Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যসেবায় টেলিমেডিসিনের গুরুত্ব বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০২০, ১২:০৫ এএম

করোনাভাইরাস মহামারীতে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনে গৃহবন্দি কোটি কোটি মানুষ। স্বাভাবিক যোগাযোগ ও জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ায় ক্ষুদ্র-বৃহৎ সব ব্যবসায় উদ্যোগ ও কর্মসংস্থান অচল হয়ে আছে মাসের পর মাস। এখন এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। এ সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সেবা এবং সাধারণ রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনাবলী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ডাক্তারের মৃত্যু এবং শত শত ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবায় এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক ডাক্তারই চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়ে এখন টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়েছেন। যদিও টেলিমেডিসিন কখনো সামনাসামনি রোগী দেখার মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র দেয়ার উত্তম বিকল্প নয়। তথাপি গণপরিবহন বন্ধ, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বকালীন সময়ে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতেই হচ্ছে। এমনিতেও তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে দেশে টেলিমেডিসিন সেবা সম্প্রসারিত হচ্ছিল। এখন করোনা সঙ্কটকালে টেলিমেডিসিন পরিষেবাই হয়ে উঠেছে ডাক্তার ও রোগীদের মধ্যকার সেতুবন্ধন। এ ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতি সাধারণ দরিদ্র মানুষটিও গ্রামে বসে ঢাকা শহরের স্বনামধন্য ডাক্তারের সাথে ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যবস্থাপত্র ও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছে। স্বাভাবিকভাবে এটা পাওয়া তাদের পক্ষে অনেক ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝক্কিপূর্ণ ব্যাপার ছিল। তবে জরুরি চিকিৎসা সেবায় অনাকাক্সিক্ষত হয়রানি, বিড়ম্বনার অবসান হওয়া প্রয়োজন। টেলিমেডিসিন সেবা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গুরুতর রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে ডাক্তাররা পিছপা হবেন না, এটাই প্রত্যাশিত।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ তার জীবনযাত্রা ও প্রয়োজনীয়তার পরিধিকে সীমিত করে আনলেও খাদ্য, ওষুধ পথ্য ও পরিধেয়বস্ত্রের মতো মৌলিক প্রয়োজন থেমে থাকে না। রেস্টুরেন্ট, মার্কেট-শপিংমলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনলাইনে কেনাকাটা একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়। করোনাভাইরাসে ব্যবসায় ও কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা সীমিত হয়ে পড়ার পরও এই করোনাকালে অনলাইন কেনাকাটা তিনগুণ বেড়েছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ই-ক্যাব) প্রায় ১২০০ সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই করোনাকালে মাত্র দেড়শ প্রতিষ্ঠান এ সময়ে ব্যবসা করতে পারলেও শতকরা ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিপুল বিনিয়োগ এবং লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ই-ক্যাবের নেতারা। তবে অনলাইন মার্কেট সাইটগুলোর পাশাপাশি ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এখন পণ্যের প্রমোশন ও বিপণন বাড়ছে। এই সম্ভাবনাময় খাতটির বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাঁচিয়ে রাখতে তারা সরকারি প্রণোদনা এবং সহজশর্তে ঋণসুবিধার দাবি জানিয়েছেন। পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতায় ক্রসবর্ডার ই-কর্মাস, ও ভার্চুয়াল মার্কেট প্লেসের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে আগামী বছর এ খাতে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার কথা বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। এ সেক্টরের উদ্যোক্তাদের সেবার পরিধি বিস্তৃত করার পাশাপাশি পণ্যের মান, স্বচ্ছতা এবং সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
করোনাকালে দেশের প্রায় সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রতিটি সেক্টরেই সীমিত পরিসরে অনলাইন বা ভার্চুয়াল ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ই-কর্মাস ও অনলাইন কেনাকাটার পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। এহেন সঙ্কটকালে প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের রুটিন ঠিক রাখতে এ ব্যবস্থা অন্ধের যষ্টির মতো কাজ করছে। বিশ্বে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ার বহু আগেই আমাদের দেশে রেডিওর মাধ্যমে দূরশিক্ষণ ব্যবস্থার ঐতিহ্য চালু রয়েছে। বিচার ব্যবস্থায়ও ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হয়েছে। লাখ লাখ মামলা জটের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভার্চুয়াল কোর্ট আলো দেখাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের আওতায় সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ ভিত্তিক তথ্য পরিষেবা চালুর ধারাবাহিকতায় মোবাইল ফোনে থ্রিজি অনলাইন সংযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক প্রকার বিপ্লব সাধিত হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুসারে এখনো ই-গভর্নেন্সসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলেও সরকারের নীতি সহায়তা কাজে লাগিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। টেলিমেডিসিন, শত শত কোটি টাকার অনলাইন কেনাকাটা, হাজার হাজার কোটি টাকা অনলাইন ব্যাংকিং ও পেমেন্ট থেকে শুরু করে ভার্চুয়াল শিক্ষা ও বিচার কার্যক্রম এবং কৃষকের কাছ থেকে সরকারি ধান ক্রয়ে অ্যাপভিত্তিক কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে দেশে ডিজিটাল রেভ্যুলেশন ঘটে চলেছে। চলমান করোনাসঙ্কটে ঘরবন্দি মানুষের চাহিদা পূরণে ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্য অর্জন অনেকটাই ত্বরান্বিত হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে সময়োপযোগী পরিকাঠামো ও নীতি-কৌশল গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত, কম খরচে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • jackali ১৫ মে, ২০২০, ১:৩২ পিএম says : 0
    How many people do have internet access on their mobile phone??? how many people are literate to use Telemicine ????? we need to set up testing camp in every union so we can test thousands and thousands of people.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন