পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্যাংক খাতকে অস্থির, আস্থাহীন ও অকার্যকর করে তোলার একটি অশুভ তৎপরতা অনেক দিন ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে। সেটা এখন চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দুদকের এক মামলার সূত্রে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম এবি ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি বদরুল হক খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাইজিং স্টিল মিল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণের সোয়া তিন শ’ কোটি টাকা আদায় না হওয়ার অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মানিক লাল দাশ চট্টগ্রামে ডবলমুরিং থানায় আগের দিন যে মামলা দায়ের করেন, সেই মামলায় বদরুল হক খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলায় সহঅভিযুক্তরা হলেন রাইজিং স্টিল মিলের মালিক বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, তার ভাই আমজাদ চৌধুরী, এবি ব্যাংকের সাবেক এমডি ফজলুর রহমান ও জামিলা নাজনীন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তাকে তার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করার ঘটনায় ব্যাংক খাতের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বলে শীর্ষ নির্বাহীরা ইনকিলাবকে জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর বিরূপ প্রভাব পড়বে ব্যাংক খাতে। তাদের মতে, অর্থনীতির সব খাত ধ্বংসের পর বাংলাদেশের আর্থিক খাত ধ্বংসের ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এমনটা করা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়নসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ব্যাংক খাতের ভূমিকা ও অবদান অনস্বীকার্য। সবল-শক্তিশালী ব্যাংক খাত সার্বিক জাতীয় উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। দুঃখজনক হলেও লক্ষ করা যাচ্ছে, এই খাতকে অস্থিতিশীল, ভঙ্গুর ও বিপর্যস্ত করে তোলার অপতৎপরতা চলছেই। দেশের জন্য নিঃসন্দেহে এটা একটা অশনি সঙ্কেত।
ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। বেসিক, অগ্রণী, জনতা প্রভৃতি ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা কারো অবিদিত নেই। বিদেশে টাকা পাচারের প্রসঙ্গ আছে, যেখানে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের নামও রয়েছে। কিন্তু ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য কারা প্রকৃতপক্ষে দায়ী তা নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ সেভাবে নিতে দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংক খাতেও এক প্রকার রাজনীতিকীকরণ হয়েছে। ঋণ ও বিভিন্ন সুবিধা নেয়ার পর্যায়ে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা প্রভাবশালীরা ঋণ ও সুবিধাদির অধিকাংশই হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রভাব বা হস্তক্ষেপের কারণে অনেক সময় নিয়ম রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়ে। কিন্তু যখন কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে তখন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ঘাড়েই সব দায় চাপে। তাদের গ্রেফতার কিংবা চাকরিচ্যুত করা হয়। দুদকের মামলায় এ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শীর্ষ নির্বাহী ও কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা হয়রানির শিকারে পরিণত করা হয়েছে। দুদকের কাজকর্ম নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এমন অভিযোগ পুরনো। বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের ভূমিকা ও দৌরাত্ম্যের কথা কারো বিস্মৃত হওয়ার কথা নয়। সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাওয়ার’ অবস্থান থেকে দুদক এখনো সরে আসতে পারেনি। দুদক ব্যাংক খাতের মামলা- মোকদ্দমা নিয়ে যা কিছু করছে, পর্যবেক্ষকদের মতে, তা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাত ধসে পড়বে। আশঙ্কার এই বিষয়টি সরকারের এখনই আমলে নেয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।
ব্যাংক খাতকে অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত করে স্বচ্ছ-সাবলীল ও মসৃণ করা জরুরি। এ জন্য অনিয়ম-দুর্নীতির যেসব ঘটনা ঘটেছে তার অনুপুঙ্খ তদন্ত ও বিচার হওয়া দরকার। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণগুলো শনাক্ত করে তা দূর করার ব্যবস্থা না নিলে যা কিছুই করা হোক না কেন, সুফল পাওয়া যাবে না। ব্যাংক খাতে শীর্ষ নির্বাহী ও কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে কিংবা চাকরিচ্যুত করে বিদ্যমান পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটানো যাবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম ও কর্মপ্রক্রিয়ায় সব ধরনের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ রহিত করা অত্যাবশ্যক। বিশ্লেষকরা আর্থিক খাত ধ্বংসে ভারতীয় তৎপরতার যে অভিযোগ এনেছেন সেটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং তা খতিয়ে দেখে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা প্রশ্নাতীত। এটা খুবই বিচলিত হওয়ার মতো বিষয় যে, অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অবনমন ঘটছে। লাগাতার সন্ত্রাসী হামলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির শোচনীয় অবনতি, অনিরাপত্তার শঙ্কা, আইনের শাসনের অভাব, সুবিচার প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা প্রভৃতি কারণে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে। রফতানি আয় কিছুটা বাড়লেও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তা কমে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। অন্যদিকে জনশক্তি রফতানি আয়ও হ্রাসমান। এমতাবস্থায় ও অন্যান্য কারণে ব্যাংক খাতও চাপের মুখে আছে। এখন যদি এই খাত আরো চাপে পড়ে, অস্থিরতার মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং তার কার্যকারিতা সংকুচিত হয় বা কমে তবে দেশকেই তার কঠিন মাশুল দিতে হবে। এ কথা কারো অজানা নেই। ব্যাংক খাতে বিনিয়োগযোগ্য হাজার হাজার কোটি টাকা রয়েছে। এ টাকা বিনিয়োগে আনা গেলে, ব্যবসা-বাণিজ্যে কাজে লাগানো গেলে সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। এই বিবেচনা সামনে রেখে এ খাতকে সুস্থির, স্থিতিশীল ও কার্যকর করে তুলতে হবে। এর পূর্বশর্ত হিসেবে সর্বাগ্রে এ খাতের নির্বাহী ও কর্মকর্তাদের মধ্য সৃষ্ট ভীতি-আতঙ্ক দূর করতে হবে, একটা অভয় পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।