল পুরোপুরি আমার সিদ্ধান্ত। কেউ আমাকে বাধ্য করেনি। আমার বর্তমান নাম সিলভিয়া আয়েশা।
এই তরুণীর নিরাপদে ইতালিতে ফিরে আসাটা ব্যাপক আনন্দ-উল্লাসের সাথে গ্রহণ করা হয়। তাকে বরণ করে নিতে তার হোম সিটি মিলানে চার্চে উচ্চ শব্দে ঘণ্টা বাজানো হয়, প্রতিবেশীরা ব্যালকনি থেকে হাত তালি দেয়, গান করে। তিনি আগমনের সময় ঐতিহ্যবাহী সবুজ ইসলামি আফ্রিকান ঢিলা পোশাক পরেছিলেন।
বিদ্বেষমূলক প্রচারণার টার্গেট হন আয়েশা
আয়েশা বাড়ি ফেরার পরই উগ্রপন্থীদের বিদ্বেষমূলক প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। সোমবার ডানপন্থী ডেইলি টু গিওরনালের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা হয়, ইসলামি ও সুখী সিলভিয়া অকৃতজ্ঞ।
ত্রেভিসো প্রদেশের এক রাজনীতিবিদ ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে বলেন যে, আয়েশাকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। পোস্টটি দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়।
ডেইলি টু গিওরনালের প্রধান আলেসান্দ্রো স্যালুস্তি (তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি পত্রিকাটির মালিক) টুইট করেন, সিলভিয়া ফিরেছেন এবং ভালো আছেন। কিন্তু যেমনটা দেখা যাচ্ছে তা হলো, কোনো কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বন্দীর গর্ব করে নাৎসি পোশাক পরার মতো। আমি কোনোভাবেই বুঝতে পারছি না, কোনো দিনই বুঝতে পারব না।
পুলিশ মিলানের ওই রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং মিলানের একজন প্রসিকিউটর সামাজিক মাধ্যমে তাকে হুমকি দিয়ে দেয়া বার্তাগুলো তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। সমর্থকেরা বলছেন, বিষয়টি এমন হয়ে পড়েছে যে অপহরণকারীরা তাকে মুক্তি দেয়ামাত্র ইতালিয়ান বিদ্বেষ প্রচারকেরা তাকে তার বাড়িতে পণবন্দী করে ফেলেছে।
আয়েশার অপহরণের কাহিনী
সিলভিয়া আয়েশাকে অপহরণ করা হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। তুর্কি নিরাপত্তা সূত্রের মতে, তুরস্কের এমআইটি গোয়েন্দা সংস্থা ও ইতালিয়ান ও সোমালিয়ান সরকারি কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রয়াসে তাকে উদ্ধার করা হয়। ইতালি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রোমানোর অবস্থা জানার জন্য ওই এলাকায় কাজ শুরু করে এমআইটি।
তারা আরো জানায়, যৌথ প্রয়াসের পর শনিবার আয়েশাকে ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রোববার আয়েশার বাবা এনজোর উদ্ধৃতি দিয়ে কয়েকটি ইতালিয়ান পত্রিকা জানায়, এই মুহূর্তে আমি আনন্দে ফেটে পড়ছি। এখন অন্য কিছু চিন্তা করাও কঠিন। প্লিজ, আমাদের শ্বাস নিতে দিন। আনন্দ এত বেশি যে তা বিস্ফোরিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কোতেঁ বলেন, রোমানোকে মুক্ত করার জন্য যে টাস্ক ফোর্স কাজ করছিল, তারা একেবারে শেষ দিকে জানতে পারে যে তিনি এখনো জীবিত আছেন। তিনি আরো বলেন, অভিযানের ব্যাপারে আপস না করতে চাওয়ার কারণে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
ইতালিতে ইসলামফোবিয়ার উত্থান
বর্তমান ইতালিতে উগ্রপন্থীদের সবচেয়ে বড় উদ্দীপনা বিবেচিত হন অরিয়ানা ফালাচি। এই ইতালিয়ান সাংবাদিক মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন। ১১ সেপ্টেম্বরের পর ইসলামবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে তার রচনাবলী নতুন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
তিনি তিনটি গ্রন্থ লিখেছেন- দি রেজ অ্যান্ড প্রাইড, দি ফোর্স অব রিজন, ওরিয়ানা ফালাচি ইন্টারভিউজ হারসেলফ। এসব বইয়ে তিনি মুসলিমবিশ্বকে ‘আমাদের বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত শত্রু’ হিসেবে অভিহিত করে ইউরোপকে হুঁশিয়ার করে দেন যে সতর্ক না হলে ইউরোপ ‘ইউরাবিয়া’য় পরিণত হবে।
ফালাচি এই পরিভাষাটি গ্রহণ করেন মিসরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক বাত ইয়ের (গিসেলে লিটম্যানের ছদ্মনাম) ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে। তার এই বক্তব্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় যে মুসলিমরা ব্যাপকভাবে অভিবাসনের মাধ্যমে ইউরোপকে ‘ইসলামিকরণ’ করার পরিকল্পনা করছে।
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার এক সপ্তাহ পর ২০০১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মিলানভিত্তিক পত্রিকা করিয়ের ডেলা সেরা ‘লা রাব্বিয়া ই ল’ওরগোগলিও’ বা ‘রেজ অ্যান্ড প্রাইড’ শিরোনামে ৫ পৃষ্টার একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। এতে ফালাচি অভিযোগ করেন যে ইসলাম ও মুসলিম অভিবাসন প্রশ্নে পশ্চিমা জগত খুবই নমনীয়।
তিনি যুক্তি দেন যে ইতালিতে মুয়াজ্জিন, মিনার, ভুয়া মদ্যপানবিরোধিতাকারী, তাদের চু... মধ্যযুগ, এবং তাদের চু...চাদরের কোনো জায়গা নেই।
মৃত্যুর কয়েক মাস আগে দেয়া ফালাচির একটি বক্তব্য বিখ্যাত হয়ে আছে: আমি চিয়ান্তি মসজিদের মিনার উড়িয়ে দিতে রাজি আছি। আমি যেহেতু তাদের দেশে ক্রস পর্যন্ত পরতে পারি না, কাজেই গিয়ত্তুর ভূমিতে ২৪ মিটার উঁচু মিনারও দেখতে চাই না। সূত্র: গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।