পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকারণে দেশে শাকসবজি, তরিতরকারি ও মৌসুমী ফলসহ কৃষিপণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয়েছে। এখনো এ প্রতিক্রিয়া অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস ইত্যাদি ফল পাঁকতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায়, এই বিপুল পরিমাণ ফলফলরি নিয়ে চাষিরা মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পতিত হয়েছে। শাকসবজি, তরিতরকারি, তরমুজ, বাঙ্গী প্রভৃতি পরিবহন ও বাজারজাত করতে না পারায় চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অধিকাংশই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। করোনাকারণে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ, গৃহে অবস্থান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় এসব কৃষিপণ্য কিনতে যেমন ক্রেতা পাওয়া যায়নি। তেমনি দেশের দূরদূরান্তে এসব পণ্য পরিবহন ও বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি। বিধিনিষেধ মেনে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু পণ্যের বেচাকেনা হয়েছে মাত্র। অতঃপর আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস প্রভৃতি ফলের চাষিরা একই কারণে বড় রকমের ক্ষতির আশংকা করছে। এখনো পরিবহন বন্ধ, ক্রেতার আনাগোনা বন্ধ, বিকল্প পরিবহন ও বাজারজাতকরণে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, ফলে স্বভাবতই ব্যাপকভাবে ফল নষ্ট ও চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। আশংকার এই প্রেক্ষাপটে কৃষিমন্ত্রণালয় ফল বিপণনে কিছু কর্মপন্থা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষিমন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি মৌসুমে ২২ লাখ ৩২ হাজার টন আম, ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টন কাঁঠাল, ২ লাখ ৩২ হাজার টন লিচু ও ৪ লাখ ৯৭ হাজার টন আনারস উৎপাদিত হবে। মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পরিবহন বন্ধ থাকায় ও ফল ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি না থাকায় তিন পার্বত্য জেলাসহ অন্যান্য জেলায় ফল চাষিরা ফল বিক্রী করতে পারছে না। তারা যাতে তাদের উৎপাদিত ফল বিক্রী করতে পারে, যাতে ফলের পরিবহন ও বাজারজাতকরণ যতটা সম্ভব মসৃণ হয় সেজন্যই কৃষিমন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এ মুহূর্তে মাঠ পর্যায়ে ফলের ক্রেতাগমন যেমন দরকার তেমনি ফলের ন্যায্যমূল্যও অত্যাবশ্যক। এর জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ফলের পরিবহন ও বাজারজাতকরণ নিশ্চিত হওয়া দরকার। এ লক্ষ্যে কৃষিমন্ত্রণালয় যে ১০ দফা পন্থা নির্ধারণ করেছে তা হলো : ১. ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়াদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা। প্রয়োজনে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যায়নপত্র প্রদান ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা। ২. ফল ও কৃষিপণ্য পরিবহনে ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা। পরিবহনে সমস্ত আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে সব রকমের হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থা করা। ৩. বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহারের ব্যবস্থা নেয়া। ৪. স্থানীয় ব্যাংকের সময়সীমা বাড়ানো। ৫. পার্সেল ট্রেনে ফল ও কৃষিপণ্য পরিবহনের আওতা বাড়ানো ও হিমায়িত ওয়াগন ব্যবহার করা যায় কিনা, তা দেখা ৬. ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হ্রাস করা। ৭. ত্রাণ হিসাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে আম, লিচু ও অন্যান্য মৌসুমী ফল অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, তা দেখা। ৮. অনলাইন ও ভ্যানযোগে ছোট ছোট পরিসরে কেনাবেচার উদ্যোগ নেয়া। ৯. প্রাণ, একমি, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যারা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে জুস, ম্যাংগোবার, আচার, চাটনি প্রভৃতি তৈরি করে, তাদের বেশি বেশি আম-লিচু কেনার অনুরোধ জানানো। ১০. ফলে কেমিক্যাল ব্যবহার রোধের ব্যবস্থা করা। উল্লেখ করা যেতে পারে, ফল ও কৃষিপণ্য বাজারকরণের বিষয়ে গত পরশু এক অনলাইন মত বিনিময়সভায় কৃষিমন্ত্রী, সাবেক কৃষিমন্ত্রী, কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অংশ নেন। ওই মতবিনিময় সভায় বর্ণিত কর্মাপন্থাগুলো তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রসঙ্গত তিনি আরো জানান, মৌসুম ফল সঠিকভাবে বাজারজাত করা না গেলে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে দেশের বেশিরভাগ মানুষ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি ট্রাকের জ্বালানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়ার পরামর্শ দেন। এই সঙ্গে পুলিশ ব্যারাক, সেনাবাহিনীর ব্যারাক, হাসপাতাল, জেলখানাসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে চাষিদের কাছ থেকে আম কিনে সরবরাহ করার তাকিদ দেন।
প্রতিবছরই দেশে শাকসবজি, তরিতরকারি, মৌসুমী ফল বিভিন্ন ফলচাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়ে। অধিকাংশ পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। এবারও অনেক এলাকায় টমাটো খেতে শুকিয়ে গেছে। তরমুজ ফেলে দিতে হয়েছে। বস্তা বস্তা বেগুন ১৫-২০ টাকাতেও বিক্রী হয়নি। এবার করোনাকারণে পরিস্থিতি অন্যান্যবারের তুলনায় নাজুক হয়েছে। পক্ষান্তরে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে এসব পণ্যের সংকট ও উচ্চমূল্য প্রত্যক্ষ করা গেছে। প্রায় সব সময় উৎপাদক ন্যায্যমূল্য পায় না অথচ প্রান্তিক ক্রেতাকে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে হয়। এই বৈপরীত্যের কারণ ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের বেপরোয়া মুনাফা শিকারের প্রবণতা এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া এবং ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি। এবার ক্রেতা নেই, পরিবহন নেই, চাঁদাবাজিও নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে চাষিদের উদ্ধার করতে হবে, ফলসহ কৃষিপণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণ যতটা সম্ভব নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তা নাহলে শুধু চাষিরাই মহাক্ষতির শিকার হবে না, পণ্যাধিকার থেকে ক্রেতাভোক্তারাও বঞ্চিত হবে। এর ফলে আগামীতে শাকসবজি, তরিতরকারি ও ফলফলারি উৎপাদনে চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনোমূল্যে চাষিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।