পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সমাজকে মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বহিনীর ভূমিকা এখন অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ ব্যস্ত জঙ্গি নিয়ে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। রাজধানীতে বেড়ে গেছে মাদকের বেচাকেনা। যেসব এলাকায় জঙ্গি ইস্যুতে পুলিশের নজরদারি আছে সেসব এলাকায় মহাসড়ককে বেছে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে প্রকাশ্যে চলছে মাদক ব্যবসা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকার ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সচ্ছল পরিবারে ঢুকে পড়েছে মাদক। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ বরাবরই জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন খুবই কম দেখা যায়। বরং পুলিশকে ম্যানেজ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান সব সময়ই অব্যাহত আছে। নিয়মিতই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চালানসহ ধরা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, সমাজকে কলুষিত করা মাদক ব্যবসা ও সেবনকে কেবল আইন দিয়ে রোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেটা আমরা করছি কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে।
একসময়ে মনে করা হতো কেবলমাত্র রাজধানী বা দেশের বড় বড় শহরেই হয়ত মাদকের ছোবল তীব্রতর। এখনকার বাস্তবতা আর সেখানে নেই, বরং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। কেন এবং কিভাবে এর বিস্তৃতি তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। এক সময়ে মনে করা হতো কেবলমাত্র সীমান্ত দিয়েই সমাজ বিধ্বংসী এই গোপন ঘাতক প্রবেশ করছে। এখন দেখা যাচ্ছে দেশেও এর উৎপাদন হচ্ছে। এ কথা সবার জানা, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক আসতো আর মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাসহ টেবলেট ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করত। পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আসছে কত আর ধরা পড়ছে তার কত অংশ? কিছুদিন আগে এমন অভিযোগও উঠেছে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তার কুইচ্ছায় সায় না দিলে মাদকের মামলায় জড়িয়ে দেবার হুমকি দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগও রয়েছে, মাদক উৎপাদন, চোরাচালান এবং নেটওয়ার্কের সাথে সরকারের একশ্রেণীর প্রভাবশালীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলে যে সংস্থাটি রয়েছে এটির ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে প্রকৃতই কর্মক্ষম কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় কিনা সে প্রশ্নও রয়েছে বিভিন্ন মহলে। বলাবাহুল্য, মাদকের অবৈধ ব্যবসার সাথে অবৈধ অর্থের লেনদেন থাকার কারণে এর সাথে নানা মহলের অবৈধ এবং অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এর মাশুলই দিচ্ছে দেশের জনগণ। মাদকের করাল গ্রাস এখন ফুটপাত থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই বিস্তৃতিই বিস্তৃত নেটওয়ার্কের স্বীকৃতি দেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত উদাসীনতার কারণেই সমাজে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। মাদক ব্যবসা নিয়ে খোদ রাজধানীর কোন কোন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হবার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ এবং এ থেকে হত্যার মত ঘটনার খবর তো রয়েছেই।
যদি মনে করা হয় যে, কথিত জঙ্গি দমনে ব্যস্ত থাকার কারণে মাদকের ব্যাপারে এক ধরনের শৈথিল্য চলছে তাহলে সেটি হবে আত্মঘাতী। মাদকের আগ্রাসন জঙ্গি দমনের চেয়ে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, মাদক এবং সন্ত্রাস পরস্পরের হাত ধরে চলে। একটি অপরটির সম্পূরক। মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সিন্ডিকেট নিয়মিতভাবে সন্ত্রাসীদের লালন করে। দেশে দেশে মাদকের পেছনে যে কুচক্রীমহল রয়েছে তারা মূলত সংঘবদ্ধ। সমাজে যে সামগ্রিক ধস নেমেছে তার সাথে মাদকের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে পুলিশের কর্মকর্তা যথার্থই বলেছেন, কাজটি তাদের একার নয়। এজন্য সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠা প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, মাদক নিয়ন্ত্রণে যদি শৈথিল্য থাকে অথবা এর সাথে যদি প্রভাবশালীদের সম্পর্ক থাকে তাহলে কোনো প্রতিরোধই কার্যকর হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ এবং প্রয়োজনীয় ধর্মীয়শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সমাজে এই মূল্যবোধ দিনদিন সংকুচিত হয়ে আসছে। সেকারণে মাদক নিয়ন্ত্রণে সার্বিক আন্তরিকতার কোন বিকল্প নেই। কেবল কথায় নয়, কাজে সকলে আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।