পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চলতি শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম পানি দিয়েছে ভারত। যৌথ নদী কমিশনের হিসাব মতে, ভারত এ বছর বাংলাদেশকে গড় প্রবাহের চেয়ে ৩৫ হাজার ১৪১ কিউসেক পানি কম দিয়েছে। এদিকে উজানে বাঁধ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ না থাকায় বিলীন হবার পথে দেশের এক-তৃতীয়াংশ নদী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজে-কলমে দেশে ৩১০টি নদীর অস্তিত্ব থাকলেও প্রায় ১শ’ নদীতে বছরের বেশিরভাগ সময়েই পানি থাকছে না। ইতোমধ্যেই অনেক নদী বিলীন হয়ে গেছে। আবার অনেক নদ-নদীতে বর্ষা মৌসুমে প্রবাহ কিছুটা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নদী বলেই মনে হয় না। নদীতে চলে নানা ধরনের চাষাবাদ। নদী বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, গত ৪৪ বছরে দেশে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার নদীপথ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে দেশে কোন নদী থাকবে না। এদিকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে ধাবমান নগরায়ন প্রক্রিয়ায় দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে জলাভূমি। বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর। একের পর এক চর আর বালিয়াড়ি হয়ে যাওয়া বড় নদীগুলোর প্রমত্তা অধ্যায়টিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বিপন্ন হয়ে পড়া পানির আধারে সঙ্কুচিত হচ্ছে মাছের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র। সরাসরি হুমকির মুখে পড়ছে জলজ ও প্রাণী এবং জীব-বৈচিত্র্য। এই বাস্তবতায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ইইউ ঘোষিত বিশ্বে মানবিক সহায়তায় সর্ববৃহৎ বরাদ্দের তালিকায় নেই।
দিন দিনই বাংলাদেশের পরিবেশ যে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে তা মূলত ভারতের বৈরী পানি নীতির কারণেই। শুধুমাত্র ফারাক্কার প্রভাবেই পদ্মা নদীর অনেক শাখা নদী বিলীন হয়ে গেছে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মা-যমুনার পানি কমে অনেক স্থানই মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। যমুনার বুকে জেগে উঠেছে চর। এছাড়া তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চলের ছোট বড় ৩৩টি নদী ভরাট হয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে নদীতে পানি না থাকায় ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রতিবছর আশংকাজনক হারে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। শুধু ফারাক্কার প্রভাবেই নয় উজানে বিভিন্ন নদ-নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া, প্রতি বছর বর্ষায় বিলিয়ন বিলিয়ন টন পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণেও ভরাট হয়ে প্রবাহ শূন্য হয়ে পড়ছে নদীগুলো। এটাই সত্যি যে, স্বাধীনতার পর তিন দশকের বেশি সময়ে নদ-নদীগুলো করুণ অবস্থার শিকারে পরিণত হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ফারাক্কা বাঁধের কারণেই নদ-নদীগুলো এত তাড়াতাড়ি মরতে বসেছে। এছাড়াও প্রতি বছর এত পরিমাণ পলি জমে যে তা পানির অভাবে বহন করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ১২৫ কিলোমিটারের তিস্তার অববাহিকায় নদীভিত্তিক জীবনযাত্রা ও জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অন্যদিকে ২০১০ সালেও সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। গত দুই দশকে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ১২৮ মিলিয়ন ডলার যা মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১.২০ ভাগ। এছাড়াও সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রায় ২২৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তা সত্ত্বেও ইইউর মানবিক সহায়তার বিশাল অংকের মধ্যে বাংলাদেশ কেন স্থান করে নিতে পারল না সেটি সত্যিই ভাববার। এর পিছনে প্রকৃত কারণ কি সেটিও খুঁজে দেখা দরকার। ব্যাপারটি যদি এমন হয় যে, যেহেতু বাংলাদেশের হুমকি যতটা প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি ভারত সৃষ্ট সে কারণে ইইউ সাহায্য দেয়নি অথবা সরকারের কোন ভূমিকার কারণে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হোল কিনা তাও দেখার রয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে ইইউর মানবিক সাহায্যের বিশাল বরাদ্দ থেকে বাদ পরা পাশ্চাত্য দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিরও বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে। আস্থাহীনতাও এ ক্ষেত্রে বড় হয়ে থেকে থাকতে পারে।
প্রকৃত সত্যি তো এই যে, কর্তৃপক্ষীয নতজানু নীতির কারণেই বাংলাদেশ ভারতের থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা বঞ্চিত হচ্ছে। ভারতকে তার প্রয়োজনের সবকিছু দিলেও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আন্তরিক না হবার কারণেই পরিস্থিতি এরূপ দাঁড়িয়েছে বা দাঁড়াতে পারছে। এমনকি গত সোমবার বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও পানি পাবার কার্যকর কোন আলোচনা হয়েছে তা বলা যাবে না। কেবলমাত্র ক্ষমতার রাজনীতির বিবেচনায় জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার প্রবণতা কোন বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের কথা বাদ দিলেও বর্তমান বাংলাদেশের আবহাওয়া পর্যালোচনা করলেও বোঝা যায় বাংলাদেশ ভয়াবহ সংকটের দিকেই এগুচ্ছে। একদিকে রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতি দেশকে কার্যত বহির্বিশ্ব থেকে আলাদা করে রেখেছে, অন্যদিকে ভারতের একগুঁয়েমির কারণে অভ্যন্তরীণ পানি সমস্যা দেশের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলেছে। দিন যত এগুচ্ছে পরিস্থিতি ততই গুরুতর আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। সংকট মোকাবিলায় দেশপ্রেমভিত্তিক আন্তরিকতার কোন বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।