Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নীরব ঘাতক হাঁড়ের ক্ষয় রোগ

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যেসব রোগ বেশী দেখা যায় তার মধ্যে হাঁড় ক্ষয় রোগ বা অস্টিওপোরোসিস উল্লেখ যোগ্য। দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত কারণে হাঁড়ের যে রোগ হয় তাই অস্টিওপোরোসিস। মানুষের দেহে মোট ২০৬টি ছোট বড় হাঁড় রয়েছে। এই হাঁড়গুলো সুস্থ না থাকলেই সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমাদের দেহের হাঁড়ের বা অস্থির বা হাড্ডির ভিতরের ঘনত্ব বেড়ে বা কমে যাওয়া একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ১৬ বছর থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মোটামুটি হাঁড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়া কমে যায়। ২০ বছর বয়স হতে হাঁড়ের ঘনত্ব বাড়তে থাকে এবং তা ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত হাঁড়ের ঘনত্ব পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আবার ৪০ বছর বয়সের পর হতে ধীরে ধীরে হাঁড় ক্ষয়ের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। প্রাকৃতিক নিয়ম মতেই বয়স বাড়ার সাথে হাঁড়ের ক্ষয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ সময় শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে হাঁড় গুলোর কার্যকারিতা খুবই কমে যায়। এতে হাঁড় নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। এ অবস্থাকেই বলা হয় অস্টিওপোরোসিস বা হাঁড় ক্ষয় রোগ।
কাদের বেশী হয় ঃ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের এ রোগ হয়। তবে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের এ রোগ বেশী হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তবে আজ কাল কিশোর ও কিশোরী, যুবক, যুবতীরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে যে দেশের জনগণের মধ্যে ১৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সের প্রায় ৪০ শতাংশ নারী হাঁড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ৩০ বছরের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় হাঁড়ের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশী হয়ে থাকে। আবার পুরুষের বয়স ৪০ পর্যন্ত এবং নারীদের যতদিন পর্যন্ত মনোপজ না হয় ততদিন পর্যন্ত হাঁড়ের ঘনত্ব তুলনামূলক ভাবে স্থির থাকে। মহিলাদের যেমন একটি নির্দিষ্ট বয়সে মাসিক চক্র বা ঋতুস্রাব শুরু হয় তেমনি আবার নির্দিষ্ট বয়সে এসে আবার মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায়। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় মনোপজ। এসময় মহিলাদের দেহে এস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন কমে যায় ফলে নারীদের হাঁড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়। তবে পুরুষের হাঁড়ের ক্ষয় একটি ধীরগতিতে হয়। পুরুষের বয়স ৭০ বছর হলে তার দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন কমতে শুরু করে। তারপর হতে হাঁড় ক্ষয় বেশী হয়। অল্প বয়স হতেই যদি সুষম খাবার গ্রহণে সতর্ক ও সচেতন হওয়া যায় তাহলে এরোগ থেকে অনেকটা বেচে থাকা যায়। এজন্য আমাদের প্রতিদিনের খাবারে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গুরুত্ব দিয়ে খেতে হবে। যত সম্ভব রোদে বা সূর্যালোকে প্রতিদিন কিছু সময় থাকতে হবে।
কারণ ঃ মানুষের ১৫ বছর থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হাঁড়ের ঘনত্বের সাথে সাথে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন, ফাইবার পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে তা থেকে হাঁড় গঠন সম্পূর্ণ হয়। এসময় এসব উপাদানের পরিমাণ কম থাকলে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অল্প বয়স হতে হাঁড়ের ঘনত্বের সাথে পরিমাণ মতো ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
কারা ঝুঁকিপূর্ণ ঃ * যারা নিয়মিত ব্যয়াম করেন না। * মাসিক স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া নারীরা। * উচ্চতা অনুসারে যাদের দেহের ওজন কম। * যারা নিয়মিত পরিমাণ মতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার কম খান বা সেবন করেন না। * যাদের পরিবারে হাঁড় ক্ষয় রোগ আছে। * যারা ধূমপান ও মদপান করেন। * নারীদের ইস্ট্রোজেন ও পুরুষের টেস্ট্রোস্টেরণ হরমোনের মাত্রা কমে গেলে। * থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েডের হরমোনের মাত্রা বেশী হলে। * ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগে আক্রান্ত। * যে রোগে খাবরের শোষণ ব্যাহত হয়। * কিছু ঔষধ হাঁড় ক্ষয় রোগ বাড়িয়ে দেয়, যেমন- খিচুনি রোগের ঔষধ, স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার ঔষধ, পুরুষের প্রজনন অঙ্গের প্রস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসার ঔষধ।
প্রতিরোধ ঃ হাড় ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক। যারা ধীরে ধীরে দেহকে অসচল করে ফেলে। প্রত্যাহিক জীবনে চলাফেরা, উঠা-বসা, হাঁটা সম্ভব না হয় না। সহজে নড়াচড়া করা যায় না। বসা থাকলে উঠা যায় না আর হঠাৎ করে বসা যায় না। সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করে চললে তা প্রতিরোধ করা যায়। অল্প বয়স থেকে এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে খাবার দাবার গ্রহণ করা উচিত আসলে যৌবন কালের মধ্যে হাঁড় শক্তিশালী ও হাঁড়ের ঘনত্ব পর্যাপ্ত পরিমাণে গঠন হয়ে যায়। তাই সময়েই হাঁড় গঠন যুক্ত খাবার অর্থাৎ ক্যালসিয়াম, ভিটামনি ডি ও সালফার যুক্ত খাবার শাকসবজি থেতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতিদিন ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করছি কি না। কম হলে তা খেয়াল করে সেবন করতে হবে। তবে বয়স অনুসারে আমাদের ক্যালসিয়াম গ্রহণের তারতম্য রয়েছে তা জানতে হবে। ১ থেকে ১০ বছর বয়সীদের প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম, ১১ থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত যুবক যুবতীদরে ১২০০-১৫০০ মিলিগ্রাম। ২৫ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত পুরুষ মহিলাদের ১০০০ মিলিগ্রাম। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলাদের ৫১-৬৪ বছর পর্যন্ত ১০০০-১৫০০ মিলিগ্রাম, ৬৫ বছরের কম পুরুষের ৮০০ মিলিগ্রাম, ৬৫ বছরে অধিক বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের ১৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।
তাছাড়া নিম্নলিখিত ব্যবস্থা মেনে চললে আরামদায়ক জীবন যাপন করা যায় ও শরীর সুস্থ থাকে। * ধূমপান, সাদাপাতা, জর্দ্দা, গুল খাওয়া অবশ্যই বাদ দিতে হবে। * মদ বা অ্যালকোহল খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। * প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করতে হবে। * প্রতিদিন কিছু সময় শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে এবং নিয়মিত হাটতে হবে। * প্রতিদিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ভিটামিন বি, সি, কে ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যারা এ রোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই সতকর্তার সাথে চলা ফেরা করতে হবে। যাতে কোন সময় পড়ে গিয়ে দেহের হাঁড় ভেঙ্গে না যায়। রাতের বেলায় ঘরে মৃদু আলোর বাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে হবে। যাদের ঘরের মেঝে পিচ্ছিল সেগুলো কার্পেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। * ডায়াবেটিসন, কিডনি, লিভার রোগ নিয়ন্ত্রণ রাখুন। * দেহের উচ্চতা অনুসারে ওজন ঠিক রাখুন।
সতর্কতা ঃ যারা এরোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ মতে চলাফেরা এবং ঔষধ সেবন করবেন। আর নিজের ইচ্ছা মাফিক কোন ঔষধ খাবেন না। শরীরে কোনো সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাঁড়-ক্ষয়-রোগ
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->