পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই সংক্রমণ বাড়ছে। অফিসিয়ালি মৃত্যুর হার এখনো কম থাকলেও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। করোনা লক্ষণযুক্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন হটলাইনে যোগাযোগ করলেও খুব কম সংখ্যক মানুষ করোনা টেস্টের আওতায় আসছে। এরপরও ১০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। গতকাল ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭৯০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন দেশে সাধারণ ছুটির মধ্যেই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার শ্রমিকের সমাগমে সরগরম হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাসের হটস্পট, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর। ইতিপূর্বে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় ডেকে করোনা সংক্রমনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার মধ্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই থেকে সামাজিক সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এখন ঈদকে সামনে রেখে মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। আগামী ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে মার্কেট ও শপিংমল খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং গতকাল মসজিদগুলো খুলে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানো পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন অত্যন্ত কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য কয়েক হাজার মানুষ গ্রেফতার করেছে, সেখানে আমাদের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রায় সবকিছু খুলে দিয়ে শিথিল করার সিদ্ধান্ত যে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এমনিতেই মার্কেট ও শপিংমল খোলার ঘোষণার পর থেকেই রাজধানী যেন আগের ব্যস্ত অবস্থায় ফিরে গেছে। হাজার মানুষের পদচারণা, প্রাইভেটকার, রিক্সা ও নানারকম যানবাহনে যানজটের চিত্র দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
মার্কেট খুলে দেয়া বা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় সরকারের সিদ্ধান্তের পেছনে কিছু যুক্তি হয়তো আছে। ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার বিষয়টি অগ্রাহ্য করা না গেলেও, মানতে হবে যে, অর্থনীতির চেয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবন অনেক বেশি মূল্যবান এবং লাখ লাখ মানুষের চিকিৎসা দেয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। কারণ আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সবকিছু খুলে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের শামিল। করোনাভাইরাসের কার্যকর প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত না হওয়ায় লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে অবলম্বন করা হচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে মাসের পর মাস ধরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ এবং কঠোরভাবে লক-ডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের মত ঘনবসতি, অনুন্নোত, অপ্রতুল ও অকার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইতালি, আমেরিকা বা বৃটেনের মত করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়লে কী অবস্থা দাঁড়াতে পারে তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। এমনিতেই কর্মহীন মানুষের খাদ্য সংকটসহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ও লক-ডাউন নির্দেশনা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্ত গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়া এবং ঈদ উপলক্ষে মার্কেট খুলে দেয়ার ঘোষণার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। যানবাহন ও লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির তরফ থেকেও ঈদ উপলক্ষ্যে অঘোষিত লকডাউন শিথিল, সীমিত পরিসরে মার্কেট ও শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার আহবান জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে।
রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ৪৮টি থানা এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। হাজার হাজার বাড়ি লকডাউন, স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের চেষ্টা করা হলেও এখনো সংক্রমণ ঊধ্বর্মুখী। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে প্রতিদিন আরো ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে কোভিড-১৯ টেস্টের আওতায় আনতে পারলে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা নি:সন্দেহে আরো বহুগুন বেশি হতো। করোনা উপসর্গ নিয়ে বিনা চিকিৎসায় প্রতিদিন যেসব মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। এহেন বাস্তবতায় ঈদের আগে মার্কেট ও শপিংমল খুলে দিয়ে মানুষকে বাজারে ঠেলে দেয়ার ফলাফল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা পুনরায় ভেবে দেখতে হবে। সাধারণ ছুটি ও লক-ডাউনের মধ্যেও লাখ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিককে কাজে যোগদানে বাধ্য করার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান হারে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ার মধ্যেই মার্কেট-শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে বিশেষজ্ঞরা যুক্তিসঙ্গত বলে মেনে করছে না। খাদ্যের প্রয়োজনে দরিদ্র মানুষের রাস্তায় ভীড় করা, জরুরী সেবাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার খুলে দেয়া আর ঈদের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়া এক কথা নয়। শত শত ডাক্তারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য সদস্য ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে কোটি মানুষের গৃহবন্দী অবস্থায় মার্কেট ও শপিংমল খুলে দেয়ার পরিণতি অগ্রাহ্য করা যায় না। যেখানে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিকরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছে না, সেখানে অসংখ্য মার্কেট-শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি মানা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। পাশাপাশি মসজিদও খুলে দেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, মার্কেট, শপিংমল এবং মসজিদ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।