Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। লক-ডাউনের কারণে শিল্পকারখানা, যানবাহন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে সউদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের তেল রফতানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতির উপর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এহেন বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা বড় ধরনের সঙ্কটে পড়তে চলেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সউদী আরব থেকে ১০ লক্ষাধিক শ্রমিক দেশে ফেরত আসার দু:সংবাদ ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অভিবাসী বাংলাদেশীরাও ভিসা জটিলতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছে। বলাবাহুল্য, প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল ভিত্তি। করোনা মহামারীর তাÐবে বিশ্বঅর্থনীতির বিরূপ প্রভাবের শিকার হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা কর্মহীন হলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এহেন বাস্তবতায় প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগসহ সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই। তবে করোনা মহামারিতে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কিছু দু:সংবাদের পাশাপাশি কিছু সুসংবাদও আছে। আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ অনিবন্ধিত প্রবাসী শ্রমিকদের নিবন্ধনসহ মানবিক উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা যায়।
করোনা মহামারীর বিস্তার থেমে নেই। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই শত শত বাংলাদেশী নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অবকাঠামো উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় লাখ লাখ প্রবাসী কর্মী কর্মহীন গৃহবন্দিত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়েছে। এসব কর্মহীন বাংলাদেশী শ্রমিকের খাদ্যসহ বেঁচে থাকার জন্য ন্যুনতম চাহিদা নিশ্চিত করা যেমন দেশগুলোর দায়িত্ব, একইভাবে প্রবাসীদের সমস্যার প্রতি খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া বাংলাদেশ মিশনগুলোরও অন্যতম দায়িত্ব। করোনা সঙ্কটে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের গৃহবন্দী প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে কোনো কোনো প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা গেলেও বাংলাদেশ মিশনগুলোর ভূমিকা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। তবে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের বিশেষ কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের ভূমিকা বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই কিছু তৎপরতার কথা শোনা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আব্দুল মোমেন গত ২২ এপ্রিল ওআইসির এক্সিকিউটিভ কমিটির সাথে টেলিকনফারেন্সে কর্মহীন শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর আগে তাদেরকে অন্তত ৬ মাসের বেতন পরিশোধ করে ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন বলে গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা এসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করে এসেছে। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটে কর্মহীন শ্রমিকদের ন্যুনতম অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, মানবিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা নিয়োগকারি দেশগুলোর দায়িত্ব। তা পালন না করে যদি এ মুহূর্তে তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয় তবে করোনা পরিস্থিতির যেমন চরম অবনতি ঘটবে, তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আমরা আশা করব, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আমাদের শ্রমিকদের মানবিক এ দিকগুলো বিবেচনা করে, তাদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী কর্মীদের আকামা বা ভিসা জটিলতাসহ নানাবিধ সমস্যা দীর্ঘদিনের। করোনা পরিস্থিতির আলোকে সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে পূর্নমূল্যায়ন ও সমাধানের ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে। ওআইসি এক্সিকিউটিভ কমিটিতে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নের তাগিদ ও দৃষ্টি আর্কষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগ কিছুটা হলেও প্রত্যাশা জাগিয়েছে। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করা জরুরী। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির লাখ লাখ মানুষ নিজেদের ভিটা মাটি বিক্রি করে প্রবাসে কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমায়। এসব শ্রমিক এখন কাজ হারিয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসলে, তা তাদের পরিবার ও দেশের জন্য অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হবে। এহেন বাস্তবতায় প্রথমত প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান রক্ষায় বিকল্প উদ্যোগের সন্ধান করতে হবে। দেশে ফেরত পাঠানো শ্রমিকদের ন্যুনতম ৬ মাসের বেতন-ভাতাসহ আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয় শতকরা ২৩ শতাংশ কমবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থার তরফ থেকে প্রেডিক্ট করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে প্রত্যাবর্তন কমিয়ে আনার পাশাপাশি ওআইসির কোভিড-১৯ পেন্ডেমিক রিকোভারি ফান্ড গঠন ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মানবিক সমাধান নিশ্চিত করা গেলে তা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে। জনশক্তি রফতানিকারক দেশ হিসেবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • borhan ১১ মে, ২০২০, ৪:০০ পিএম says : 0
    Many workers having working in the gulf, we are requesting financial support for them...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রবাসী


আরও
আরও পড়ুন