পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
হাফিজ মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন (৪৪) দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের রাজ্যের বিদার জেলার হুমনাবাদে তার বন্ধুর বাড়ি থেকে কিছু শাকসবজি তুলতে গিয়েছিলেন। পথে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার স্কুটারে থামিয়ে দিয়েছিল। নাসিরুদ্দিন বলেন, একজন পুলিশ অফিসার তাকে মুসলমান বলে লাঞ্ছিত করে এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তাকে দোষারোপ করে, তাকে প্রায় এক ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছিল। সে সময় অন্যান্য যানবাহনও রাস্তায় ছিল, তিনি বিশ্বাস করেন যে, শুধু ধর্মের কারণে তাকে থামানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ইমাম, তাই টুপি, জোব্বা পরে থাকি এবং আমার দীর্ঘ দাড়ি আছে। পুলিশ আমাকে মারতে শুরু করে এবং বলতে থাকে যে আমার এবং আমার সম্প্রদায়ের কারণেই এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে।’ এ বিষয়ে বিদার জেলার পুলিশ সুপার নাগেশ ডি এল বলেছেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলাকালীন ওই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’ নাসেরুদিন বলেছিলেন যে, তিনি হাসপাতাল থেকে পুলিশকে একটি বিবৃতি দেয়ার জন্য ফোন করেছিলেন, কিন্তু নাগেশ দাবি করেছেন যে তারা কোনও অভিযোগ পাননি। নাসেরুদিন একা নন। ভারতে বিস্তৃত করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে মুসলিমদের দায়ী করে প্রচারণা চালানোয় রাস্তায় এবং অনলাইনগুলিতে ইসলামফোবিক আক্রমণের টার্গেট হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ রাজধানী নয়াদিল্লিতে মুসলিম পরিবারগুলিতে রেশন কিট বিতরণকারী স্বেচ্ছাসেবীরা বলেছেন যে, তারা পুলিশের কাছ থেকে হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে এবং তারা বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে। পাঞ্জাবে, মুসলিম দুধ উৎপাদকরা বলছেন যে তাদের গ্রামবাসীরা হুমকি দিয়েছে, তাদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে এবং লোকেরা তাদের পণ্য কিনতে কিনতে ভয় পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের ক্ষমতায়নের উপর তার জোর দেয়ায় মুসলিমরা তাদের নিজের দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো বোধ বোধ করেছে। মোদির অধীনে, সংখ্যাগরিষ্ঠ-মুসলিম রাজ্যটি থেকে স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদাকে ছিনিয়ে নিয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বে আসাম রাজ্যের প্রায় ২০ লাখ মানুষ বিতর্কিত জাতীয় নিবন্ধন থেকে বাদ পড়েছে এবং নতুন একটি বিভাজক নতুন আইন করা হয়েছে যা প্রতিবেশী তিনটি দেশের অমুসলিম আশ্রয়প্রার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়। দিল্লিতে যার বিরোধিতা করায় মুসলমানদের উপরে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। সমালোচকরা বলছেন, আইনটি সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার উদাহরণ। এমন পরিবেশেই একটি মুসলিম দলের সমাবেশ কেন্দ্র করে মুসলমানরা ভারতের করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজ মসজিদ তাবলিগে যোগ দেয়া মুসল্লিরা, যারা লকডাউনের কারণে সেখানে আটকা পড়ে গিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ভারতে করোনা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ, লকডাউন ঘোষণার পরেও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যা ভ্রমণ করেছিলেন এবং হিন্দু আচারে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তার সাথে কমপক্ষে ২০ জনের কাছাকাছি মানুষ ছিল। তাবলিগী জামায়াতের বৈঠক নিয়ে টুইটারে বিজেপি’র তথ্য ও প্রযুক্তি ইউনিটের প্রধান অমিত মালভিয়া এই সমাবেশকে ‘ইসলামী বিদ্রোহ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। রাজ্য স্তরের বিজেপির আইন প্রণেতা সংগীত সোম বলেছিলেন যে, বৈঠকটি ‘করোনার জিহাদ’ এবং বিজেপির সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি টুইটার এবং স্থানীয় টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ‘তালিবানি অপরাধের’ অভিযোগ করেছিলেন। তারপেরই ‘করোনা জিহাদ’, ‘ক্রাশতবলীগিস্পিটারস এবং ‘বায়োজিহাদ’ সহ ইসলামোফোবিক হ্যাশট্যাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। গুজব, ভুল তথ্য এবং ভিডিওর মাধ্যমে মুসলমানরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোভিড -১৯ ছড়িয়েছিল সে দাবি করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ম্যাগাজিন হার্ডনিউজের সম্পাদক সঞ্জয় কাপুর বলেছেন, তাবলীগে আগত বিদেশীদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত, যদিও সরকার বলছিল যে তারা করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত দেশ থেকে আগতদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নকভি বলেছিলেন, প্রত্যেকের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ধর্মীয় অধিকার ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সুরক্ষিত’। নকভি হয়রানি ও আক্রমণকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, ‘এই সমস্ত কাজ করা লোকের ঠিক নয়।’ তিনি ভারতকে সেখানকার মুসলমানদের স্বর্গ বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ তিনি নিজেই জামায়াতকে ‘তালিবানি অপরাধ’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।