Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোজায় খাবার গ্রহণ ও বর্জন

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২০, ১২:০৬ এএম

রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস হলেও এ মাসেই খাবারের মহোৎসব শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশে আমরা একটু বেশি বেপরোয়া। তবে এ সময় ভোজনে অসতর্কতা আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। রমজান মাসে ইফতার থেকে সেহেরীর শেষ সময় পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। অন্যথায় দিনের বেলায় পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়ে সমস্যা হতে পারে। সেহেরীতে বেশি মশলা ও লবণযুক্ত খাবার খাবেন না। এসব খাবার রোজা রাখা অবস্থায় পিপাসা বাড়িয়ে দেয়। এর পরিবর্তে সবজি ও ফল খাওয়া যেতে পারে। এতে থাকা জলীয় অংশ বেশিক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে। রমজান মাসে খাবার গ্রহনে সতর্কতা অবল¤¦ন করতে হবে। বিশেষ করে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারী করার সময় আমরা বিভিন্ন পানীয় গ্রহন করে থাকি। হোটেল রেস্টুরেন্ট বা ফুটপাতে যে সব পানীয় শরবত হিসাবে পরিবেশন করা হয় তার অধিকাংশ পানীয়তে বরফ মিশানো হয়ে থাকে। এক জরিপে দেখা যায় যে, এ সব বরফ আসে মাছ হিমায়িত করার জন্য যে বরফ ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকে। আর মানুষ মারা যাওয়ার পর যে বরফ ব্যবহার করা হয় মূলত এ সব উৎস থেকে বরফ বিভিন্ন শরবতের দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং হোটেলে সরবরাহ করা হয়। আবার এ সব তৈরী করা হয় নদীর দূষিত পানি দ্বারা। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারীর সময় ভুলেও এ জাতীয় শরবত দিয়ে ইফতারী করবেন না। এ ছাড়া ফালুদাতেও এ ধরনের বরফ ব্যবহার করা হয়। এ সব পানীয় বা খাবার গ্রহন করলে পেটের পীড়া সহ যে কোনো ধরনের অসুখ হতে পারে। ইফতারে পান করতে পারেন বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি ও ফরমালিন মুক্ত ফলের রস। সবচেয়ে ভাল হয় শুধু এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ইফতারী শুরু করা।
আমাদের দেশে ইফতারীর একটি অপরিহার্য অংশ মুড়ি। মুড়ির আকার বড় এবং রং সাদা করার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। ইউরিয়া হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরিয়েজ এনজাইম মানবদেহে না থাকায় মানুষ ইউরিয়া হজম করতে পারে না এবং ইউরিয়া দেহেই থেকে যায়। ইউরিয়া খেলে এসিডিটির সমস্যা থেকে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই মুড়ি খেতে হবে রয়ে সয়ে এবং দেখে শুনে। সাদা মুড়ি বর্জন করে হাতে ভাজা মুড়ি খাওয়া উচিত। হাতে ভাজা মুড়ি এবং ইউরিয়া মুক্ত, মুড়ির রং সামান্য হলদেটে হয়ে থাকে।
অপরিমিত কফি বা চা পান থেকে বিরত থাকুন। সেহেরীর সময় চা এবং কফি সম্পূর্ণ বর্জন করবেন। কারণ কফি বা চায়ে বিদ্যমান ক্যাফেইন এর ডাইয়্যুরেটিক কার্যকরীতার জন্য শরীর থেকে একটু বেশী পানি বের হয়ে যায়।
অনেকেই সেহেরী ও ইফতারে কার্বোনেটেড ও চিনিযুক্ত কোমল পানীয় পান করেন। এসব কার্বোনেটেড ও চিনিযুক্ত কোমল পানীয় এবং এনার্জি ড্রিংকস্ দেহ থেকে অধিক পানি বের করে দিয়ে দেহে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। তাই ইফতার ও সেহেরীতে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। রোজাদারগণ অনেকেই সাহরীর সময় দুধকলা অথবা আম দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে থাকেন। কলা খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে কলাতে কার্বাইড মেশানো হয়েছে কি না? এ জন্য কলা কেনার সময় দেখে শুনে কিনতে হবে। কার্বাইডে পাকানো কলার বোটা হালকা সবুজ থাকে এবং কলার খোসা বা উপরিভাগ দাগহীন পরিস্কার হলুদ রঙের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক কলা কখনোই এ রকম দাগহীন পরিস্কার হলুদ রঙের হয় না।
ইফতারী করার সময় আমাদের আলু চপের চেয়ে ডিম চপের দিকে নজর বেশী থাকে। বাজারে ডিম দিয়ে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বিদেশ থেকে পাচারকৃত কৃত্রিম ডিমও দেখতে পাওয়া যায়। রমজান মাসে বেশী লাভের আশায় এ সব কৃত্রিম ডিমের বিক্রি বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই ইফতারীর সময় বাজার থেকে ক্রয়কৃত ডিম চপ বা ডিমের সামগ্রী না খাওয়াই উত্তম। অধিকাংশ ফলেই ফরমালিন এবং রাসায়নিক পদার্থ মিশানো হয়। তরমুজের ভিতর ইনজেকশন আকারে কৃত্রিম লাল রঙ প্রবেশ করানো হয় যাতে তরমুজ কাটার পর টক টকে লাল দেখা যায়। যদি কোনো স্থানে রাসায়নিক পদার্থ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে যথাযথ পরীক্ষা করার পর কিনতে পারেন, অন্যথায় ফল না খাওয়াই ভালো। সারাদিন রোজা রাখার পর এ সব ফল ইফতারী বা অন্য সময় খেলে আপনার কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এসব কারণে দেশে দিন দিন কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শষা ও ক্ষীরা এ জাতীয় ফলে এখনো ফরমালিন মিশানোর খবর পাওয়া যায় নি। এ ছাড়া ছোট চিনি চম্পা কলা এবং বিচি কলা খাওয়া যেতে পারে অনেকটা চিন্তামুক্ত ভাবে। তাই দামি ফলের পরিবর্তে এ সব ফল খেতে পারেন।
কিডনি রোগীদের মধ্যে যারা রোজা রাখতে পারেন তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিন সমৃদ্ধ ভাজাপোড়া ইফতারী একদম ঠিক নয়। শুধুমাত্র বিশুদ্ধ পানি দ্বারা ইফতারী শুরু করা উচিৎ। এরপর সুগন্ধি চাল বা স্বাভাবিক চালের নরম ভাত খাওয়া ভাল। কিডনী রোগীরা অধিক প্রোটিন জাতীয় খাবার পরিহার করবেন। কোনো অবস্থাতেই ডাল খাবেন না। যাদের কিডনীর অবস্থা খুবই খারাপ তাদের ক্ষেত্রে জীবন বিপন্ন করে রোজা রাখার আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করা উচিৎ। রোজাদারদের মধ্যে যারা হোটেলে খাবার গ্রহন করেন তারা কখনোই হোটেলে মুরগী খাবেন না। মুরগীর পরিবর্তে মাছ ও সবজি বা ডিম খেতে পারেন। রমজান মাস সংযম ও ত্যাগের মাস। অধিক পরিমাণ খাবার গ্রহণ থেকে আমাদের সবার সংযমী হতে হবে। রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের কথা বার্তা ও দৈনন্দিন কাজ কর্মে প্রকৃত সংযমী হয়ে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে।
ডা. মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইলঃ ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইলঃ [email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন