Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলমানরা করোনা ছড়াচ্ছে দাবিতে ভুয়া সংবাদের ঝড়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

ভারতে, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করছে। মুসলমানরা লকডাউনের আদেশ অমান্য করেছে এবং ভাইরাস ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারনা চালানো হচ্ছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে এসব নিয়ে হিন্দুদের টিটকারির কারণে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষও হয়েছে।

ভারতে বসবাসরত প্রায় ২০ কোটি মুসলমান বসবাস করে। তারা প্রায়শই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি বা ‘ইন্ডিয়ান পিপলস পার্টি’) নেতৃত্বে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়। হিন্দুদের আধিপত্য এবং হিন্দুদের জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এমন একটি আদর্শ হ’ল হিন্দুবাদ, যা বিজেপির অন্যতম প্রধান বিশ্বাস।

এর ফলে সৃষ্ট ইসলামফোবিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণ জাল তথ্য বের হয়, যা প্রায়শই জাতীয়তাবাদী মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং কখনও কখনও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি প্রকৃত সহিংসতা ও আগ্রাসনের জন্ম দেয়। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল যখন ১৩ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে নয়াদিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজ মসজিদে তাবলিগী জামায়াতের একটি সমাবেশ চলাকালীন বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এপ্রিলের প্রথমদিকে, ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারা এই প্রাদুর্ভাবের জন্য মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের দোষ দিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, সমাবেশটি ভারতের ১৭ টি রাজ্য জুড়ে ১০২৩ টি সংক্রমণের জন্য দায়ি। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামফোবিয়া ও বিদ্বেষের এক তরঙ্গ উঠে আসতে শুরু করে। ‘কোরোনাজিহাদ’, ‘নিজামুদ্দিনইডিয়টস’ এবং ‘ব্যানজাহিলজামাত’ (জামায়াত আন্দোলন নিষিদ্ধ করো) এর মতো হ্যাশট্যাগগুলো ব্যবহার করে প্রায়শই ভুয়া ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে দাবি করা হয় মুসলমানরা কোভিড -১৯ প্রসারে চেষ্টা করছে।

এদিকে, করোনাভাইরাস পরীক্ষা এবং লোকজনকে কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের হুগলীতে হিন্দু আর মুসলমান - উভয় সম্প্রদায়ের দোকান, বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ আর বোমাবাজি হয়েছে। রোববার প্রথম উত্তেজনা তৈরি হলেও পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর থেকে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। গঙ্গা পাড়ের ওই এলাকায় বোমাবাজি আর আগুনের ধোঁয়া নদীর অন্য দিক থেকেও দেখা গেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলি বলছে, কয়েকদিন আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার একটি শিবির করা হয়েছিল তেলেনিপাড়া এলাকায়। পরীক্ষায় প্রথমে একজন আর তারপরে আরও কয়েকজনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ঘটনাচক্রে তারা সকলেই মুসলমান। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকার অধীন তেলেনিপাড়া এবং লাগোয়া ভদ্রেশ্বর আর চন্দননগরের উর্দিবাজার এলাকায় বুধবার নতুন করে সংঘর্ষ হয় নি, কিন্তু উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়। এখনও পর্যন্ত তিন দফায় মোট ১১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ূন কবীর।

ওই অঞ্চলে চটকল আছে, আর সেখানে হিন্দু এবং মুসলমানদের বসবাসের এলাকা মোটামুটিভাবে আলাদা। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলছিলেন, ‘ক্যাম্পটা মুসলমান প্রধান এলাকায় হয়েছিল, তাই স্বাভাবিকভাবেই পজিটিভ এলে মুসলমানদেরই হবে। কিন্তু সেটা নিয়ে হিন্দুদের একাংশ মুসলমান বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। মুসলমানরাই করোনা ছড়াচ্ছে বলে টিটকিরি দেয়া হয়।’

তবে গোটা ঘটনার আরেকটা বর্ণনাও পাওয়া গেছে হিন্দুত্ববাদীদের কাছ থেকে। তারা বলছেন করোনা সংক্রমিতরা কোয়ারেন্টিনে যেতে অস্বীকার করছিলেন বলেই হিন্দু প্রতিবেশিরাক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সংক্রমণ তাদের মধ্যেও ছড়াতে পারে এই আশঙ্কায়। তাদের বক্তব্য সেজন্যই ব্যারিকেড করে দেয়া হয় ওই এলাকাটি।

কিন্তু এলাকার মুসলিমরা জানায় মুসলিম প্রধান এলাকাটি কেউ ব্যারিকেড তুলে বন্ধ করে দিয়েছিল, ফলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তার পরেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় মঙ্গলবার দুপুরে। ব্যাপক বোমাবাজি চলে, দোকান বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

চটকল অধ্যুষিত এলাকাটিতে হিন্দু এবং মুসলমানদের বসবাসের এলাকা মোটামুটিভাবে আলাদা।
যেসব ছবি নানা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে হিন্দু-মুসলমান - উভয় পক্ষেরই দোকান বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে বোমাবাজির ব্যাপারে একে অন্য পক্ষের ওপরে দায় চাপাচ্ছেন। ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে যাতে কেউ গুজব ছড়িয়ে অশান্তি না বাড়াতে পারে। বিজেপির স্থানীয় সংসদ সদস্য লকেট চ্যাটার্জি পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ করেছেন। সূত্র : ফ্রান্স ২৪, বিবিসি।

 

 

 



 

Show all comments
  • Tawhid Rahman ১৫ মে, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়,পরিকল্পিত মুসলিম হত্যা কান্ড, ঘর বাড়ি জ্বালানো, এগুলো মাসটার প্লান । আললাহ ছাড়া এদের বিচার কে করবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Hanif Raihan ১৫ মে, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    দাঙ্গা হয়েছে যে এলাকায়, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা আফতাব সুলতানের কয়েকটি ঘর পর থেকেই শুরু হয়েছিল ঘর-বাড়ি পোড়ানো।
    Total Reply(0) Reply
  • Prakash Mondal ১৫ মে, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেলেও ধর্মীয় হিংসার ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায় নাই। মানুষ কবে বুঝবে আমরা সবাই মানুষ, মিলেমিশে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir H. Siddiqi ১৫ মে, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    ইন্ডিয়া ধ্বংসের জন্য বিজেপি -এ যথেষ্ট, বহিঃশক্তির দরকার নাই। নিজেদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে দিয়েছে, জাতীয়তার ধোঁয়া তুলে। অথচ ইন্ডিয়া যুক্তরাষ্ট্র (ইউনিয়ন), বহু জাতি - বহু সংস্কৃতিই ইন্ডিয়ার বৈচিত্র্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Rayhan Uddin ১৫ মে, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
    বিশ্বের এই ক্লান্তি সময়ে কোন ধর্মের মধ্যে এত হিংসা নেই, কিন্তু ভারতে এরকমই হিংসাত্মক আসলেই ন্যক্কারজনক! বিশ্বের এই ক্লান্তি সময়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ঐক্য হয়ে মানবতার উদারতা দেখানো উচিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারতে, এতে কি বুঝা যায় ভারতে এখনো সভ্যতা এবং মানবতার রূপান্তর হয়নাই। এত উন্নত আবহাওয়ার মধ্যেও যারা সভ্য হতে পারে নাই তারা আর কখন সভ্য হবে। পরিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Maruf Rasel ১৫ মে, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    এত সচেতনতার সময়েও দাঙ্গার মতো ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটে!! ভেবে অবাক লাগে। এ দাঙ্গা বোধহয় থাকবেই, যতই সভ্য কিংবা ভব্য হই কাগজে-কলমে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ababil Mahmud ১৫ মে, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    ভারত ততদিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ দেশ ছিল যতোদিন কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলমান রয়েছে। সাথে সাথে ভারত বিগত দশ বছরের তুলনায় অর্থনৈতিক সূচকে নিচের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শুধু মাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সারা দেশে অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে রেখেছে এই মোদী সরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • JD Khan ১৫ মে, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    এই পৃথিবীতে ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক নোংরা ছোটলোক নিচু মনমানসিকতার একটি দেশ ভারত যাকে আমরা ঘোয়াল ঘর বলি,
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাসনাত বিন হাসান ১৫ মে, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    পশ্চিমবঙ্গে এটা আশা করিনি। আমাদের এপার বাংলা থেকে সম্প্রীতির শিক্ষা নাও দাদারা! সাম্রদায়িকতার নিচু মানসিকতার হামলা থেকে বাঁচাতে মাথায় পাগড়ি বেঁধে তোমাদের জাতিভাইদের ধর্মপালনে নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ মাসুম দামপাটুলি ১৫ মে, ২০২০, ৬:২৩ এএম says : 0
    এই মোধির গোবর বাহিনীকে সায়স্তা করার জন্য একজন সুলতান মাহমুদ গজনবি দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১৫ মে, ২০২০, ৮:৪৭ এএম says : 0
    এই সমস্থ হিন্দুরা বড় নিম্ন জাত। ওদের কাজ মিত্যা বলা। ওরা আল্লাহ তা'আলার নিকৃষ্ট বান্দা ওদের জন্য হাবিয়া দোজখ। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • nasirul islam ১৫ মে, ২০২০, ৯:২৬ এএম says : 0
    THOSE COW WARSHIPER THEY ALUAWS BLAME SOME BODY THIS CAVID 19 IS ALLOVER THE WORLD TOTAL 184 COUNTRYS SO STOP BLAIMING MUSLIM YOU IDIOT HIDUS WHO WARSHIP COW IN 21ST CENTURY THE DUMMET PUPIL IN THE PLANET
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ