Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

করোনা ও গ্রামীণ অর্থনীতি

ড. মোহা. হাছানাত আলী | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫৩ পিএম

বিশ্বে মহামারী করোনায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২২ লক্ষাধিক মানুষ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে করোনা আক্রান্ত মানুষ ও মৃত্যুর সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি। এখন পযর্ন্ত করোনা চিকিৎসায় বিশ্বের নামি দামি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও ঔষধ কোম্পানিগুলো আশাবাদী হবার মতো কোনো সুসংবাদ বিশ্বকে দিতে পারছেন না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ লকডাউনে স্থবির। বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে স্বস্তিতে থাকার মতো কোনো পরিস্থিতি এখন পযর্ন্ত দেশে দৃশ্যমান হয়নি। দেশে প্রথম বারের মতো সিলেটের একজন তরুণ চিকিৎসক করোনা আক্রান্তে মারা গেছেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যেই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের দৈন্য দশা প্রকাশ পেয়েছে। দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে তুলনায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি হতাশাজনক। এখনও অধিকাংশ ক্ষেত্রে করছি, আর করা হবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশে সাধারণ ছুটি ও এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে থাকতে অনেকটা বাধ্য করা হচ্ছে। যদিও তা করতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে এটা ছাড়া আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করার মতো আর কোনো পথ রাষ্ট্রের হাতে খোলা নেই। দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর বহু সংখ্যক শ্রমিক ও দিন মজুর উৎসবের আমেজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র প্রটোকল উপেক্ষা করে ঢাকা ছেড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো। যদিও ছুটি ঘোষণার মূল উদ্যেশ্যটা ছিলো মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখা। কিন্তু কাজ হলো তার উল্টোটা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গেল না সমন্বয়হীনতার কারণে। সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেল। আর আজ তো তা আস্তে আস্তে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নতুন করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, আক্রান্ত মানুষ মৃত্যু বরণ করছে। নতুন নতুন এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর ইনকাম প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। বিভিন্ন তথ্য অনুসারে সরকারি সাহায্য চলমান তবে তা অনেকাংশেই প্রয়োজনের তুলনায় কম। লকডাউনের কারণে রাস্তায় রিক্সা, ভ্যান ও ব্যাটারি চালিত অটো চলাচল প্রায় বন্ধ। এমতাবস্থায় তাদের আয় কমেছে। কিন্তু পারিবারিক ব্যয় একই থাকায় সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে ত্রাণের চাল চুরির মচ্ছব। ফলে সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। সামনে রোজা। মুসলমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উদযাপন। কলকারখানায় কাজ নেই। হাট-বাজার, বিপণিবিতানগুলো বন্ধ। স্বল্প আয়ের মানুষগুলো পড়তে যাচ্ছে এক দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চিত আর্থিক সংকটে। কবে দেশ স্বাভাবিক হবে। কল কারখানায় উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে, পথ ঘাটে মানুষের চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক হবে তা এই মুহূর্তে কারো জানা নেই। কিছুদিন পরেই বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রচুর ধানকাটা শ্রমিকের প্রয়োজন। রাস্তা ঘাট বন্ধ, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাওর অঞ্চলে সময়মত কৃষি শ্রমিক পাওয়া না গেলে কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কৃষি বিভাগকে এখনই ভেবে দেখতে হবে। তাছাড়া এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকেও তাদের কর্মপস্থা এখনই নির্ধারণ করে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় কৃষি অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।
করোনা মহামারীর কারণে ইতোমধ্যেই আমাদের দেশের গার্মেন্ট, পযর্টন ও পরিবহন খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিমান চলাচল আজ হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটন, পরিবহন ও গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকরা ব্যাপকহারে চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। শ্রমিক শ্রেণির ইনকামের উপর গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান অনেকাংশেই নির্ভর করে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ রিক্সা চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। লকডাউনের পর শহর ফাঁকা। আয় বন্ধ। তারাও এখন গ্রামে আর্থিক সংকটে পড়েছে। দেশের বহুসংখ্যক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে। তারাও ঘরবন্দি। রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ। গ্রামের অনেক পরিবারই রেমিটেন্সের টাকার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং এই মুহূর্তে গ্রামীণ অর্থনীতি ব্যাপক হুমকির মধ্যে পড়েছে। গ্রামীণ কৃষিকে যে কোনোমূল্যে বাঁচাতে হবে। বিনা সুদে প্রকৃত কৃষকের মধ্যে কৃষি লোন প্রদানের ব্যবস্থা করা আশু প্রয়োজন। আগামী তিন মাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা এখন সময়ের দাবি। তবে তা অবশ্যই আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে। যে কোনমূল্যে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও শষ্যের বিপণন ব্যবস্থা সচল রাখা খুবই জরুরি। তাই সময় থাকতে এখনই গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে স্বাভাবিক রাখার কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে আর শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে।
লেখক: প্রফেসর, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন