পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারি হিসাবে এবার সারাদেশে বোরোধানের আবাদ হয়েছে ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার বোরোধানের বাম্পার উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। দ্রুত কাটা শেষ করতে না পারলে সারাদেশে বিশেষ করে হাওর এলাকায় বন্যা হানা দিতে পারে এবং তাতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। উৎপাদন কমে যেতে পারে, যা দেশের খাদ্যে মজুদ ও খাদ্য সংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বোরোধান কাটার ব্যাপারে শ্রমিকসঙ্কট সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ফি বছরই এই মওসুমে কৃষিশ্রমিকের অভাব দেখা দেয়। এ বারের পরিস্থিতি ভিন্নরকম হওয়ায় শ্রমিকসঙ্কট আরো তীব্র আকার নিয়েছে। করোনাসংক্রমণ মহামারী আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এবং গোটা দেশ কার্যত লকডাউনে থাকার কারণে শ্রমিকদের চলাচল ও স্থানান্তর সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রেন, বাস, লঞ্চ বন্ধ। উপরন্তু সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নির্দেশ সবাইকে মেনে চলতে হচ্ছে। এ অবস্থায়, বোরোচাষীরা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। শ্রমিক না পেলে তারা ধান কাটতে পারবে না। ধান কাটতে না পারলে জমিতেই পাকা ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অথবা বন্যায় ডুবেও যেতে পারে। হাওর এলাকার অবস্থা তুনলামূলকভাবে অধিকতর নাজুক। হাওর এলাকায় এবার ৯ লাখ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হবে মনে করছে কৃষকরা। কিন্তু শ্রমিকসঙ্কটের কারণে তারা ধান কাটতে পারছে না। ইতোমধ্যে ১০ শতাংশের মতো ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে না পারলে তাদের ক্ষতির কোনো সীমা থাকবে না। চলতি সপ্তাহে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বন্যা ফোরকাস্টিং ও ওয়ার্নিং সেন্টার। সেন্টারের তরফে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলে ও ভারতের আসামের বেশির ভাগ এলাকায় ২৪ এপ্রিলের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সিলেট অঞ্চলের নদনদীর পানি ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে। এই পানি হাওর এলাকায় ঢুকে ধানের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করতে পারে।
হাওর এলাকার কৃষকরা এখন গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। হাওর এলাকায় বোরোধানই একমাত্র ফসল। এই ধানের ওপর নির্ভর করে হাওর এলাকার জীবনযাত্রা নির্বাহিত। ধান মার গেলে তাদের দুর্দিনের শেষ থাকবে না। তারা সম্পূর্ণ নিরালম্ব হয়ে পড়বে। ক’বছর আগে ভরা ফসল তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে গেলে তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছিল। কয়েক মাস যাবৎ তাদের জন্য খাদ্যসহায়তা চালু রাখতে হয়েছিল। এবারও তাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে একই সঙ্কট-সমস্যায় পড়তে হবে। এ মুর্হূত কৃষিশ্রমিক সরবরাহ করা সম্ভব হলে তাদের ধান রক্ষা পেতে পারে। এ জন্য যা করা দরকার, দ্রæত করতে হবে। প্রতি বছর হাওর এলাকায় এ সময় কৃষিশ্রমিকের সঙ্কট দেখা দেয়ায় অন্যান্য এলাকা থেকে শ্রমিক গিয়ে সেখানে কাজ করে। এবার বাস্তব কারণেই সেখানে শ্রমিকরা যেতে পারেনি। ফলে শ্রমিকসঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে। এক খবরে জানা গেছে, কৃষিমন্ত্রী রংপুর থেকে প্রায় ৫ হাজার কৃষিশ্রমিককে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি খরচ ও ব্যবস্থাপনায় ওইসব শ্রমিক পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং এজন্য কৃষিমন্ত্রী ধন্যবাদার্হ। ঠিক এমনি করে চট্টগ্রাম বা অন্যান্য এলাকা থেকে হাওর এলাকায় শ্রমিক পাঠানো দরকার। এরইমধ্যে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ধান কাটার জন্য চট্টগ্রাম থেকে দেড় হাজার শ্রমিক পাঠাচ্ছে পুলিশ। এমন উদ্যোগ আরোও নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, সব এলাকায় বোরোধান একই সময়ে ওঠে না। হাওর ও নিম্ন এলাকার ধান আগে কাটতে হয় প্রধানত বন্যার আশঙ্কায়। তাই সব জায়গায় শ্রমিক চাহিদা একরকম থাকে না। এমতাবস্থায়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক স্থানান্তর মোটেই কঠিন নয়। বিভিন্ন ফসলের মওসুমে শ্রমিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। শ্রমিকসঙ্কটের কারণে প্রতি বছর ফসলের যে ক্ষতি হয় তা মোটেই উপেক্ষা করার মতো নয়। সরকার এ বিষয়ে ভেবে দেখতে পারে এবং নিতে পারে যথোচিত উদ্যোগ ও পদক্ষেপ।
এমুর্হূতে দেশে প্রায় আড়াই কোটি দিনমজুর ও শ্রমিক কর্মহীন রয়েছে। অথচ ধান কাটা নিয়ে কৃষকের চোখে ঘুম নেই। এবার দেশে বোরোধানের সাকুল্য আবাদ যা হয়েছে, তা কাটতে শ্রমিকের প্রয়োজন ৮৪ লাখ। বিআইডিএস’র মতে, ২০১৮ সালে কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৮৪০ জন। এই হিসাবে ১৩ লাখের মতো শ্রমিকের ঘাটতি আছে। অন্যদিকে বিআইডিএস’রই মতে, সব খাতের প্রলম্বিত ছুটি হিসাব করলে বর্তমানে ২ কোটি ৪২ লাখ বেতনভুক মজুর ও শ্রমিক কর্মহীন হয়ে আছে। দেখা যাচ্ছে, অন্তত দেড় কোটি শ্রমিক এখন কর্মযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। সুতরাং, সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক সংগ্রহ ও স্থানান্তরের ব্যবস্থা হলে কোনোভাবেই শ্রমিকসঙ্কট দেখা দেয়ার কথা নয়। বরং এতে এই দুর্দিনে কর্মহীন অনেক মানুষের সাময়িক কর্মসংস্থান হতে পারে। আর একটি বিষয়ও ভেবে দেখা যেতে পারে। ধীরে ধীরে কৃষিশ্রমিক কমে যাচ্ছে। কৃষিখাত থেকে শ্রমিকরা অন্যান্য খাতে চলে যাওয়ায় কারণেই এটা হচ্ছে। একে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েই উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে বিকল্প খুঁজে নিতে হবে। এক্ষেত্রে উপযুক্ত বিকল্প হলো, কৃষিকে সম্পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণ করা। কৃষিযন্ত্রপাতির মধ্যে কম্বাইন্ড হার্বেস্টার বলে এটা যন্ত্র আছে। এর মাধ্যমে একই সঙ্গে ফসল কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তাবন্দি করা যায়। এতে এক হেক্টর জমির ফসল কাটা থেকে বস্তাবন্দি করা পর্যন্ত ১৮ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। পক্ষান্তরে সনাতন পদ্ধতিতে এইসব কাজ করতে শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ৬৩ জন। কাজেই, যতদ্রুত সম্ভব আমাদের কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ করা আবশ্যক, করোনাকারণে কৃষির গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, খাদ্যোৎপাদন ব্যাহত হয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যাভাব, এমনকি দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। আশঙ্কার এই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষির প্রতি আমাদের অবশ্যই বিশেষ নজর দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে উৎপাদন বাড়াতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।