পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস একদিকে যেমন পুরো বিশ্বকে গ্রাস করে চলেছে, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে এর প্রতিরোধে প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরাও দিন-রাত গবেষণা করে যাচ্ছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের উদ্ভাবিত প্রতিষেধকের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বৃটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত টিকার পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ টিকা দুইজনকে দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞানী দল এ টিকার সাফল্য নিয়ে খুবই আশাবাদী। তারা আশা করছে, এ টিকার ফলাফল দ্রুত পাওয়া যাবে এবং তা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাবে। যুক্তরাজ্য গতকাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা টিকারও ব্যবহার শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আবিষ্কৃত টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে। এছাড়া অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীরা করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই করোনা প্রতিরোধে কার্যকর প্রতিষেধক পাওয়া যাবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, যে কোনো রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে একযুগের মতো সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা স্বল্পতম সময়ে অনেক দূর এগিয়েছে।
গবেষণা কার্যক্রম থেকে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। গবেষকদের অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা মূলত এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে রয়েছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই আমাদের বিজ্ঞানীরা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে। তারা সেসব দেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে সীমিত সুবিধার মধ্যেও আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। বিশেষ করে ওষুধ শিল্পে তারা যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। উন্নতমানের ওষুধ আবিষ্কার করে তা বিদেশেও রফতানি করছে। দ্রুততম সময়ে করোনা শনাক্তকরণ কিট আবিষ্কারও করেছে। আশা করা যায়, করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজও আমাদের নামী ওষুধ কোম্পানিগুলো শুরু করবে। তবে সারাবিশ্বে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার এবং তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে, এদিকে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে তীক্ষ্ম নজর রাখতে হবে। কোনো ওষুধ সাফল্য পেলে, তা কত দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থায় যুক্ত করা যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের স্মার্ট ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও এ নিয়ে গবেষণা শুরু করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীরা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে, তারাও প্রতিষেধক আবিষ্কারে সক্ষম। এক সময় কলেরায় কেউ আক্রান্ত হলে অসংখ্য মানুষ মারা যেত। এর কোনো প্রতিষেধক ছিল না। আমাদের দেশের আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে অত্যন্ত সহজ প্রক্রিয়ার স্যালাইন আবিষ্কার করে কলেরা নিরাময় করে। করোনার ক্ষেত্রেও হয়তো দেখা যাবে, এমনই সহজ কোনো টিকা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। করোনার টিকা আবিষ্কারের যাবতীয় খরচ বহনের ঘোষণা দেয়া বিল গেটসও এমনটি ধারণা করছেন। যত দ্রুত করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়, ততই বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদেরও এ গবেষণা চালিয়ে যাওয়া জরুরি। এজন্য সরকারের তরফ থেকে বিজ্ঞানীদের যথাযথ সহযোগিতা করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ওপর করোনার নেতিবাচক প্রভাব কত তীব্র ও দীর্ঘ হতে পারে, তা এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে। এর কুফল যে সুদূরপ্রসারী হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের উন্নতির অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে, জনস্বাস্থ্য কতটা সুরক্ষিত। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা উন্নত, তা করোনার ব্যাপক সংক্রমণ এবং তা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখেই বোঝা গেছে। এটাও বোঝা গেছে, আমরা যতই উন্নতির কথা বলি না কেন, মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অত্যন্ত পিছিয়ে রয়েছি। যে কোনো ধরনের মহামারী বা দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সরকারকে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে দেখা যায়। করোনা এর বাস্তব পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে। যে কোনো বড় ধরনের ঘটনা শেখার দৃষ্টান্ত স্থাপনের পাশাপাশি সমস্যা নিরসনে উদ্যোগী হতে সাহায্য করে। করোনার কারণে যে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা এবং প্রচন্ড চাপে পড়ার বিষয়টি স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে। অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে, এখন থেকেই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হতে হবে। পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। এর সংশ্লিষ্ট গবেষণা কাজে জোর দিতে হবে। এজন্য বিজ্ঞানী ও গবেষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা সামাল দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।