পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বুধবার হঠাৎ করেই ভারতীয় সূত্রের বরাতে বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশে আর্মি পাঠাচ্ছে ভারত। খবরটির গুরুত্ব বিবেচনায় সূত্র অনুসন্ধান করে একাধিক ভারতীয় প্রভাবশালী গণমাধ্যমে সংবাদটি চোখে পড়লো। সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদটি হলো, করোনা মোকাবিলায় ভারত পাকিস্তান বাদে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে র্যাপিড রেসপন্স টিম পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। করোনা মোকাবিলায় র্যাপিড রেসপন্স টিমের কথা বলা হলেও যাদের সমন্বয়ে এই টিম গঠিত হবে তাদের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন বলে ধারণা পাওয়া যায় সংবাদটিতে। কারণ, ইতোমধ্যে তারা মালদ্বীপ এবং কুয়েতে এ ধরনের দুটি টিম পাঠিয়েছিল, যেখানে কুয়েতের টিমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। ফলে এই সংবাদটি গুরুত্ব বাড়িয়েছে এবং মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাসহ যেসব দেশে ভারত এই টিম পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে সেগুলো প্রত্যেকটি স্বাধীন দেশ। ফলে একটি স্বাধীন দেশে অন্য দেশ থেকে সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য পাঠাতে হলে (যুদ্ধ ছাড়া) পূর্ব থেকে দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনা, সম্মতি ও সমঝোতার বিষয় থাকে। বাংলাদেশসহ উল্লিখিত দেশগুলো ভারতের কাছে এমন সহায়তা চেয়েছে, এমন তথ্য মিডিয়ায় এখনো আসেনি। তাছাড়া উল্লিখিত দেশগুলোর কোনোটিই ভারতের স্যাটেলাইট/কলোনি রাষ্ট্র নয় যে, ভারত চাইলে নিজ ইচ্ছায় উক্ত দেশগুলোতে সেনাসদস্য সমন্বিত কোনো টিম পাঠাতে পারে। তবুও ভারতের পক্ষ থেকে এককভাবে এমন প্রস্তুতি দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেকে সুপার পাওয়ার বা ডমিনেটিং পাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষাজাত বলে মনে হতে পারে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও দেখেছি, বিভিন্ন দেশে দুর্যোগে সহায়তা দিয়ে নেভি/যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে। বাংলাদেশেও কয়েকটি দুর্যোগ মোকাবিলায় মার্কিন নেভির প্যাসিফিক কমান্ডকে আসতে দেখেছি। কিন্তু সেগুলো বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাওয়ার পর ঘটেছে।
ভারত যদি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোনো প্রকার সহায়তা দিতে চাইতো তাহলে ডাক্তার ও মেডিক্যাল সহায়তাই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু তারা আর্মি সদস্যদের সমন্বয়ে টিম পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়ায়, জনমনে ধারণা হতে পারে যে, এই সহায়তার একটি সামরিক মাত্রা থাকতে পারে। অবশ্য ভারত ইতোপূর্বে বাংলাদেশকে কিছু মেডিক্যাল সহায়তা করেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রীভা দাস গাংগুলি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৩০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক ও ১৫ হাজার সার্জিক্যাল হেড কভার দিয়েছে। মূল্য বিচারে একটি সার্জিক্যাল মাস্কের প্রকৃত দাম ৩ টাকা ও হেড কভারের দাম ৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়া ভারতীয় সহায়তার পরিমাণ টাকার অঙ্কে দেড় লাখ টাকার বেশি নয়! তবুও ট্রেন্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে এই নিউজ ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। তবে টাকার অঙ্ক যাইহোক, ভারতের এই সহায়তার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
তবে স্মর্তব্য যে, করোনা আঘাত করার পর ভারতের থেকে অপেক্ষাকৃত বেশ খানিকটা ক্ষুদ্র অর্থনীতির বাংলাদেশ বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ চায়না সরকারকে ১০ লাখ হ্যান্ড গ্লাভস, ৫ লাখ ফেস মাস্ক, দেড় লাখ হেড কভার, হ্যান্ড সেনিটাইজার ১ লাখ, সু কাভার ৫০ হাজার এবং ৮ হাজার গাউন উপহার পাঠিয়েছে। বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চায়না সরকার ও বিভিন্ন চাইনিজ বেসরকারি সংস্থা বিপুল পরিমাণ বর্তমান সময়ে অত্যন্ত দুর্লভ ও মূল্যবান টেস্ট কিটসহ মেডিক্যাল সহায়তা পাঠিয়েছে। এখনো সহায়তা করে যাচ্ছে নানাভাবে। তবে এর জন্য তারা কোনো চাইনিজ আর্মি পাঠায়নি।
তবে শুধু চায়না নয়, বাংলাদেশ সরকার করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় বন্ধুপ্রতীম দেশ মালদ্বীপ, ভুটান, কুয়েতসহ আরো কয়েকটি দেশে মেডিক্যাল ও খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে। এর মধ্যে মালদ্বীপে ২০ হাজার পিপিই সেট, পাঁচ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ৯৬০টি নিরাপত্তা চশমা, ৪০ কার্টন জরুরি ওষুধ ও প্রায় ৮৫ টন খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। ভুটানের রাজার অনুরোধে সেদেশে ১০ লাখ মাল্টিভিটামিন গোল্ড ও ৫ লাখ ভিটামিন-সি ট্যাবলেট পাঠিয়েছে। কুয়েতে একটি মেডিক্যাল টিমসহ চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে। এছাড়াও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের কাছে মেডিক্যাল সহায়তা চেয়েছে এবং বাংলাদেশ সেগুলো বিবেচনা করছে।
করোনা মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় প্রেক্ষাপটে ভারত এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাতিক্রমী সাফল্য অর্জন করেনি। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে ভারতীয় র্যাপিড রেসপন্স টিম পাঠানোর প্রস্তুতি এদেশের মানুষ ভালভাবে গ্রহণ করেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই তারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ এজন্য যে, তারা দ্রুতই ভারতীয় আর্মির সমন্বয়ে গঠিত র্যাপিড রেসপন্স টিমের সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক নিউএজকে বাংলাদেশের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, করোনা মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর টিমের সহায়তা বাংলাদেশের প্রয়োজন নেই। নিউএজকে টেলিফোনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই সহায়তার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং, আমরাই বিভিন্ন দেশে সহায়তা টিম পাঠাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী কুয়েতে মেডিক্যাল টিম পাঠিয়েছে। এছাড়াও চায়না, মালদ্বীপ ও ভুটানে সহায়তা পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের এই দৃঢ়তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসিত হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।